Dr. Anirban Dalui on Covid 4th Wave Exclusive : চতুর্থ ঢেউয়ের দোরগোড়ায় বঙ্গ, XE ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে কী পদক্ষেপ করবেন? জানালেন বিশেষজ্ঞ

Dr. Anirban Dalui Exclusive : দেশে ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ। এই আবহে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুইয়ের সঙ্গে কথা বলল টিভি৯ বাংলা। XE ভ্যারিয়েন্টকে আটকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা জানালেন তিনি।

Dr. Anirban Dalui on Covid 4th Wave Exclusive : চতুর্থ ঢেউয়ের দোরগোড়ায় বঙ্গ, XE ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে কী পদক্ষেপ করবেন? জানালেন বিশেষজ্ঞ
গ্রাফিক্স : অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Apr 28, 2022 | 1:56 AM

কলকাতা : ওমিক্রনের চোখ রাঙানি পেরিয়ে সবে ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিল গোটা বিশ্ব। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ওমিক্রনের ত্রাসে ফের একবার থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ। পূর্ববর্তী করোনা ঢেউয়ের মতো ফের একবার লকডাউন, ঘরবন্দি, করোনাবিধিকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা শুরু হয়। গত দুই বছরে এই অজানা শব্দগুলো ততদিনে খুব পরিচিত ও রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে সকল জনসাধারণের কাছেই। ওমিক্রনের প্রকোপ কমতে না কমতেই সাধারণ মানুষ আবার নিজেদের শিকল ভেঙে বেরিয়ে পড়েছে। মুখে নেই মাস্ক, নেই ভিড় এড়িয়ে চলারও তাগিদ। কোভিডের নিম্নমুখী গ্রাফে কোনও কোনও রাজ্যে করোনাবিধিও শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরার বিষয়টিও ততক্ষণে বাদের খাতায় চলে গিয়েছে। অতঃপর দরজায় কড়া নাড়ছে কোভিডের আরেকটি ঢেউ। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু রাজ্য়ে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। রাজধানীতে রোজ একটু একটু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সুতরাং এই আবহে কোভিডের নয়া ঢেউয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছেন না চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। এদিকে একটি গবেষণায় উঠে এসেছিল জুন মাসের মাঝামাঝি কোভিডের চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করোনার বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে আমাদের সাহায্য় করতে পারে বলে পরামর্শ চিকিৎসক মহলের। এই আবহে টিভি৯ বাংলা যোগাযোগ করল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ দলুইয়ের সঙ্গে।

ভারতে চতুর্থ ঢেউ কি আছড়ে পড়বে?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই বলছেন, “চতুর্থ ঢেউ আসবে বলেই আমরা অনেকদিন আগে অনুমান করেছিলাম। কোভিড একেবারে চলে যাবে, সেটা হতে পারে না।

এই ঢেউ কতটা ভয়ানক হবে?

এটা আমরা বলতে পারছিলাম না। করোনা ভাইরাসের ধর্ম অনুযায়ী এটি মিউটেশন করতেই থাকে। সুতরাং, নতুন যে ভ্যারিয়েন্টের জন্য এই সংক্রমণ হবে সেই ভ্য়ারিয়েন্টের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করবে যে এই ঢেউ কতটা সংক্রামক, প্রাণঘাতী বা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

ওমিক্রনে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে। ফলে তাঁদের শরীরে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি করোনা টিকাকরণ ও বুস্টার ডোজ়ও দেওয়া হচ্ছে। এর থেকে মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে নতুন ঢেউ যে খুব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তার সম্ভাবনা কিন্তু কম।

দেশে ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ। এক্ষেত্রে নতুন স্ট্রেনের কোনও প্রভাব রয়েছে কী?

আমরা আগে দেখেছি ভারতের মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কেরল- এসব জায়গায় যদি সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ে তা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাই ভারতের যেসব জায়গায় সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেখতে হবে নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংখ্যা কতটা। এছা়ড়াও লাগাতার মনিটরিং ও কোভিড পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে।

চতু্র্থ ঢেউ আসলে সেক্ষেত্রে কি মৃত্যু হার কম থাকবে?

এই ঢেউতে খুব বেশি মানুষ সাংঘাতিভাবে আক্রান্ত হবেন বিষয়টি সেরকম নয়। কেউ কেউ করোনা টিকা নিচ্ছেন না বা কারোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। এরকম পপুলেশনের ক্ষেত্রে কখন শারীরিক অবস্থা খারাপ হবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়।

করোনাবিধি পুনরায় ফিরে আসবে?

অবশ্য়ই। যেহেতু দেশ জুড়ে পুনরায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে করোনাবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। ভিড়ের মধ্যে গেলে তো অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। ভিড় ছাড়াও এমনিও রাস্তায় বের হলে মাস্ক পরা ভালো অভ্যাস। যেহেতু মানুষের মধ্যে করোনাবিধি নিয়ে অবহেলা দেখা যাচ্ছে তাই পুনরায় প্রশাসনের উচিত নির্দেশিকা জারি করে করোনবিধি পুনরায় কার্যকর করা। মাস্ক পরার ক্ষেত্রে জোর দিয়ে নির্দেশিকা জারি করা উচিত প্রশাসনের। এর সঙ্গে ভিড়ও এড়িয়ে চলতে হবে।

XE ভ্যারিয়েন্টের হাত ধরেই কি চতুর্থ ঢেউ আসবে?

এরকম কোনও নিশ্চয়তা নেই। শুধু XE ভ্যারিন্টই নয়। আরও নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্টও আসতে পারে। করোনা ভাইরাস খুব ঘন ঘন মিউটেশন করে। সুতরাং অন্য় কোনও ভ্য়ারিয়েন্টেও সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। ওমিক্রনের মতো কোনও ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ হলে সেক্ষেত্রে সংক্রমণ বেশি হবে। আবার ডেলটার মতো কোনও ভ্যারিয়েন্ট বেশি প্রাণঘাতী হবে।

যে ভ্যারিয়েন্টেই চতুর্থ ঢেউ আসুক আমাদের তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা তিনটি ঢেউ থেকে শিখে গিয়েছি কী করণীয় ও কী করতে হবে না। এখন যদি প্রস্তুতিতে কোনও ঘাটতি থেকে যায় এটা বোধহয় ঠিক হবে না।

XE ভ্য়ারিয়েন্ট কতটা সংক্রামক?

XE ভ্যারিয়েন্ট বেশ খানিকটা সংক্রামক। অন্ততপক্ষে ওমিক্রনের থেকে কয়েক গুণ বেশি সংক্রামক এই ভ্য়ারিয়েন্টটি। দিল্লি ও হরিয়ানাতে এই ভ্য়ারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে যে এই ভ্যারিয়েন্ট আসবে না এরকম কোনও সম্ভাবনা নেই। এই ভ্য়ারিয়েন্ট চতুর্থ ঢেউ নিয়ে আসতেই পারে। তবে আমাদের এই ধারণা নিয়ে থাকলে হবে না যে শুধুমাত্র XE ভ্য়ারিয়েন্টই চতুর্থ ঢেউয়ের কারণ হতে পারে। মিউটেশন হয়ে আরও নতুন কোনও ভ্য়ারিয়েন্ট আসতেই পারে। যত বেশি মানুষ আক্রান্ত হবেন মিউটেশনের হার তত বেশি হবে। যত কম আক্রান্ত হবে তত মিউটেশনের হার কম হবে।

করোনা টিকার বুস্টার ডোজ় কতটা কার্যকরী?

নতুন ভ্যারিয়েন্টকে আটকাতে দুটোই অস্ত্র করোনা টিকা ও মাস্ক। বাজারে উপলব্ধ করোনার বুস্টার ডোজ় সমস্ত ভ্য়ারিয়েন্টের ক্ষেত্রেই কার্যকর। অন্ততপক্ষে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়। টিকা নেওয়া থাকলে সংক্রমণের পর ভয়াবহতা কিছুটা কম থাকে। আগে হয়ত টিকা না নিলে ১০০ জনের মৃত্যু হত। টিকা নেওয়ার পর ১০০ জনের মধ্যে হয়ত ১ জনের মৃত্যু হচ্ছে। সুতরাং, করোনা টিকা নেওয়া জরুরি কোভিডের ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে?

করোনা টিকা নিতে হবে সেক্ষেত্রে। করোনা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের এখনও যে জড়তা রয়েছে তা ঘোচানোর জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে টিকাকরণের বিষয়ে প্রচার করতে হবে। শুধু সরকার নয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সংবাদ মাধ্যমকেও বেশি করে প্রচার করতে হবে করোনা টিকাকরণের বিষয়ে। ডাক্তারদের আরও বেশি করে বলতে হবে। এছাড়াও আমি মনে করি দেশের যেসব রাজনৈতিক নেতারা রয়েছেন তাঁদেরও এই প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে।

শিশুদের জন্য এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে?

এখনও অবধি কোভিড শিশুদের উপর যে খুব একটা প্রভাব ফেলেছে তা নয়। সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশির মতোই লক্ষণ দেখা গিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কয়েকটি ফ্যাক্টর রয়েছে,  রোগটা নতুন  এবং এই ভাইরাসের মিউটেশনের বিষয়ে আগাম কিছু জানা যাচ্ছে না বা অনুমান করা খুব অসুবিধাজনক। শিশুদের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার টিকাকরণ হয়নি। সুতরাং এই তিনটি কারণকে একসঙ্গে বাচ্চারাও কিন্তু সংক্রমিত হতে পারে। কারোর যদি ইতিমধ্যেই শরীরে কোনও রোগ থেকে থাকে, পুষ্টি কম থাকে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম হয় তাহলে এই রোগের খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এরকম উদাহরণ কিন্তু রয়েছে। তাই শিশুদের জন্য খুব শীঘ্রই টিকাকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদেরও মধ্যেও মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়াতে হবে। এবং স্কুলে স্কুলে সেই বিষয়ে সচেতনতা প্রচার করতে হবে। বাচ্চারা মাস্ক পরলে শুধু যে করোনা থেকেই রেহাই পাবে তা নয়। সাধারণ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্মল পক্স, চিকেন পক্সের মতো রোগের সংক্রমণও আটকাবে। এক্ষেত্রে বলে দেওয়া দরকার, ৫ বছরের উপরে সমস্ত বাচ্চাদেরই মাস্ক পরতে হবে। ২ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদেরও মাস্ক পরানোর অভ্যাস করানো ভাল। 

চতুর্থ ঢেউয়ের আগে চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনও প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন? 

যখনই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে শুরু করবে আমাদের তখন সেই পুরনো সিস্টেমে ফিরে যেতে হবে। কোভিড বেডের সংখ্যা বাড়ানো, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা-এইসব বন্দোবস্ত করতে হবে। কোভিড টিম প্রস্তুত রাখতে হবে। এদিকে মনিটরিং চালিয়ে যেতে হবে। মনিটরিংয়ের ভিত্তিতে যে রিপোর্ট আসবে তার ভিত্তিতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর আগে যেহেতু তিনটি ঢেউ কাটিয়ে উঠেছে আমাদের দেশ তথা রাজ্য সুতরাং সেরকম পরিস্থিতি বুঝে সঠিক পদক্ষেপ করতে  সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বেশি সময় লাগার কথা নয় বলে বিশ্বাস। 

উল্লেখ্য, সর্বোপরি করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর ব্রহ্মাস্ত্র হল টিকা, মাস্ক ও করোনাবিধি মেনে চলা। জনস্বাস্থ্য় বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ দলুই সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা এই তিনটি বিষয়ের উপরই জোর দিয়েছেন। তাই অযথা ভয় না পেয়ে সমস্ত করোনাবিধি মেনে চললেই চতুর্থ ঢেউয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখা যাবে বলে চিকিৎসকদের পরামর্শ।

আরও পড়ুন : Online Classes for Universities: তীব্র তাপপ্রবাহের জের, এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও অনলাইন ক্লাসের পরামর্শ রাজ্যের