Fact Check: ৫০ বছরে এই প্রথম এপ্রিলে একটানা এত গরম কলকাতায়? সত্যিই কি তাই?

Weather Update: সাত বছরে এপ্রিল তো দূর, মে মাসেও কলকাতা তাপপ্রবাহের কবলে পড়েনি। ভ্যাপসা গরম নাকাল করেছে, কিন্তু পারদ চল্লিশ ছোঁয়নি। সেই 'রীতি'তে ছেদ পড়ে গত বছরই। ১৪ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে ৫ দিন কলকাতার তাপমাত্রা চল্লিশের উপরে ছিল।

Fact Check: ৫০ বছরে এই প্রথম এপ্রিলে একটানা এত গরম কলকাতায়? সত্যিই কি তাই?
দাবদাহে পুড়ছে বাংলা।Image Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 22, 2024 | 7:47 AM

কলকাতা: অসহ্য গরম, নিঃসন্দেহে। দেশের উষ্ণতম এলাকার তালিকায় দুই বা তিনে বাংলার বাঁকুড়া, পানাগড়, এ কথাও ঠিক। শুক্রবার থেকে রবিবার, টানা ৩ দিন চল্লিশের ঘরে কলকাতা, তেতো হলেও বাস্তব কথা! কিন্তু এপ্রিলে ৫০ বছরে এই প্রথম একটানা এত গরম কলকাতায়, এই তথ্য কতটা সত্যি? রবিবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক তরুণ আবহবিদের দেওয়া তথ্য একেবারে ‘ভাইরাল’! প্রবল গরমে গরমের রেকর্ড মুখে মুখে ছড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হাওয়া অফিসের আর্কাইভ কি সে কথা বলছে? বলছে না। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্যই বলছে, ৫০ বছর অনেক দূরের ব্যাপার, চলতি শতাব্দীতেই এপ্রিলে একাধিক বার এমন টানা তাপদাহের সাক্ষী হয়েছে কলকাতা।

পয়লা উদাহরণ ২০০৯ সালের। সে বছরও এবারের মতো প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো দশা চলছিল। যে বছর বর্ষায় রেকর্ডভাঙা ২৯ শতাংশ  ঘাটতির মুখোমুখি হয় দেশ। তার আগে গরমে একের পর এক রেকর্ড! ১৮ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ৮ দিন কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে ছিল। হ্যাঁ, ১০ দিনের মধ্যে ৮ দিন। এর মধ্যে ১৯ ও ২৭ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রিও পেরিয়ে যায় আলিপুরের পারদ। পরের বছর ২০১০ সালেও এপ্রিলে চল্লিশ ছুঁয়েছিল কলকাতার তাপমাত্রা, যদিও সে বার আয়ু মাত্র দু’দিনের।

এর পর ৪ বছরের বিরতি। আবার ২০১৪ সালে ২২ থেকে ২৬ এপ্রিল, টানা ৫ দিন চল্লিশ ডিগ্রির ঘরে পৌঁছয় কলকাতার তাপমাত্রা। শেষ ৩ দিন একটানা ৪১ ডিগ্রির গরমও সইতে হয় মহানগরকে। ২০১৬ সালে ২০০৯-এর পুনরাবৃত্তি। এপ্রিলে ৮ দিন আলিপুরের পারদ চল্লিশ পার করে যায়। এর মধ্যে ৮ থেকে ১৬ এপ্রিল, ৯ দিনের মধ্যে ৬ দিনই ৪০ ডিগ্রির উপরে ছিল তাপমাত্রা। একদিন পারদ পৌঁছয় ৪১.৩ ডিগ্রিতে। সেটাই চলতি শতাব্দীতে এখনও পর্যন্ত এপ্রিলে কলকাতার উষ্ণতম দিন।

এর পর সাত বছরে এপ্রিল তো দূর, মে মাসেও কলকাতা তাপপ্রবাহের কবলে পড়েনি। ভ্যাপসা গরম নাকাল করেছে, কিন্তু পারদ চল্লিশ ছোঁয়নি। সেই ‘রীতি’তে ছেদ পড়ে গত বছরই। ১৪ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে ৫ দিন কলকাতার তাপমাত্রা চল্লিশের উপরে ছিল। বলা বাহুল্য, ৪৪ ডিগ্রির গরমে, তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়েছিল বাঁকুড়া, পানাগড়। পশ্চিমাঞ্চল তো বটেই, সেদ্ধ হয় গোটা দক্ষিণবঙ্গ। ৪১.৭ ডিগ্রিতে পৌঁছয় দমদমের তাপমাত্রাও।

এ বারও একই ধাঁচে ঊর্ধ্বগামী দৌড় পারদের। কিন্তু এখনও পশ্চিমাঞ্চলের রেকর্ড অটুট। চলতি শতাব্দীরই দুটো উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল ৪৬ ডিগ্রি পার করেছিল বাঁকুড়ার পারদ। ওই একই দিনে ৪৫ ডিগ্রি পার করে মেদিনীপুরের তাপমাত্রা।

তবে রেকর্ড যে ভাঙবে না, এমন নয়। বরং সমূহ সম্ভাবনা সামনে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, জোড়া ঘূর্ণাবর্ত ও উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। সোমবার-মঙ্গলবার ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমতে পারে। কিন্তু বৃষ্টির সম্ভাবনা মাত্র ৩ জেলায়। পূর্ব, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে। সেই হালকা বৃষ্টিতে গরম কাবু হবে, এমন আশা নেই। বরং, বুধবার থেকে আবার ১-২ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়বে। বুধবার, বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই, উত্তরের ৩ জেলা, মালদহ, দুই দিনাজপুরেও তাপপ্রবাহের আশঙ্কা। আরও একাধিক দিন তাপপ্রবাহের কবলে পড়তে পারে কলকাতা।

মৌসম ভবনের পূর্বাভাস ঠারেঠোরে বুঝিয়েই দিচ্ছে, এপ্রিলে অন্তত নিস্তার পাওয়ার আশা নেই। বরং, শুধু পড়শি ঝাড়খণ্ড, বিহার বা ওড়িশা নয়, সপ্তাহের শেষে উত্তর ভারত থেকেও গরম হওয়ার আমদানি হবে। সুতরাং, সত্যিই রেকর্ড ভাঙার সমূহ সম্ভাবনা। হ্যাঁ, এখনও ভাঙেনি, তবে ভাঙতে কত ক্ষণ?