First Ice in Kolkata: সাহেবদের ‘আবদারে’ কলকাতায় প্রথম ‘বরফ’!

Kolkata: ঠাণ্ডা ঘরে 'মেন্টাল রিফ্রেশিং'য়ের নামে এক পাত্তর মদের সঙ্গে দেদার আইস কিউব ফেলে চুমুক দেন ৩০ থেকে ৭৫ বছর বয়সীরা। বর্তমানে আইস কিউবকে নানা ধাঁচে ফেলে চমক দিচ্ছেন বারটেন্ডাররা। দেখতে ভারি মজার। স্ফীত, গোলাকার, চৌকো আকারের বরফের টুকরো এখন স্বচ্ছ কাঁচের দেওয়ালে লেগে থাকে জাপ্টাজাপ্টি করে।

First Ice in Kolkata: সাহেবদের 'আবদারে' কলকাতায় প্রথম 'বরফ'!
ছবিটি প্রতীকী
Follow Us:
| Updated on: Jul 09, 2024 | 10:01 PM

গরমে গলা শুকিয়ে কাঠ। রাস্তার একটি বিড়ি-সিগারেটের দোকান থেকে একটি ঠাণ্ডা পানীয় দিয়ে গলা না ভেজালেই নয়। সঙ্গে থাকা জলের বোতলের জলও শেষ। ভ্যাপসা গরম, ভেজা আবহাওয়ায় শরীরটা যেন পাকিয়ে এল তুষারের। পেশায় সেলসম্যান। টার্গেটে পৌঁছাতে মাসের শেষে নিজের কাজ সারতে হবে এই সপ্তাহেই। তাই হেঁটে- বাসে চড়ে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাছে নিজের উপস্থিতি জাহির করতে নাজেহাল অবস্থা তাঁর। দোকানের শীর্ণকায় একট নিরিহ গোচের দোকানদারকে শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘কোনও ঠাণ্ডা কিছু আছে? সাদা বা কালো, যে কোনও একটি দাও। অসম্ভব গরম।’ ঘোলাটে, ঘুম ঘুম চোখে দোকানদার একটু ইতস্তত সুরে বলল, ‘ঠাণ্ডা নেই কিছু। বরফ নেই। জল আছে। নরম্যাল। চলবে?’ দোকানের একপ্রান্তে থাকা বেঞ্চে সবে পিঠের ব্যাগটি রেখে একটু স্বস্তির শ্বাস ফেলতে গিয়েছিল। নির্জীব দোকানদারের উত্তরে মনটা ভেঙে গেল যেন।’ ঠাণ্ডা নেই মানে? এই গরমে ঠাণ্ডা জল বা কোনও কোল্ড ড্রিঙ্কস নেই!দ্যাখো না কিছু পাও কিনা। অল্প ঠাণ্ডা হলেও চলবে’। ঝিমিয়ে থাকা চোখ-মুখে ভাবলেশহীনভাবে দোকানদার উত্তর দিল, ‘না গো বাবু, কোনও ঠাণ্ডা নেই। গলে সব হয়েছে জল। সকালের দুধটাও আমার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ‘

জ্যৈষ্ঠের শেষে গরমটা এবার আরও তেতে উঠেছে। তীব্র তাপে ও আর্দ্রতায়, রাস্তায় বের হওয়ায় প্রতিটি মানুষ যেন হাঁকপাক করে উঠছে। ঠাণ্ডা সরবত থেকে শুরু করে ঠাণ্ডা পানীয়, এই সবেই প্রাণ খুঁজছে তাপে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া পথচলা মানুষ। ‘এই নিদারুণ সময়ে বরফ বা ফ্রিজ কোনওটাই নেই এই দোকানে। রাগে-কষ্টে কপালে ভাঁজ পড়ল তুষারের। এখনও কত কাজ বাকি। অবেলায় ঠাণ্ডা ছাড়া আর কিছু খেতেও ভাল লাগছে না। শরীরটাও দিচ্ছে না যেন। বরফের মতো ঠাণ্ডা কিছু পাই কোথায়?’ বিড়বিড় করে বলেই চলল সে।

মনে প্রশ্ন ঘুরপাক করছে। মনে আসতেই প্রশ্ন করল, বরফ কেনা হয় কোথা থেকে? বরফ তো হাতের কাছেই পাবেন। তুষারের কথা শুনে গলগল করে দুঃখের কথা বলতে শুরু করলেন মধ্যবয়স্ক দোকানের মালিক। ‘অনেকদিন ধরেই বরফ আসছে না দোকানে। বরফের দাম বেড়ে গিয়েছে একলাফে। তাই বরফ কিনতে হলে অনেক আগে থেকে বলে রাখতে হচ্ছে। এপ্রিলের গরমে যখন হিটস্ট্রোক হওয়ার উপক্রম, তখন থেকেই বরফের আকাল। এমনিতেই বরফের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবার। বড় বড় দোকানে বরফ পোঁছালেও আমাদের মতো ছোট্ট ব্যবসায়ীদের কাছে আসছে না। একলাফে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরে এক কেজি বরফের দাম ছিল ৪০টাকা। এবছর এক কেজি বরফ কিনেছি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দিয়ে। তাই আর বরফ কিনিনি। যা আছে, তাই বিক্রি হলেই বাঁচি। বরফের অর্ডার দিলেও ঠিক সময়ে আসে না আর এখন। ‘

বরফের একটি বড় টুকরো কিনে তা ভেঙে ছোট ছোট করে টুকরো করে একটি সাদা রঙের থার্মোকলের বক্সের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা রাখা যায়, তার চেষ্টা করেন এই ছোট ব্যবসায়ীরা। মাছের বাজারেও বরফের চাহিদা প্রচুর। রাস্তার ধারের গুমটিতে ফ্রিজের বিকল্প হিসেবে থার্মোকলের মোটা বাক্সের মধ্যে বরফের টুকরো রেখে দেন দোকানের মালিকরা। চাঁই চাঁই বরফ আসে কলকাতার বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজ থেকে। কলকাতার গরমে বরফ বাইরের আবহাওয়ার মধ্যে রাখাটাও লোকসানের। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের জন্য বরফ ঠাণ্ডা পানীয়ের আবদার মেটানো সত্যিই বিড়ম্বনার।

বরফ ‘আবদার’

‘আবদার’। এই শব্দটি বাঙালির সম্পর্ক ছোটবেলা থেকে। মামার বাড়ির আবদার, বাবার কাছে আবদার, মায়ের কাছে আবদার, বয়ফ্রেন্ডের কাছে আবদার। এমন অনেক আবদার নিত্যদিন চলতেই থাকে। গরমে ঝলসে যাওয়া দেশে বিভিন্ন ভাষার শব্দের আদানপ্রদান রয়েছে প্রচুর। বাংলার অভিধানে সেই সব শব্দের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তার মধ্যে ‘আবদার’ হল তেমনিই একটি শব্দ। অনেকেই হয়তো জানেন না, আবদারের সঙ্গ জড়িয়ে রয়েছে হিমশীতল বরফের পুরোদস্তর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ইতিহাস বলছে, ‘আবদার’শব্দটি এসেছে মোঘলদের কাছ থেকে। গ্রীষ্মকালীন দেশ ভারত। সেখানে শীতল জল পান করে মন-প্রাণ ঠাণ্ডা করতে নানা কৌশল খুঁজে বেরিয়েছেন বহু নবাব-মহারাজারা। মোঘল সাম্রাজ্যের সময় দিল্লি থেকে আগ্রা রাজধানী সরে যাওয়ার পর সবচেয়ে বিপাকে পড়েন সম্রাট ও তার অনুগামীরা। মোঘলদের আগে ভারতে সুরা বা মদ পান করার সময় বরফ মেশানোর রেওয়াজ ছিল না। রাজা-বাদশাহরাও মদ্য পান করতেন ঘরের তাপমাত্রায়। হিমালয় ঘেঁষা ভারতের বিস্তৃণ এলাকায় বরফ পড়লেও অন্যান্য রাজ্যগুলিতে বরফ পড়ার কোনও কারণ ছিল না। এমনকি প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতেও না।

আজকের দিনে আইসকিউবেরও চল ছিল না তখন। বরফ ঠাণ্ডা জলের জন্য হিমালয় থেকে বরফ আনাতেও পিছপা হননি আকবর। কিন্তু বরফ আনতে আনতে আগ্রায় পৌঁছাত বরফ গলে যাওয়া জল। কৌশল খুঁজতে খুঁজতে আবুল ফজল আইন-ই আকবরীতে পাওয়া যায় এক নতুন তথ্য। ঠাণ্ডা জল তৈরির জন্য আকবর ভারতে প্রথম সল্টপিটার বা সোরার পদ্ধতি ব্যবহার করেন। আর এই সোরার সাহায্যে সাধারণ জল হিমশীতল করার জন্য রাখা হয়েছিল কয়েকজন অভিজ্ঞ কর্মচারী। একটি বড় পাত্রের মধ্যে জল ও তিন থেকে চার টুকরো সল্টপিটার রেখে ছোট ছোট পাত্রের মধ্যে গঙ্গাজল রাখতেন তাঁরা। সারারাত জেগে সেই গঙ্গাজলের পাত্রগুলিকে ধীরে ধীরে নাড়িয়ে হিমশীতল ঠাণ্ডা তৈরি করতেন। এমন অভিজ্ঞ কর্মচারীদের বলা হত ‘আউদার’। প্রসঙ্গত, মোঘল আমলে গঙ্গাজলকে ঠাণ্ডা করে পান করতেন আকবর, ঔরঙ্গজেব-সহ প্রায় সব সম্রাটরা। এমনকি দেশে ইংরেজ শাসনকালেও সেই প্রথা অব্যাহত ছিল। কিন্তু সাদা চামড়ার শৌখিন সাহেবদের কি আর শুধুমাত্র বরফঠাণ্ডা জলে গলা ভেজে?

ব্রিটিশ আমলেও আকবরের আমলে চালু হওয়া ‘আউদার’দের দিয়েই চলত ঠাণ্ডা পানীয় তৈরির কাজ। তবে সেটি পানীয় হিসেবে নয়, সেই ঠাণ্ডা জলে মদের বোতল ডুবিয়ে রাখতেন ফরাসি থেকে ব্রিটিশরা। বিয়ার, ওয়াইন থেকে শুরু করে স্কচ, হুইস্কি, যে কোনও মদ বা অ্যালকোহল ঠাণ্ডা করে মন ভরত না তাঁদের। নিজের দেশের মতো বিলাসবহুল আয়োজনের মধ্যে মদের ফোয়ারায় বরফ থাকবে না, শৌখিন সাহেবদের কাছে বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াল। উনি্শ শতকের দিকে, কলকাতায় প্রতিটি সাহেবদের বাড়িতে থাকত অগণিত ভারতীয় চাকর-বাকর। তাদের মধ্যে আলাদা করে রাখা হত একজন করে দক্ষ ‘আউদার’। এই ‘আউদার’ শব্দটি পরবর্তীকালে বাংলায় ‘আবদারে’ পরিণত হয়ে গেল। কোন ত্যাগে এই পুণ্যলাভ, তা বেশ রহস্যের। তবে যাইহোক এই আউদারদের যাদুতে গলা তো ভিজছে, মন ভরছে কই?

হুগলি-চূচূড়াতে সত্যিই বরফ পড়ত!

সাহেবদের নানাবিধ আবদার মেটাতে ভারতবাসীকে কপাল পোড়াতে হয়েছে বিস্তর। গরমকালে সন্ধ্যের সময় দু-এক পাত্র পেটে না পড়লে মুড ভাল থাকত না বেশিরভাগ সাহেবদের। সেই মুডের খেসারত দিতে হত নেটিভদের। বৈশাখের বিকেলে কালবৈশাখীর আবগারি আবহাওয়ায় হাতে এক গ্লাস মদের সঙ্গে দু-তিনটি বরফের টুকরো থাকবে না, তা কি করে হয়? তবে ভাগ্য উজ্জ্বল করতে বেশি বেগ দিতে হয়নি। ১৮৪৮ সালে জুলাই মাসের কোনও একদিন মুর্শিদাবাদের নবাববাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে চোখে পড়ে বরফের। অভিজাত ব্রিটিশ মহলে পড়ে গেল হৈ হৈ ব্যাপার। বাংলায় শুরু হল বরফ চাষ। চুঁচুড়া থেকে ৪০ কিমি দুরের এক জায়গা (এখনকার হুগলি) চাষ হতে লাগল বরফের। কিন্তু এত জায়গা থাকা সত্ত্বে হুগলিতে কেন?

হুগলির ছবি না হলেও মোঘল আমলের পর ভারতে এইভাবেই করা হত বরফ চাষ।

এর পিছনে রয়েছে ভৌগোলিক কারণ। হুগলিতে সেই সময় প্রচুর গাছপালা ও নোনা মাটি ছিল। আবহাওয়া ছিল ঠাণ্ডা প্রকৃতির। দক্ষিণদিকে ছিল গঙ্গার তীর। এখন সেই জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আবহাওয়ার বিস্তর বদল ঘটলেও, হুগলির আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা। শীতকালে জমাটি ব্যাপার অনুভূতি হয়। এক বিশেষ পদ্ধতিতে সাধারণ জল বরফে পরিণত করে জলপথে অত্যন্ত সাবধানে কলকাতায় আনা হত। বিশেষ পদ্ধতি মানেই ব্যয়বহুল। খড়ের চালায় চুন ছড়িয়ে গুঁড়ি গুড়ি বরফের মতো দেখতে জল পড়ত। সেই জল মাটির পাত্রে বা মাটিতে গর্ত করে বাঁশের মধ্যে জল রেখে দিলে বরফের আকার ধারণ করত। ‘হুগলি স্ল্যাশ’ তৈরির পদ্ধতি বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষও ছিল বটে। অত্যন্ত চড়া দামে হুগলিতে তৈরি করা বরফ বিক্রি হত বটে, কিন্তু সাধারণ মানুষ কখনও চোখে দেখেনি। কলকাতার প্রভাবশালী, অভিজাত ইংরেজ পরিবার সেই দামি বরফ ব্যবহার করতেন সেইসময়। গোটা দক্ষিণবঙ্গের একমাত্র ‘আইস-ফিল্ড’ হিসেবে পরিচিত ছিল হুগলি। বরফ নিয়ে সেই সময় মাতামাতিও ছিল না তেমন। অপরিচ্ছন্ন বরফ নিয়ে উত্‍সাহ ছিল, কিন্তু তা সাধারণের নাগালের বাইরে।

কলকাতায় প্রথম বরফ!

কলকাতায় বরফ! এমনও কি সম্ভব? আজকে যে দোকানপাট, মাছের বাজারে বরফের চাঁই বা টকরো দেখতে পাওয়া যায়, তা কিন্তু মোটেই কলকাতার ধাতে ছিল না। বরফ কি, গায়ে দেয় না মাথায় দেয়, তাই জানত না কলকাতাবাসী। ১৮৩৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাসে, কলকাতা বন্দরে নোঙর ভেড়ে এক মার্কিন কার্গো জাহাজ। সেই জাহাজের নাম ‘টাসকানি’। তাতে বোঝাই ছিল ১৮০ টন আমেরিকান বরফ। জানা যায়, আমেরিকার বস্টন শহর থেকে আসা এই জাহাজ ওয়েনহ্য়াম লেকের জমাট বরফ জাহাজে করে কলকাতায় আনা হয়েছিল। সাহেবদের আবদার মেটাতে গিয়ে কলকাতাবাসী হাঁ করে দেখল দুধসাদা বরফের চাঁই। ইংরেজ সাহেবদের আবদার পূরণের জন্যএগিয়ে এসেছিলেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী যুবক ফ্রেডরিক ট্যুড। প্রথম দফাতেই বাজিমাত হয়েছে, এমনটা ভাবা মোটেই উচিত নয়। বরফ আনার জন্য জাহাজ জোগাড় করা, চারমাস বরফকে সংরক্ষণ করে টিকিয়ে রাখা… সবই ছিল চ্যালেঞ্জিং। সেইসময় না ছিল ফ্রিজ, না ছিল ইলেকট্রনিক্স কোনও সরঞ্জাম। ফলে ১৮০ টন বরফ চারমাস পেরিয়ে নোঙর ফেলার পর দেখা গেল জাহাজে পড়ে রয়েছে মাত্র ৯০ টন বরফ। কিন্তু তাতে কি! চোখের সামনে বরফ দেখতে পাওয়া কি মুখের কথা! বরফ দেখতে স্কুল-কলেজ- অফিস ছুটি পড়ে গেল। শুধু চোখের দেখা দেখতে কলকাতা বন্দর আকার নিল এক বিশাল জমসমুদ্রের। বেলা গড়াতেই জাহাজভর্তি বরফ নিমেষের মধ্যে শেষ হয়ে গেল। এক টাকায় এক পাউন্ড বরফ। সেই ‘সস্তা’র বরফ বিক্রি করতে করতেও অর্ধেক বরফ গেল গলে জল।

ভারতের বম্বে বন্দরে বরফ বোঝাই জাহাজ। ছবি সৌজন্যে দ্য় হেরিটেজ

তারপর থেকে নিয়মিত বরফ বোঝাই জাহাজ আসতে শুরু করল কলকাতায়। ইংরেজ ও সাহেবি কায়দায় থাকতে অভ্যস্ত বাঙালিবাবুদের মধ্যে বরফ মেশানো সুরা পানের রেওয়াজ শুরু হল সেইসময় থেকে। মন-প্রাণ তুষ্ট হল সাহেবদেরও। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটল না। জাহাজে করে বরফ আনার ব্যবস্থা সুন্দর হলেও পরে তা ব্যয়বহুল হতে শুরু করে। তাই ক্ষণস্থায়ী বরফকে স্বল্প দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কলকাতায় তৈরি হল ‘আইস হাউস’। বরফকে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করার জন্য। লর্ড বেন্টিকের উদ্যোগে কলকাতায় তৈরি হল ‘আইস হাউস’। প্রথম দিকে গঙ্গার তীরে স্ট্র্যান্ড রোডে ও ব্যাঙ্কশাল কোর্টের পশ্চিমদিকে চার্চ লেনের দিকে তৈরি হল প্রথম ও দ্বিতীয় ‘বরফ ঘর’। আজকের দিনে যা কোল্ডস্টোরেজ নামে পরিচিত। সেই সময় আইস হাউস থেকে প্যাকেটে করে কলকাত্তার বাবুদের কাছে বিক্রি করা হত বেশ চড়া দামে। ভারতে শুধু কলকাতায় নয়, মাদ্রাজ (চেন্নাই), বম্বে (মুম্বাই)-তেও বরফ আমদানি করতেন ‘আইস কিং’ ফ্রেডরিক। সেখানেও বরফ সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হয় বরফকল।

আইস কিং ফ্রেডরিক ট্যুড। আমেরিকায় জাহাজে সংরক্ষিত করা হচ্ছে বরফের টুকরো। ছবি সৌজন্যে দ্য হেরিটেজ।

দু-তিন বছর পর বরফের দেদার ব্যবসা বেশিদিন টেঁকেনি। আমেরিকান আইস আসা বন্ধ হয়ে যায় ধীরে ধীরে। কলকাতার আইস হাউস ভেঙে ফেলা হয় অজানা কারণে। ধ্বংস করা হয় মুম্বইেয়র বরফ ঘরও। জীর্ণ অবস্থায় এখনও টিঁকে আছে চেন্নাইয়ের প্রথম আইস হাউস। তারপর বিপ্লব ঘটল সারা বিশ্বে। দেশে এল রেফ্রিরেজেটর। কৃত্রিমভাবে তৈরি হল বরফের টুকরো। ঠাণ্ডা ঘরে ‘মেন্টাল রিফ্রেশিং’য়ের নামে এক পাত্তর মদের সঙ্গে দেদার আইস কিউব ফেলে চুমুক দেন ৩০ থেকে ৭৫ বছর বয়সীরা। বর্তমানে আইস কিউবকে নানা ধাঁচে ফেলে চমক দিচ্ছেন বারটেন্ডাররা। দেখতে ভারি মজার। স্ফীত, গোলাকার, চৌকো আকারের বরফের টুকরো এখন স্বচ্ছ কাঁচের দেওয়ালে লেগে থাকে জাপ্টাজাপ্টি করে।