Buddhadeb Bhattacharjee: জ্যোতি থেকে বুদ্ধ, কমিউনিস্ট নেতারা সকলেই প্রায় দেহ দান করেন কেন?

Buddhadeb Bhattacharjee: সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন দেহবানের অঙ্গীকার করে গিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অঙ্গীকার মতো শুক্রবার বিকেলে নীলরতন সরকার হাসপাতালে তাঁর দেহ চিকিৎসা গবেষণার জন্য দান করা হবে। এর আগে, জ্যোতি বসু, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, মানব মুখোপাধ্যায়, শ্যামল চক্রবর্তী, সমর মুখোপাধ্যায়, অনিল বিশ্বাস, বিনয় চৌধুরীর মতো সিপিআইএম-এর অনেক নেতাই দেহ দান করেছেন।

Buddhadeb Bhattacharjee: জ্যোতি থেকে বুদ্ধ, কমিউনিস্ট নেতারা সকলেই প্রায় দেহ দান করেন কেন?
অনিল বিশ্বাস, জ্যোতি বসু,সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা সকলেই দেহদান করেছেন Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Aug 09, 2024 | 12:44 PM

কলকাতা: প্রয়াত বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষিয়ান সিপিআইএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন দেহবানের অঙ্গীকার করে গিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অঙ্গীকার মতো শুক্রবার বিকেলে নীলরতন সরকার হাসপাতালে তাঁর দেহ চিকিৎসা গবেষণার জন্য দান করা হবে। এর আগে, জ্যোতি বসু, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, মানব মুখোপাধ্যায়, শ্যামল চক্রবর্তী, সমর মুখোপাধ্যায়, অনিল বিশ্বাস, বিনয় চৌধুরীর মতো সিপিআইএম-এর অনেক নেতাই দেহ দান করেছেন। একই অঙ্গীকার করা আছে বিমান বসু, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্রদের। কেন কমিউনিস্ট নেতারা প্রায় সকলেই দেহ দান করেন?

আসলে কমিউনিস্ট নেতাদের এই দেহদানের প্রথার পিছনে রয়েছে এক সামাজিক আন্দোলন এবং একটি বেসরকারি সংগঠন। যার নাম গণদর্পণ। আর ছিলেন এই সংগঠনের সঙ্গে ওতোপ্রোত জড়িয়ে থাকা একটি নাম, ব্রজ রায়। ১৯৫৭ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়েছিলেন ব্রজ রায়। তিন দশক পর তিনিই মরণোত্তর দেহদানের আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে কুসংস্কার প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গণদর্পণ সংস্থার। প্রাথমিকভাবে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বেশ কিছু নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। তবে, ব্রজ রায়-সহ এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আরও অনেকেই এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে আরও ছড়িয়ে দিতে চাইছিলেন।

এই পর্যায়ে তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, একজন মানুষের মৃত্যুর পর তার জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্মীয় পরিচয় অনুযায়ীই অন্তিম সংস্কার করা হয়। কিন্তু, যারা সেই ধ্ম পরিচয় মানে না, যারা বস্তুবাদী, তাদেরও ধর্মীয় পরিচয় মেনেই শেষকৃত্য হবে কেন? অসাম্প্রদায়িকদেরও কেন মৃত্যুর পর সাম্প্রদায়িক পরিচয় গ্রহণ করতে হবে? তাছাড়া, কোনও মানুষ বেড়ে ওঠেন সমাজে। মৃত্যুর পর তাঁর দেহটি সমাজের হবে না কেন? পরিবারের হতে তুলে দেওয়া মানেই তো তা ব্যক্তিগত মালিকানাকে স্বীকৃতি দেওয়া। তাহলে কী করা যায়?

তাঁদের সামনে ছিল বিজ্ঞানী জেবিএস হলডেনের উদাহরণ। ১৯৬৪ সালের ১ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ অন্ধ্র প্রদেশে দান করা হয়েছিল। এরপর, ১৯৮৫ সালে ব্রজ রায়-সহ গণদর্পনের পাঁচজন সদস্য চিকিৎসা গবেষণার জন্য মরনোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার করেন। তারপর, ১৯৮৬ সালের ৫ নভেম্বর, জেবিএস হলডেনের ৯৫তম জন্মদিবসে আরও ৩৪ জনের মরনোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এক সামাজিক আন্দোলনের। এই ব্রজ রায়ের সামাজিক আন্দোলনেই পরবর্তীকালে প্রায় সকল কমিউনিস্ট নেতাই দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন। ২০২১-এ ব্রজ রায়ের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাঁর আন্দোলন এখনও চলছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।