AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

El Nino in India: শিয়রে ‘শত্রু’ এল নিনো, কোন ‘বন্ধু’র ভরসায় স্বাভাবিক বর্ষার ইঙ্গিত দেশে?

El nino in India: এক ‘ছোট্ট ছেলে’র আবির্ভাবের ভয়ে কাঁপছে দুনিয়া। কাঁপছে ভারতও। তার পোশাকি নাম এল নিনো।

El Nino in India: শিয়রে ‘শত্রু’ এল নিনো, কোন ‘বন্ধু’র ভরসায় স্বাভাবিক বর্ষার ইঙ্গিত দেশে?
| Edited By: | Updated on: Apr 12, 2023 | 1:55 PM
Share

কলকাতা: চৈত্রেই গরম হাওয়ার হুল। তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি রাজস্থান থেকে বাংলায়। বৃষ্টির লেশমাত্র নেই। সহসা রেহাই দেবে, সে আশাও দেখা যাচ্ছে না। চৈত্র-শেষে বাঙালির ‘শিরে সংক্রান্তি’ আর পয়লা বৈশাখে যে ‘দহনের হালখাতা’ অপেক্ষায়, এ নিয়ে আর কোনও দ্বিমত নেই। তবে এত দুঃসংবাদের মধ্যেও খানিকটা সুখবর শুনিয়েছে মৌসম ভবন। তা হল স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস। জুন থেকে সেপ্টেম্বর, বর্ষার চার মাসে দেশে ৮৭ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। এ বার তার তুলনায় চার শতাংশ কম বৃষ্টি হতে পারে। তবে এই চার শতাংশ কম বৃষ্টিপাতকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবেই গণ্য করেন আবহবিদরা। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গেও কিছু অংশ বাদে বেশিরভাগ জেলায় ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টির পূর্বাভাস। মানে সুসংবাদ। বৃষ্টি ঠিকঠাক হলে তবেই তো চাষির শান্তি!

তবে চাষিভাইদের ঘরে শান্তি পৌঁছে দেওয়ার এ খবর পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতোই। কেন? কারণ, এক ‘ছোট্ট ছেলে’র আবির্ভাবের ভয়ে কাঁপছে দুনিয়া। কাঁপছে ভারতও। তার পোশাকি নাম এল নিনো। স্প্যানিশ শব্দটির অর্থ ‘ছোট্ট ছেলে’। সোজা কথায়, প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তের জলতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে, এল নিনো পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়। এর ঠিক উল্টো পরিস্থিতি লা নিনা। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তের জলতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নেমে যায়। যে পরিস্থিতি গত তিন বছর ধরে ছিল। বলা ভাল, ২০২০ থেকে ২০২২ ‘ট্রিপল ডিপ লা নিনা’ দেখেছে বিশ্ব। চলতি বছরের শুরুতেই লা নিনা পর্ব সাঙ্গ হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের জলতলের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে।

ঘটনা হল, লা নিনা পর্বে ভারতের লাভ। কারণ, জলীয় বাষ্পের জোগান বেশি থাকে। তাই বৃষ্টিও হয় বেশি। এল নিনোয় হয় ঠিক উল্টোটা। প্রশান্ত মহাসাগর থেকে এশিয়ার দিকে জলীয় বাষ্পের জোগান কমে যায়। তার প্রভাব পড়ে বর্ষায়। যেমন, ২০০৯ সালের এল নিনোর ঠেলায় ২২ শতাংশ ঘাটতির সাক্ষী হয়েছিল দেশ। সে বছর গাঙ্গেয় বাংলাতেও ১৪ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালের বর্ষায় দেশে ১২ শতাংশ ঘাটতি, বাংলায় ১৪ শতাংশ ঘাটতি হয়। তারও নেপথ্যে এল নিনো।

বিশ্বের বেশিরভাগ মডেল বলছে, এ বছর হয় মে মাসে নয় জুনে আত্মপ্রকাশ করে ফেলবে এল নিনো। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির মৌসম ভবনও জানিয়ে দিয়েছে, বর্ষার মধ্যেই ‘ছোট্ট ছেলে’র আবির্ভাব হয়ে যাবে।

শিয়রে ‘শত্রু’ এল নিনো! তা সত্ত্বেও স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস? কী ভাবে?

ধাঁধার উত্তর দিয়েছেন আবহবিদরা। মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলছেন, ‘‘বর্ষার ওপর এল নিনোর নেতিবাচক প্রভাবই পড়ে, এমন নয়। গত ৭২ বছরে ১৫টি এল নিনো বছরে অন্তত ৯ বছর বৃষ্টি কম হয়েছে। আবার অন্তত ৬টি বছরে এল নিনো থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিক বা অতিবৃষ্টি হয়েছে দেশে।’’ কী ভাবে? বর্ষার জোড়া ‘বন্ধু’র খোঁজ দিয়েছে হাওয়া অফিস। প্রথম ‘বন্ধু’র নাম বেশ খটমট। পজিটিভ ইন্ডিয়ান ওশন ডাইপোল (আইওডি)। মৃত্যুঞ্জয়বাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘ভারত মহাসাগরের পশ্চিমপ্রান্তের জলতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে, তাকে পজিটিভ ইন্ডিয়ান ওশন ডাইপোল বলে চিহ্নিত করা হয়। এরকম পরিস্থিতি ভারতের বর্ষার জন্য ভালো। জলীয় বাষ্পের জোগান বেড়ে বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাছাড়া, প্রশান্ত মহাসাগরের তুলনায় ভারত মহাসাগর আমাদের দেশের কাছে হওয়ায়, তার প্রভাবও তুলনায় বেশি পড়ার সুযোগ থাকে। এ বছর বর্ষার মধ্যে পজিটিভি আইওডি-র সম্ভাবনাই বেশি।’’

প্রথম ‘বন্ধু’ জলে থাকলে, দ্বিতীয় ‘বন্ধু’ বরফে।

মৌসম ভবনের রিপোর্ট বলছে, এ বছর উত্তর গোলার্ধ, বিশেষ করে ইউরেশিয় অংশের পাহাড়ে বরফের চাদর বিশেষ পুরু নয়। এর অন্যতম কারণ, এ বার ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে তুষারপাত তুলনায় অনেক কম হয়েছে। শর্ত হল, বরফের চাদর পুরু হলে ভারতে বর্ষার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ বার যেহেতু বরফ কম, তাই বৃষ্টি ভাল হওয়ার আশা।

আরও ‘বন্ধু’ হাজির হতে পারে। যেমন, ম্যাডেন জুলিয়ান অসিলেশন। আবহবিদরা বলেন, এ হল মেঘবাহী যাযাবর। পূর্ব থেকে পশ্চিমে পৃথিবী পরিক্রমা করে। প্রশান্ত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগরে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির নেপথ্যে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ হবে এই মেঘবাহী যাযাবর। অনেক সময় উল্টে দিতে পারে ‘এল নিনো’র অঙ্কও। ব্রিটেনের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিজ্ঞানী অক্ষয় দেওরাস বলছেন, ‘২০১৫ সালে এল নিনোর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, ম্যাডেন জুলিয়ান অসিলেশনের প্রভাবে জুনে ১৬ শতাংশ অতিবৃষ্টি হয়।’

তবে এর অন্য দিকও আছে। আর সেটাই চাষিদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অক্ষয়ের কথায়, ‘‘স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস চার মাসের নিরিখে। কোন মাসে কেমন বৃষ্টি হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যেমন, ২০১৫ সালে জুনে অতিবৃষ্টি হলেও, জুলাই, অগস্ট, সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি খুবই কম হয়েছে। ফলে জুনের বৃষ্টিতে উত্‍ফুল্ল হয়ে যারা আগেভাগে ধান রোপণ করে ফেলেছিলেন, পরে তাঁরা বিপদে পড়েন। চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়।’’

এ বারও মৌসম ভবন বলছে, মূলত বর্ষার দ্বিতীয় ভাগে এল নিনোর প্রভাব পড়তে পারে। বাংলার চাষজমির ক্যালেন্ডার বলছে, মোটামুটি ১৫ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত আমন ধান রোপণের কাজ চলে। এই পর্বে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে, বীজতলায় ধান শুকিয়ে যেতে পারে। রোপণ পিছিয়ে গিয়ে মার খেতে পারে ধানের উত্‍পাদনও। ২০২১ সালে বর্ষা-পরবর্তী অতিবৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়। গত মরসুমে আবার কম বৃষ্টি রাজ্যে। তাতেও ধানের ক্ষতি। সবমিলিয়ে চাল মহার্ঘ। দাম যে একবার বেড়েছে আর কমার নাম নেই! সুতরাং, ‘শত্রু’ এল নিনোর প্রভাব ‘বর্ষা-বন্ধু’রা কাটাতে না পারলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে বাধ্য।