শিরাকোলের ‘দশ মিনিটের’ অশান্তিতে উস্কানি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতাই, নবান্নে রিপোর্ট পুলিসের
নবান্নে এমনই রিপোর্ট দিল রাজ্য পুলিস। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর ডায়মন্ডহারবারের পুলিস সুপারের কাছে রিপোর্ট চায় নবান্ন। রাতেই সেই রিপোর্ট জমা পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
কলকাতা: ডায়মন্ডহারবারে (Diamond Harbour) নাড্ডার কনভয়ে হামলার জন্য রাজ্য পুলিস কাঠগড়ায় দাঁড় করাল বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহকেই। পুলিসের দাবি, বৃহস্পতিবার গণ্ডগোলের জন্য ইন্ধন জুগিয়েছিলেন রাকেশই। আর সেই কারণেই সেদিন ডায়মন্ডহারবারের শিরাকোলে ১০-১৫ মিনিট গণ্ডগোল হয়। শিরাকোল ছাড়া অন্যত্র আর অশান্তি হয়নি। নবান্নে এমনই রিপোর্ট দিল রাজ্য পুলিস। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর ডায়মন্ডহারবারের পুলিস সুপারের কাছে রিপোর্ট চায় নবান্ন। রাতেই সেই রিপোর্ট জমা পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, পুলিসের রিপোর্টে বলা হয়েছে শিরাকোল ছাড়া কোথাও কোনও গণ্ডগোল হয়নি। শিরাকোলের ঝামেলার জন্য দায়ী করা হয়েছে নাড্ডার সঙ্গে থাকা রাজ্য় বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহকে। পুলিসের রিপোর্টে স্পষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে, ৫৮ টি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত এবং একটি মামলায় অপরাধী রাকেশ গণ্ডগোল করতে ইন্ধন দিয়েছিলেন। আর সেই কারণেই শিরাকোলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সামান্য গণ্ডগোল হয়।
পুলিলের রিপোর্টে এও দাবি করা হয়েছে, নাড্ডার ডায়মন্ড হারবার যাত্রায় জেলা পুলিশের তরফে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নাড্ডা জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন বলে রাজ্য পুলিসের তরফে তাঁকে বুলেট প্রুফ গাড়িও দেওয়া হয়েছিল। নাড্ডার নিরাপত্তায় রাজ্য পুলিসের তরফে কী ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, নাড্ডার সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কর্মী এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা ছাড়াও, রাজ্য পুলিসের ৪ জন অতিরিক্ত পুলিস সুপার, ৮ জন ডেপুটি পুলিস সুপার, ৮ জন ইনস্পেক্টর, ৩০ জন পুলিস আধিকারিক, ৪০ জন RAF জওয়ান, ১৪৫ জন পুলিস কনস্টেবল এবং ৩৫০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছিল। নাড্ডার যাত্রা পথে তাঁর নিরাপত্তার জন্য।
নবান্নে জমা পড়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, হামলার ঘটনায় পুলিস স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ২ টি মামলা করেছে উস্থি এবং ফলতা থানায়। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ জনকে। রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধেও এফআইআর করা হয়েছে উস্থি থানায়। পুলিসের করা মামলায় শিরাকোলে গণ্ডগোলে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিসের এই রিপোর্টই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা পড়বে বলে জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে। ওই রিপোর্টে পুলিস তাদের বিরুদ্ধে ওঠা নিষ্ক্রিয়তার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবারই ধর্মতলার সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছোটো কোনও ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, পুলিস তদন্ত করে দেখবে।” তবে তদন্তের আগেই রাজ্যের পুলিসমন্ত্রী কীভাবে এমন মন্তব্য করতে পারেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে।
এদিকে, শুক্রবার সকালেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডিজি বীরেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়। শুক্রবার সকালেই বৃহস্পতিবারের সামগ্রিক ঘটনার রিপোর্ট কেন্দ্রকে পাঠান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই তলব বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, ১৪ ডিসেম্বর রাজ্য প্রশ্সনের এই দুই শীর্ষ পদাধিকারীকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নাড্ডার কনভয়ে ‘হামলা’র পরই হঠাৎ রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ
গোটা ঘটনার নিন্দা করে বৃহস্পতিবারই টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্য প্রশাসন ও পুলিসের দিকে আঙুল তুলে তিনি লিখেছেন, মানবাধিকার দিবসে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। রাজ্যপাল আরও লেখেন, “ডায়মন্ড হারবারের ঘটনা সংবিধানের পক্ষে অবমানননাকর। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে আগেও সতর্ক করেছি। তা সত্ত্বেও রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে।” এদিকে, নাড্ডার কনভয়ে হামলার পরই বঙ্গে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, রাজনৈতিকভাবে বৃহস্পতিবারের ঘটনার জবাব দিতেই শাহ-র এই বঙ্গ সফর।