‘সি ইজ় কমপ্লিটলি ফাইন, আগের রাতেও বিয়েবাড়িতে হিন্দি গান বাজে….’ কাবুলে আটকে স্ত্রীর অভিজ্ঞতা পুলিশ কর্তার মুখে

Kolkata: রাতারাতি কীভাবে কাবুলের পরিস্থিতিটা বদলে গেল, সেকথাও তুলে ধরলেন সুব্রত।

'সি ইজ় কমপ্লিটলি ফাইন, আগের রাতেও বিয়েবাড়িতে হিন্দি গান বাজে....' কাবুলে আটকে স্ত্রীর অভিজ্ঞতা পুলিশ কর্তার মুখে
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 18, 2021 | 12:04 PM

কলকাতা: শেষ কথা হয়েছিল গত পরশু রাতে! অর্থাত্ সোমবার রাতে। কথা হতে হতেই হঠ্ করে অফলাইন হয়ে যান স্ত্রী। তারপরও অনেক রাত পর্যন্ত অনলাইন হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্রেনার সুব্রত দত্ত। কিন্তু স্ত্রী আর অনলাইন হননি! কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তিনি! কিন্তু নাগেরবাজারের বাড়িতে বসে আফগানিস্তানে বোনের বাড়িতে গিয়ে আটকে পড়া স্ত্রীর অপেক্ষায় এই মুহূর্তে সেই দুঁদে পুলিশকর্তারও এখন এক একটা দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়।

নাগেরবাজারের বাসিন্দা সুব্রত দত্ত। তিনি কর্মসূত্রে আহমেদাবাদে থাকেন। ২০১৫ সালে কাবুলের মেয়ে ‘হাসো’কে বিয়ে করেন তিনি। হাসি জন্মসূত্রে আফগানিস্তানের বাসিন্দা। বিয়ের পর কলকাতায় থাকা শুরু তাঁরা। বিয়ের পর এই প্রথম গত জুনে সুব্রত দত্তের স্ত্রী গিয়েছিলেন নিজের বোনের বাড়িতে। আর তারপর থেকে ফিরতে পারেননি। নাগেরবাজারের বাড়িতে প্রতিদিন স্ত্রীয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। কাবুলিয়ালার দেশে এখন কেমন আছেন স্ত্রী? TV9 বাংলাকে নিজের দুঃসহ দিন যাপনের অভিজ্ঞতা জানালেন সুব্রত দত্ত।

তিনি বলেন, “পরশু সন্ধ্যায় লাস্ট কথা হয়। তারপরও আমি অনেকগুলো মেসেজ করে রাখি। ফিরে আসবার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও ওঁ অনলাইন হয়নি।” তিনি বলেন, “শুরুর দিকে যতটা পরিস্থিতি খারাপ ছিল, এখন অনেকটা নর্মাল। আমি ওখানকার বন্ধুদের থেকে খোঁজ পেয়েছি। যখন না তালিবানরা পুরোপুরি ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিচ্ছে, মানে মাঝের আরও ২-৩ মাস পরিস্থিতি ওতটাও খারাপ হবে না। অন্তত ওখানকার আমার বন্ধুরা তাই মনে করছে।”

সুস্মিতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার মন বলছে সি ইজ় কমপ্লিটলি ফাইন। ও বাড়ি থেকে চার-পাঁচ দিন টানা না বেরিয়ে থাকতে পারে। ওখানে বোনের বাড়িতে গিয়েছে। আমার মনে হয় পরিবারকে একা ফেলে ও চলে আসবে না।”

রাতারাতি কীভাবে কাবুলের পরিস্থিতিটা বদলে গেল, সেকথাও তুলে ধরলেন সুব্রত। তিনি বললেন, “আমার একটা দাদার সঙ্গেই কথা হচ্ছিল। তাঁর এক বন্ধু কাবুলে রিপোর্ট করতে গিয়েছিলেন। সেখানে এক পরিবারে বিয়ের অনুষ্ঠানে পাঁচ দিন আগেই যোগ দিয়েছিলেন। মজা করেছেন, হিন্দি গান বাজিয়ে নাচানাচিও হয়েছে। তারপর এক দিনের মধ্যেই বদলে গেল গোটা আবহটা। এটা আমাদের কাছে কেন, ওখানকার মানুষের কাছেও অত্যন্ত শকিং!”

তিনি বলেন, “আমি এতটুকু বুঝে গিয়েছি, এখনই প্রচণ্ড চিন্তিত হয়ে লাভ নেই। আমি খুব বেশি প্রেসার ওঁকেও দিতে চাই না। আমি শুধু চাই যোগাযোগটা যাতে নিয়মিত করে যেতে পারি। আমি ওর সঙ্গে কানেক্ট করতে পারি। ও কাবুলের মেয়ে, ওখানে ওর পরিবার। আমি ওর ওপর চাপ তৈরি করতে চাই না।”

তবে ওখানকার পরিস্থিতিও যে ওতটা জটিল আগেও ছিল না, তা বারবারই বলছেন সুব্রত দত্ত। তিনি বলেন, “অনেকেই অনেক কথা বলছেন, শুনছি। তবে আমি নিজে অনেকবার কাবুল গিয়েছি। ওঁরা ইন্ডিয়ানদের হাতে পাসপোর্ট দেখলেই ভাই বলে মেনে নেয়। আমি ট্রেনিং করতাম। ওঁদের মধ্যে আন্তরিকতা রয়েছে খুবই। আমার ওঁদের সঙ্গে বন্ডিং তৈরি হয়েছিল ভীষণরকম। আমি এখনও যদি ফেসবুকে লিখি আই অ্যাম মিসিং আফগানিস্তান, সেই অর্থেই তার রিপ্লাই আসবে…”

নাগেরবাজারের সুব্রত দত্ত স্ত্রীর জন্য চিন্তিত, তবে এখনও ভরসা হারাননি তিনি। বরং অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। কাবুলের মেয়েকে বিয়ে করে ওখানকার মানুষের আন্তরিকতায় আপ্লুত পুলিশকর্তা। আরও পড়ুন: তালিবানের দখলে দেশ, বুরখায় মুখ ঢাকতে ব্যস্ত মহিলারা, ৩ দিনেই দাম বাড়ল ১০ গুণ!