BJP: ‘সংরক্ষণের নামে মুসলিম তোষণ করছে মমতার সরকার’, পঞ্চায়েত ভোটে ফের হিন্দুত্বে শান বিজেপির?

BJP: ওবিসি সংরক্ষণের নামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার মুসলিম তোষণ করছে। পঞ্চায়েতের আগে সেই বার্তা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাইছে বিজেপি।

BJP: 'সংরক্ষণের নামে মুসলিম তোষণ করছে মমতার সরকার', পঞ্চায়েত ভোটে ফের হিন্দুত্বে শান বিজেপির?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 14, 2022 | 1:15 PM

সিজার মন্ডল 

কলকাতা: টার্গেট পঞ্চায়েত নির্বাচন। বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই ছন্নছাড়া পদ্ম শিবির। তাই এবার ঘর গোছাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভালো ফল করতে মরিয়া বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করতে ইতিমধ্যেই উগ্র হিন্দুত্ববাদকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি। কালি বিতর্কে দাড়ি না টেনে সেই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদের পাশাপাশি এবার পঞ্চায়েত ভালো ফল করতে জাতপাতের রাজনীতিও উস্কে দিল বিজেপি। তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, যাঁদের সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়ার কথা নয়, তাঁরা পাচ্ছেন। আর বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে এই সাধারণ মানুষ বলতে তিনি যে আদপে হিন্দু সমাজকেই বোঝাতেই চাইছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

সহজ কথায় ওবিসি সংরক্ষণের নামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার মুসলিম তোষণ করছে। পঞ্চায়েতের আগে সেই বার্তা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ওবিসি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ও হিন্দুরা যে বঞ্চিত সেই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও ওবিসি মোর্চার প্রতিনিধিদের আরো গুরুত্ব দিতে হবে। মঙ্গলবার মহেশ্বরী ভবনে রাজ্য বিজেপির ওপিসি মোর্চার কার্যকারিনী সভা হয়। সেই সভায় মন্ডল স্তর তো বটেই বুথ স্তরেও প্রত্যেক বুথ থেকে ন্যূনতম একজন ওবিসি প্রতিনিধি রাখার নির্দেশ ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক্তের দাবি গত তিন বছর ধরে ওবিসি ভুক্ত হিন্দু ভোটারদের একজোট করার চেষ্টা করছে বিজেপি এবং আরএসএস। 

পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি সংরক্ষণের ইতিবৃত্ত

BJP in West Bengal

ফাইল চিত্র

মন্ডল কমিশনের সুপারিশ মেনে বামফ্রন্ট জমানায় প্রথমে ৭ শতাংশ সংরক্ষণ ঘোষণা করা হয় ওবিসিদের জন্য। সেই সংরক্ষণের আওতাভুক্ত ছিল না অধিকাংশ পিছিয়ে পড়া শ্রেণী। ২০১০ সালে বামফ্রন্ট সরকার আরও দশ শতাংশ সংরক্ষণ ঘোষণা করে মোস্ট ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস বা অতি পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য। তৈরি হয় ওবিসি এ এবং ওবিসি বি আলাদা দুটো তালিকা। ওবিসি এ, অর্থাৎ অতি পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ৫৬ টি কমিউনিটি বা গোষ্ঠীর মধ্যে ৪৯ টি ছিল মুসলিম ধর্মের। তাঁদের জন্য বরাদ্দ হয় ১০ শতাংশ সংরক্ষণ। বাকি ৫২ টি গোষ্ঠী যার মধ্যে ৪ টি মুসলিম পায় ৭ শতাংশ সংরক্ষণ। সব মিলিয়ে ১০৮ টি সংরক্ষণ পাওয়া গোষ্ঠীর মধ্যে ৫৩ টি মুসলিম। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই সংরক্ষণের আওতাভুক্ত করা হয় আরও একাধিক গোষ্ঠীকে। বর্তমানে সংরক্ষণ পাওয়া ১৭৭ টি গোষ্ঠীর মধ্যে ৯৯ টি মুসলিম ধর্মের।

২০২১ এর ভোটের কৌশল কী কাজে লাগবে পঞ্চায়েতে? 

Suvendu Adhikari BJP

বিজেপির অভিযোগ বঞ্চিত করা হচ্ছে হিন্দুদের মধ্যে থাকা পিছিয়ে পড়া শ্রেণীকে। মাহেস্য সম্প্রদায়ের মতো পিছিয়ে পড়া শ্রেণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি সংরক্ষণের তালিকায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই তথ্যকে হাতিয়ার করে বুথে বুথে পিছিয়ে পড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে বিজেপি বোঝাতে চাইছে সংরক্ষণের নামে কিভাবে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে মমতার সরকার। কিভাবে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের বিভিন্ন সংরক্ষণ থেকে শুরু করে চাকরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে হিন্দু সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষদের। সূত্রের খবর, গত তিন থেকে চার বছর ধরেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠন এবং বিজেপি এ রাজ্যে এই হিন্দু বঞ্চনার হাতিয়ার কে কাজে লাগিয়ে সাংগঠনিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে যদিও এই স্ট্র্যাটেজি কতটা সফল হয়েছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন বিজেপি নেতারাই। কারণ ভোট বাক্সে মতুয়া বা রাজবংশীর মত সিডিউল কাস্ট তাদের ভোট প্রতিফলিত হলেও ওবিসি ভোট আদৌ প্রতিফলিত হয়েছে কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। 

বড় দায়িত্ব জঙ্গলমহলের দুই বিজেপি বিধায়কের কাঁধে

যদিও তারপরেও বিজেপি নেতাদের আশা পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেখানে বুথ স্তরে মানুষের ইন্ডিভিজুয়াল বা ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার ছোট ছোট সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়া এবং সংরক্ষণ অনেক বড় ফ্যাক্টর হয় সেখানে এই ওবিসি নিয়ে বঞ্চনার হাতিয়ার কার্যকরী হতে পারে। সেই কারণে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিশেষ করে এই ক্যাম্পেন শুরু করছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপির এই ওবিসি মোর্চায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জঙ্গলমহলের দুই বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতো এবং বানেশ্বর মাহাতোকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জঙ্গলমহলে মাহাতো ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছে। সেই দাবিকেই আরও এক ধাপ দিয়ে ভোটের ময়দানে ফায়দা তুলতে চাইছে পদ্ম শিবির।