কলকাতা: জাতীয় সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ (Land acquisition for National Highway) করতে গিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, জাতীয় সড়ক বিভাগের জলপাইগুড়ি বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রজেক্ট ডিরেক্টর সঞ্জীব শর্মা, জাতীয় সড়কের ম্যানেজার শৈলেন্দ্র শম্ভু, ওই অধিগ্রহণের দায়িত্বে থাকা রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত ভূমি আধিকারিক দাওয়া তেশরিং দুপকা ও চক্রে জড়িত অসমের এক ব্যক্তি সহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে পুলিশকে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে এফআইআর করে তদন্ত শুরু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দু’মাসের মধ্যে তদন্ত করে সেই রিপোর্ট নিম্ন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আলিপুরদুয়ার থানাকে।
বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা মঙ্গলবার বলেছেন, ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে উঠলেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এফআইআর করে তদন্ত করতেই হবে। অভিযুক্ত যত বড় আধিকারিকই হোন না কেন, তদন্ত বাধ্যতামূলক। ফলে আলিপুরদুয়ারের সবিতা রায় নামে এক জমিদাতার প্রাপ্য টাকা অসমের এক ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা করা এবং তা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় এবার বড়োসড়ো প্রশ্নের মুখে গোটা জমি অধিগ্রহণ এবং সেখানে টাকা মেটানোর প্রক্রিয়াও।
এদিন আদালতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ওই ভুল ইতিমধ্যে শুধরে নেওয়া হয়েছে। মামলাকারী ইতিমধ্যেই তার প্রাপ্য টাকা পেয়ে গিয়েছেন। তাতে মামলাকারীর আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন, “ঘটনাটি যে ঘটেছিল তা রাজ্যের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। সে ক্ষেত্রে সেটা ভুল, নাকি এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে, তার তদন্ত হওয়া জরুরি। কারণ ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ারে ওই জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০০ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই আবহে আমার মক্কেলের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা উচিত।” এই টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ইতিমধ্যেই জাতীয় সড়ক বিভাগ যে পদক্ষেপ করেছে তাও এদিন আদালতকে জানান মামলাকারীর আইনজীবী অরিন্দম বাবু জানান, তাঁর মক্কেলকে চিঠি দিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই অভিযোগ নিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভিজিলেন্স তদন্ত শুরু করেছে।
আদালত মামলাকারীর বক্তব্যে সায় দিয়ে দ্রুত এফআইআর করার নির্দেশ দেয়। ফলে এবার সম্ভবত এই প্রথম রাজ্যে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে আর্থিক নয়-ছয়ের অভিযোগে প্রজেক্ট ডিরেক্টর, এর মত অফিসারের বিরুদ্ধে এবার ফৌজদারি অভিযোগের তদন্ত শুরু হচ্ছে হাইকোর্টের নির্দেশে।
গুজরাট থেকে অসমের মধ্যে নতুন হাইওয়ে তৈরির জন্য একসময় আলিপুরদুয়ারে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বহু জমির ফিজিক্যাল পজিশন নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ফের জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। সবিতা রায়ের চাং পাড়া মৌজার জমির জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হয়ে জমা করে রাজ্যের ভূমি দফতর। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, একটি অ্যাকাউন্ট সবিতা রায় নামে হলেও সেটি অসমের। সেই অ্যাকাউন্টে সাড়ে পাঁছ লাখ টাকা পড়ার পর তা তুলে নিয়ে অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা হয়। এই নিয়ে থানায় যাওয়া হলে, তাকে নতুন করে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হলেও, অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এই অভিযোগে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন। সেই মামলাতেই এ দিন এফআইআর করার নির্দেশ দেয় আদালত।
আরও পড়ুন : Weather Update: ফের বৃষ্টির উপদ্রব! পশ্চিমী ঝঞ্ঝা-উচ্চচাপ বলয়ের জোড়া ফলা… এই দিনগুলিতে ছাতা নিতে ভুলবেন না