Partha Chatterjee: পার্থই প্রথম নন, গ্রেফতারির পর দল দূরত্ব বাড়ানোয় বেদনা-ক্ষোভ চেপে রাখেননি তৃণমূলের নেতা-সাংসদরা
Partha Chatterjee: ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন তৃণমূলের আরেক সাংসদ তাপস পাল। রোজভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হন তিনি। তাঁকে ওড়িশায় নিয়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
কলকাতা: ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার এক বছর পার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তৃণমূলের এক সময়ের মহাসচিব তিনি। অথচ জেলে বছর ঘুরলেও একদিনও দলের কেউ তাঁর খোঁজ নেননি বলে নাকি অভিমান প্রকাশ করেছেন ঘনিষ্ঠমহলে। যদিও একেবারে ঘনিষ্ঠমহলে পার্থ এ কথা বলেছেন বলে সূত্রের খবর। কিন্তু তৃণমূলের এমন নেতাও আছেন, যাঁরা জেলে যাওয়ার পর প্রকাশ্যেই দলের ভূমিকা নিয়ে বিষোদগার করেছিলেন।
২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর সারদা মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন মদন মিত্র। কামারহাটির বিধায়ক মদন তখন পোশাক-আশাকে এতটা ‘কালারফুল’ ছিলেন না। তবে তাঁর দাপট ছিল নজরকাড়া। শাসকদলের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে মদন ছিলেন অন্যতম। দলনেত্রীরও বিশেষ স্নেহভাজনের তালিকাতে তাঁকে ধরা হত বলেই তৃণমূলের লোকেরা বলতেন। সেই মদনও সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর দাবি করেছিলেন, “এতদিন জেলে আছি। মুখ্যমন্ত্রীর কথা তো বাদই দিলাম, একজন মন্ত্রীও দেখা করতে আসেননি।” সেদিনের মদন প্রশ্নও তুলেছিলেন, “সকলে কি ভয় পেয়ে গেল? ভাবছে মদনের সঙ্গে দেখা করলে যদি সিবিআই ডাকে।”
এ তো গেল মদন-পর্ব। সারদাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর কুণাল ঘোষের সঙ্গেও দলের দূরত্ব নিয়ে কম হইচই হয়নি। কুণাল যখন গ্রেফতার হন অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর (প্রথমে বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা তাঁকে গ্রেফতার করে) তখন তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদও। রাজ্য পুলিশের এ হেন গ্রেফতারিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন কুণাল। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। শুধু তাই নয়, সেদিন কুণাল এমনও বলেছিলেন, “সারদা মিডিয়া থেকে যদি কেউ সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” ভরা এজলাসেও একই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল কুণালকে।
২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন তৃণমূলের আরেক তৎকালীন সাংসদ তাপস পাল। রোজভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হন তিনি। তাঁকে ওড়িশায় নিয়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। গ্রেফতারের প্রথম কয়েকমাস জেলে ছিলেন। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। অন্যদিকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসেই এই একই মামলায় গ্রেফতার হন আরেক সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকেও। তবে সুদীপও হাসপাতালেই ছিলেন গ্রেফতারির পর। তাঁকে দেখতে ভুবনেশ্বর গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই হাসপাতালে তাপসও ভর্তি থাকায় তাঁর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মমতা। তবে এরপর দল সেভাবে তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে ঘনিষ্ঠমহলে দুঃখও প্রকাশ করেন তাপস পাল। এমনকী তাপস পাল সে সময় যেদিন জামিন পান, সেদিনও দল কোনও যোগাযোগই করেনি বলে খেদ ছিল পরিবারের।
তবে দল যে সকলের ক্ষেত্রেই একই ভূমিকায় এমন নয়। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে বারবারই সরব হন মমতা। যেদিন ভুবনেশ্বরে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন, সেদিনও বেরিয়ে বলেছিলেন, “সুদীপদা কখনও কোনও অন্যায় করেননি। চার মাস লোকটাকে ফেলে রেখে দিয়েছে। হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছে আমাকে দেখে।” এরপর গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারিতেও বারবার তাঁর পাশেই থেকেছেন দলনেত্রী নিজে। ফিরহাদ হাকিম তো তাঁকে ‘বীরভূমের বাঘ’ও বলেছেন। তবে সূত্রের খবর, পার্থ সোমবার আদালতে ঘনিষ্ঠমহলে জানান, দলের এখন টাকা হয়েছে, ক্ষমতা বেড়েছে, তাই তাঁকে আর দলের দরকার নেই। সে কারণেই আজ আর কেউ তাঁর খোঁজও নেয় না।