AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘দস্যু রত্নাকর’ থেকে ওঁরা আজ ‘মাস্টার মশাই’, শিক্ষক দিবসে সংবর্ধনা দিল প্রেসিডেন্সি জেল

Teachers' Day in Presidency jail: শিক্ষকতা করতেন। এখন আর সেই সুযোগ নেই। বরং পরিস্থিতির কারণে কিংবা ভুলবশত বা স্বভাবগত কোনও সমস্যায় বর্তমান জীবন কাটছে পাঁচিল ঘেরা স্থানে। আর সেখানেই সংবর্ধিত হলেন ছয় শিক্ষক।

'দস্যু রত্নাকর' থেকে ওঁরা আজ 'মাস্টার মশাই', শিক্ষক দিবসে সংবর্ধনা দিল প্রেসিডেন্সি জেল
প্রতীকী চিত্র
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2021 | 11:26 PM
Share

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: শিক্ষকতা করতেন। এখন আর সেই সুযোগ নেই। বরং পরিস্থিতির কারণে কিংবা ভুলবশত বা স্বভাবগত কোনও সমস্যায় বর্তমান জীবন কাটছে পাঁচিল ঘেরা স্থানে। আর সেখানেই সংবর্ধিত হলেন ছয় শিক্ষক। সেই সঙ্গে বর্হিজগত থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নদের পড়াশোনায় একদা সহায়তা করা সরকারি কর্মীরা ওই সংবধর্না মঞ্চ ভাগ করে নিলেন। উপলক্ষ্য প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান।

রবিবার বিকালে শহরের থ‍্যাকারের রোডের সংশোধনাগারে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ। সেখানেই সংবর্ধনা দেওয়া হয় একদা শিক্ষকতা করে দিন গুজরান করা রাজীব চক্রবর্তী, শুভঙ্কর রায়, ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, শেখ সাদিক আলি, তারক দাসদের। কেউ বা খুনের অভিযোগে কারাগারের অন্দরে, কারও বিরুদ্ধে  রয়েছে অবৈধ ভাবে (সঠিক নথিপত্র নেই) ভারতে বসবাসের অভিযোগ। আবার কেউ শিশুর উপর যৌন নির্যাতন করা মামলায় বিচারাধীন, কেউ বা প্রতারণায় অভিযুক্ত হয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন জেলের কুঠুরিতে। কম বেশি সকলের প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ঠিকানায় এক, দুই, তিন বছর সময় কাটছে। শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁদের পুষ্পস্তবক, মানপত্র আর উপহার হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর তা নিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন রাজীব, তারকদের কেউ কেউ। কেউ তাঁর শিক্ষকতা জীবনের ‘স্মৃতি সততই সুখের’ প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। কেউ বা অতীত আর বর্তমান জীবনযাপন মিলিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। তবে কারা কুঠুরির অন্দরে এসেও শিক্ষকতা ছাড়েননি শুভঙ্কর, ইন্দ্রনীলরা। তাই অন্য বন্দিদের লেখাপড়ায় নিয়মিত নজরও রাখেন তাঁরা।

বন্দি শিক্ষকদের পাশাপাশি এ দিনের অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত হন মনোরাজ পাল, গৌতম রায় ও কৃষ্ণচন্দ্র মাজিও। তাঁরা একদা ‘জেল টিচার’ বন্দিদের পদে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পনেরো-ষোলো বছর আগে। তবে চাকরিতে পদোন্নতি হয়েছে। তাই ‘জেল টিচার’ পদে আর নেই তাঁরা। এ দিন ওই পদে থাকার সময়ে কীভাবে সত্তর বছরের বন্দিকে অ-আ-ক-খ শিখিয়েছিলেন, কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা, তা এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বন্দি, জেল কর্মী, অফিসারদের সঙ্গে ভাগ করে নেন গৌতম, কৃষ্ণচন্দ্ররা। কেউ বা মহিলা অপরাধীদের সঙ্গে থাকা শিশুদের লেখাপড়া করানোর কথাও বলেন।

রাজ্যের জেল ইতিহাসে বন্দি শিক্ষক বা ‘জেল টিচার’-দের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন প্রায় নজিরবিহীন। বন্দি শিক্ষকদের খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনদিন ধরে সংশোধনাগারের নথি থেকে অন্য বন্দিদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব পড়েছিল জেল কর্মী-অফিসারদের উপর। তাঁরাই এই ছয় বন্দি শিক্ষককে যেমন খুঁজে বের করেন, তেমন জেল টিচারদেরও সংবর্ধিত করার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে কর্মী-অফিসারদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে সংশোধনাগারের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “প্রকৃতিই হল আমাদের সব থেকে বড় শিক্ষক। সেই শিক্ষায় আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষিত হই। তার সঙ্গে আমার কর্মজীবনে আশেপাশে থাকা শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই ধরনের অনুষ্ঠান করতে পারলে সংশোধনাগার শব্দটি প্রকৃত অর্থে মান্যতা পায়। এটা তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।” আরও পড়ুন: মমতার সরকারকে ৯০০ কোটি টাকার ঋণ দিতে পারে বিশ্বব্যাঙ্ক