Subrata Mukherjee: ‘কর্পোরেশন চালিয়েছি, স্বরাষ্ট্র-ও দেখেছি, একটা আত্মজীবনী তো লিখতেই হবে’
Subrata Mukherjee Interview: "আত্মজীবনীটা আমাকে লিখতেই হবে। তার কারণ হল, এমন এমন সময়ে রাজনীতিতে আমি কাটিয়েছি। যেগুলো জেনে লেখার লোক আর নেই। প্রিয়দা (প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি) লিখতে পারত, আরও কয়েকজন লিখতে পারত।''
কলকাতা: “আত্মজীবনীটা আমাকে লিখতেই হবে। তার কারণ হল, এমন এমন সময়ে রাজনীতিতে আমি কাটিয়েছি। যেগুলো জেনে লেখার লোক আর নেই। প্রিয়দা (প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি) লিখতে পারত, আরও কয়েকজন লিখতে পারত।” মন্তব্যটি যাঁর, তিনি আর ইহলোকে নেই। শুক্রবার যাঁকে গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানাল রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)
দক্ষ প্রশাসক, অভজ্ঞ রাজনীতিক। অভিজ্ঞতার ঝুলি পরিপূর্ণ। কিন্তু সবসময় কি কিছুটা পিছনের সারিতেই থেকে গেলেন? তিনি নিজেই অবশ্য সেটা স্বীকারও করতেন কিছুটা। বলতেন, তাঁদের রাজনৈতিক জুটির কথা বললেও তো আগে ‘প্রিয়দার’ নাম আসে, পরে তাঁর। আবার নিজেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার মতো যে ইমেজ লাগে তা তাঁর নেই। তবে ক্লাসের সেকেন্ড বয় হয়ে থাকার কোনও পীড়াও কি ছিল না? ছিল নিশ্চয়ই। তাই কি বলেছিলেন, ‘একটা আত্মজীবনী লিখে যেতে হবে’?
তৃণমূল তিন দফায় রাজ্যের ক্ষমতায়। কিন্তু কখনও কেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে সামনের সারিতে পাওয়া গেল না? সবসময় মাঝারি সারিতে। কোনও সময় মনে হয় না যে, আপনাকে সামনে প্রোজেক্ট করা হচ্ছে। Tv9 বাংলার ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে তাঁকে এই প্রশ্নটা করেছিলেন এডিটর অমৃতাংশু ভট্টাচার্য। সুব্রতবাবুর উত্তর, ‘আমাকে কোনও দিন মমতা অসম্মান করেনি। এটা সবচেয়ে বড় পাওনা। তার থেকে বড় কথা আমি বড় কিছু ডিমান্ড করি না। ডিমান্ড যেটা করি, বাকিটা চিফ মিনিস্টারের প্রেরোগেটিভ। কিন্তু আমার ডিমান্ড হল সম্মান করা বা অসম্মান না করা। সেই সম্মান আমি পুরোপুরি পাই।”
একটু থেমে সুব্রতবাবু যোগ করেন, “আর একটা ব্যাপার হল, মমতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফতরটা কিন্তু আমাকে দিয়ে রেখেছেন। একবার নয়। ১৫ বছর ধরে একটা ডিপার্টমেন্ট চালাচ্ছি। এবং যে ডিপার্টমেন্টে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং এরপর তাঁর কাছে আমার চাওয়ার কিছু থাকে না।”
কিন্তু একজন দক্ষ প্রশাসক, বিজ্ঞ রাজনীতিক কি আরও বেশি কিছু পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন না? খানিক চুপ থাকলেন পরিষদীয় রাজনীতিতে পঞ্চাশ বছর কাটিয়ে দেওয়া সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তার পর বলেই দিলেন, “এটা ঠিক যে আমি খুব আউট স্পোকেন। তাতে ভালমন্দ যাই হোক। এটা সেই ছোটবেলার অভ্যাস। তাতে রাজনীতিতে অনেক জায়গায় আমার ভাল হয়েছে, অনেক জায়গায় খারাপও হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় ক্ষতি-ও হয়েছে।”
যেমন? খানিক চুপ করলেন আড্ডাপ্রিয় সুব্রত। তার পর বললেন, “প্রথম যখন মেয়র হলাম, প্রথম পাঁচ বছর মেয়রগিরি করলাম, তার পরের বার কিন্তু আমি আর মেয়রের জন্য রাজি হলাম না। কিন্তু মেয়র হিসাবে যেভাবে মানুষ আমাকে অ্যাকসেপ্ট করেছিল, তাতে আমার থাকা উচিত ছিল। রাজি হলাম না। আক্ষেপ হয়। আমার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য… সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো চারটে পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু আমি সেটা এগ্রি করিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা ঠিক ডিসিশন হয়নি।”
তবে সুব্রতবাবু এই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন আর বিশেষ কিছু নিয়ে ভাবছেন না তিনি। দলে নতুনদের এগিয়ে নিয়ে আসা, তাঁদের তৈরি করা এবং মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় তাঁকে যেসব দফতরের মন্ত্রিত্বের ভার দিয়েছেন, তা ঠিকভাবে পালন করা তাঁর লক্ষ্য। আর এই প্রসঙ্গে উঠে আসে আত্মজীবনীর লেখার কথা।
এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, “আত্মজীবনীটা আমাকে লিখতেই হবে। তার কারণ হল, এমন এমন সময়ে রাজনীতিতে আমি কাটিয়েছি। যেগুলো জেনে লেখার লোক আর নেই। প্রিয়দা (প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি) লিখতে পারত, আরও কয়েকজন লিখতে পারত।”
আত্মজীবনী লেখার ঝোঁক যে তাঁর আছে,আর সেই কাজ যে তাড়াতাড়ি শুরু করতে চান তার আভাস দিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ ছোট্ট হাসি হাসলেন সুব্রতবাবু। বললেন, “আমি কর্পোরেশনও চালিয়েছি, হোম মিনিস্ট্রি-ও চালিয়েছি। এরম ধরণের আর কে আছে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সিদ্ধার্থ শংকর রায় হয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, এঁদের দেখার (কাছ থেকে চেনার কথা বলতে চাইলেন হয়ত) সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আবার আমি জেলার প্রেসিডেন্ট, মমতা সেক্রেটারি, এমন করেও দল চালিয়েছি দক্ষিণ কলকাতায়। ফলে লেখার সামগ্রী আমার কাছে ভরপুর।”
আবার নিজেই নিজেকে আউট স্পোকেন বলে দেওয়া সুব্রত এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে তাঁর আত্মজীবনী বেরলে সাঙ্ঘাতিক কিছু বিতর্ক হবেই। নিজেই বলেছেন সে কথা। বলেন “বহু জায়গায় বিতর্ক হবে। অনেকে একমত হবে না। সে জন্য একটু অপেক্ষা করছি।” সেই আত্মজীবনী লেখার কাজ কি শুরু করেছিলেন সুব্রতবাবু? না, কোনও খবর নেই।