Trekkers death in Uttarakhand: ছুটি পেলেই চলে যেতেন ট্রেকিংয়ে, এবার সঙ্গে ছিলেন মামাও! উত্তরাখণ্ডে শেষ আরও এক পাহাড়প্রেমী বাঙালি
Trekkers death in Uttarakhand: উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের খবর শোনার পর থেকেই আতঙ্কের প্রহর কাটাচ্ছিলেন তিওয়ারি পরিবারের সদস্যরা। সর্বদা চোখ রেখেছিলেন টিভির পর্দায়।
কলকাতা: মামার দেখাদেখিই শখটা জন্মেছিল মনে। তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করতেন। তবে মনে প্রাণে ছিলেন পাহাড়প্রেমী। ট্রেকিংয়ের শখ তাঁর দীর্ঘদিনের। অফিসে ছুটি নিয়ে মাঝেমধ্যেই ট্রেকিংয়ে যেতেন। এই নিয়ে চার বার ট্রেকিং করেছেন তিনি। এবারও পুজোর মধ্যে মামার সঙ্গেই রওনা দিয়েছিলেন স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে। সেখানেই শেষ হল প্রাণ। উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে গিয়ে মৃত আরও এক বাঙালি পর্যটকের দেহ উদ্ধার হল। বছর তিরিশের তনুময় তিওয়ারির বাড়ি হরিদেবপুরের নেপালগঞ্জে। একটি গ্রুপের সঙ্গে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মামা সুখেন মাঝিও। তনুময়ের দেহ উদ্ধার করা গেলেও, তার মামাকে এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের খবর শোনার পর থেকেই আতঙ্কের প্রহর কাটাচ্ছিলেন তিওয়ারি পরিবারের সদস্যরা। সর্বদা চোখ রেখেছিলেন টিভির পর্দায়। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। যতদিন কোনও খবর মেলেনি, বুকের মধ্যে আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন, হয়তো কোথাও আটকে পড়েছে, কিন্তু তাঁদের সন্তান সুরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু তা মিথ্যা করেই অবশেষে আসে সেই খবর।
তনুময়ের বাবা-মা কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। ঘরে বসে ডুকরে কেঁদে উঠছেন মাঝেমধ্যেই। তনুময়ের কাকা বলেন, “আমাদের ছেলেটা তো চলেই গেল। আর কিছু বলার নেই। তবে দেহটা যেন পাই। আমরা সত্কারটা যেন করতে পারি।” পরিবারে শোকের ছায়া। সরকারের কাছে আবেদন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তাঁদের ছেলের দেহ যেন তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
উত্তরকাশীতে নিখোঁজ থাকা রিচার্ড মণ্ডলের দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তাঁর দেহ নামিয়ে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। রিচার্ড মণ্ডলের সঙ্গে নিখোঁজ ছিলেন স্থানীয় এক গাইডও। তাঁরও দেহ উদ্ধার হয়েছে।
বাগেশ্বর জেলায় আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে এখনও পর্যন্ত অপারেশন শুরু করা সম্ভব হয়নি। আশা করা যায় অল্প কিছু সময় পরে অপারেশন শুরু করা সম্ভব হবে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, সকাল সাড়ে সাতটায় অপারেশন শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু তা আজ হয়ে ওঠেনি।
দু’জনকে একসঙ্গে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরকাশীতে নিখোঁজ থাকা পাঁচ জন বাঙালির দেহ উদ্ধার করা হল। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন সুখেন মাঝি। উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে গিয়ে মৃত্যু বাংলার ৫ জনের। উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর কন্ট্রোল রুম থেকে বাংলার পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন,সাধন বসাক, তিনি ঠাকুরপুকুর জায়গীর রোডের বাসিন্দা। এছাড়াও বিকাশ মাকাল, সৌরভ দাস, সাবিয়ান দাসের দেহ উদ্ধার হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে তাঁরা প্রত্যেকেই ট্রেকিং করতে গিয়েছিলেন। বিপর্যয়ের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার রাতে তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। দেহ নিয়ে আসার জন্য চপার পাঠানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত নিঁখোজ ৪।
১১ জন পর্বতারোহীর মধ্যে দুজনকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল আগেই। অর্থাৎ বাকি ৯ জনের মধ্যে ৫ জনের দেহ উদ্ধার হল। বাকিদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। তাঁরা কোথায়, কী অবস্থায় আছে, তা জানতে চলছে উদ্ধারকাজ। জানা গিয়েছে, এই দলটি ট্রেকিং-এ গিয়েছিল। সেখানে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। ওই দলের মধ্যে ছিলেন ৭ জন বাঙালি।
এই পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন অনেকেই। নৈনিতাল থেকে কৌশানী যাওয়ার পথে ভওয়ালী নামে একটি জায়গায় আটকে পড়ে হুগলির একটি পরিবার। তিনদিন ধরে একটি গেস্ট হাউসে আটকে আছেন তাঁরা। এখনও খাবারের সমস্যা না হলেও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন প্রত্যেকে।
উত্তরপাড়া মাখলার ঘোষ পরিবারও একই ভাবে আটকে গিয়েছেন উত্তরাখণ্ডে। নৈনিতাল যাওয়ার পথে আলমোরা জেলার বিনসারে আটকে রয়েছেন তাঁরা। মমি ঘোষ ফোনে জানিয়েছেন,এই মুহুর্তে বৃষ্টি কমেছে তবে রাস্তায় ধ্বস নেমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে পর্যটকরদের।
উত্তরাখণ্ড পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ দিন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অজয় ভাট ও উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী ধাওয়ান সিং রাওয়াতের সঙ্গে হেলিকপ্টারে বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন অমিত শাহ। বুধবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমলেও এখনও একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে সে রাজ্যে।
আরও পড়ুন: Gariahat Double Murder: কাঁকুলিয়াকাণ্ডে গ্রেফতার আরও দুই, এখনও অধরা মিঠুর ছেলে