Upper Primary: ৯ বছরের জ্বালা-যন্ত্রণা পৌঁছল ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে, বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের দাবি এবার হিমালয়ের কোলেও

Upper Primary Recruitment: বুরান ঘাটি থেকে এক ভিডিয়ো বার্তাও ওই আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থী বলছেন, 'আপার প্রাইমারির দীর্ঘ ৯ বছরের যন্ত্রণার অবিলম্বে সমাধান হোক। যাতে নির্ভুলভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে, তার জন্য সরকার ও কমিশন যথাযথভাবে তথ্য দিয়ে ব্যবস্থা করুক।'

Upper Primary: ৯ বছরের জ্বালা-যন্ত্রণা পৌঁছল ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে, বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের দাবি এবার হিমালয়ের কোলেও
বুরান ঘাটি থেকে সুর চড়ল আপার প্রাইমারি নিয়োগের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 30, 2023 | 7:32 PM

কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগে (West Bengal Teacher Recruitment) একের পর এক বেনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। মামলা ও জটের মধ্যে বেশ অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসক শিবির। ব্যর্থতার আঙুল উঠতে শুরু করেছে রাজ্য শিক্ষা দফতরের (Education Department) দিকে। এরই মধ্যে এবার আরও জোরাল হচ্ছে প্রতিবাদের ভাষা। উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের (Upper Primary Recruitment) দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা এবার পৌঁছে গেল হিমালয়ের কোলে। হিমাচল প্রদেশের বুরান ঘাটিতে। সমুদ্রতট থেকে ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে। যাঁরা পাহাড়কে ভালবাসেন, যাঁরা ট্রেকিং পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে বুরান ঘাটি এক অতি পরিচিত ট্রেক রুট। এবার হিমালয়ের কোলে সেই বুরান ঘাটি থেকে আন্দোলনের সুর চড়াচ্ছেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের মঞ্চের অন্যতম সহযোদ্ধা স্মিত বিশ্বাস।

তুষারাবৃত হিমালয়ের কোলে ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে হাতে প্ল্যাকার্ড তুলে নিয়েছেন তিনি। তাতে লেখা, ‘আপার প্রাইমারি নিয়োগ চাই। মামলাকে ঢাল করে কমিশনের ৯ বছরের ছলচাতুরি বন্ধ হোক।’ উল্লেখ্য, নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। সেই ২০১৪ সালে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। তারপর ২০১৫ সালে পরীক্ষা। ২০১৬ সালে নিয়োগের সেই পরীক্ষার ফলও বেরিয়ে যায়। এরপর দুই দফা ইন্টারভিউ প্রক্রিয়াও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এতগুলি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনও তাঁদের চাকরি মেলেনি। এমন অবস্থায় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে চাকরিপ্রার্থীদের। ক্রমশ চড়ছে আন্দোলনের সুর। আর এবার নিজেদের প্রতিবাদের ভাষা হিমালয়ের কোলে ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে পৌঁছে দিলেন আন্দোলনকারীরা।

বুরান ঘাটি থেকে এক ভিডিয়ো বার্তাও ওই আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থী বলছেন, ‘আপার প্রাইমারির দীর্ঘ ৯ বছরের যন্ত্রণার অবিলম্বে সমাধান হোক। যাতে নির্ভুলভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে, তার জন্য সরকার ও কমিশন যথাযথভাবে তথ্য দিয়ে ব্যবস্থা করুক। আর কত যন্ত্রণা আমরা সহ্য করব? কমিশন একের পর এক ভুল করবে… এটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে না। আমরা চাই, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক।’

আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান মঞ্চ থেকেও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘আমরা যেমন চাকরিপ্রার্থীরা ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কলকাতার রাস্তায় বসে রয়েছি, ঠিক তেমনইভাবে আমাদেরই এক সহযোদ্ধা হিমাচলের ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কোর্ট অর্ডার থাকা সত্ত্বেও, কোর্ট অর্ডারকে গুরুত্ব না দিয়ে কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়াকে একের পর এক অজুহাতে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’

অন্যদিকে এই বিষয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কোহিনুর মজুমদার বলছেন, ‘মামলাকে ঢাল কে করেছে? মামলা তো পশ্চিমবঙ্গ সরকার করেনি। মামলা তো করেছে উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। আমরা বার বার সমাধানের কথা বলেছি। সমাধানের পথ দেখিয়েছি আমরা। সবার যাতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছে। যারা মামলাখোর, মামলা ছাড়া যাদের কোনও অস্তিত্ব নেই… তারা মামলা করছে।’

কিন্তু এভাবে ভিন রাজ্যে কি যদি কেউ প্রতিবাদ করেন, তাহলে কি এ রাজ্যের ভাবমূর্তির উপর প্রভাব পড়বে না? প্রশ্ন করায় কোহিনুর বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক নেতার উস্কানিতে তাঁরা এই আন্দোলন করছেন। ওই রাজনীতিকরা চেষ্টা করছেন, বাংলার নাম খারাপ করার। কিন্তু এতে কোনও লাভ হচ্ছে না। উল্টে,পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় স্তরে ও আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কৃত হচ্ছে। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কিছু করে, পশ্চিমবঙ্গের নাম কলুষিত করা যাবে না।’

প্রসঙ্গত, আপার প্রাইমারি অর্থাৎ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীরা এর আগেও বার বার নিজেদের সমস্যার কথা সরকারের কাছে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবিতে রাজপথে হামাগুড়ি দিয়ে প্রতিবাদের সেই দৃশ্য আজও আবছা হয়ে যায়নি মানুষের মন থেকে। বেকারত্বের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে আন্দোলনকারীরা সেদিন বলেছিলেন, ৯ বছর ধরে চাকরির জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তাঁদের ‘মেরুদণ্ড হারিয়ে গিয়েছে’, তাঁরা ‘মেরুদণ্ডহীন প্রাণী’ হয়ে গিয়েছেন।