Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

RG Kar Politics: তৃণমূলের আক্রমণের ‘চক্রব্যূহে’ তিলোত্তমার মা-বাবা? ব্যাকফুট থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াল শাসক দল?

RG Kar Politics: আরজি কর কাণ্ডে শুরুতেই তদন্তভার হাতে নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। যদিও তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে শুরু থেকেই গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্নের মুখে পড়েন তদন্তকারীরা। বিতর্কের মধ্যেই সরে যেতে হয়েছিল কলকাতা পুলিশের তদানন্তীন সিপি বিনীত গোয়েলকে।

RG Kar Politics: তৃণমূলের আক্রমণের 'চক্রব্যূহে' তিলোত্তমার মা-বাবা? ব্যাকফুট থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াল শাসক দল?
রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর চাপানউতোর Image Credit source: TV 9 Bangla GFX
Follow Us:
| Updated on: Jan 31, 2025 | 5:31 PM

কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষণের জন্য ৭ লক্ষ, ডিউটিতে থাকাকালীন মৃত্যুর জন্য দিতে হবে আরও ১০ লক্ষ। মোট ১৭ লক্ষ টাকা দিতে হবে হবে তিলোত্তমার পরিবারকে। দেবে রাজ্য। সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা ঘোষণার দিন এই নির্দেশই দিয়েছিলেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বান দাস। যদিও তাঁরা যে ক্ষতিপূরণ চান না, সে কথা সেদিনও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার মা-বাবা। কিন্তু, তরজা থামল কোথায়! রায় ঘোষণার পরই তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীরা কার্যত অল আউট অ্যাটাকে নেমে পড়লেন। কেউ তিলোত্তমার মা-বাবাকে ‘চক্রান্তকারীদের মুখপাত্র’ বলে দেগে দিলেন, কেউ আবার দেখালেন ‘এক্তিয়ার’, কেউ আবার তাঁদের পিছনে খুঁজলেন সিপিএমকে। 

‘ওরা তো আগেই টাকা দিতে চেয়েছিল’

এসব নিয়ে বিতর্ক যখন উচ্চগ্রামে তখন মদন মিত্র সটান বলেন, “মেয়ের ক্ষতিপূরণের টাকা লাগবে? সেটা পরিষ্কার করে বলুন। এমনিতেই কয়েকশো কোটি টাকা ডাক্তারদের আন্দোলনে উঠে গিয়েছে। আপনারা চাইলে এই মুহূর্তে হাজার-হাজার কোটি টাকা উঠে যাবে। সেটা যদি চান ওই টাকা দিয়ে মেয়ের নামে ভাল কাজ করবেন। তাহলে করতে হবে।” এ মন্তব্যেই যেন আগুনে নতুন করে ঘি পড়ে। পাল্টা মদন মিত্রর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিলোত্তমার বাবা। সাফ বলেন, “আমি ওঁকে টাকা দেব, আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন।” খানিক আক্ষেপের সুরেই বলেন, “আমি বলছি যত টাকা দিয়ে উনি দিয়ে আমায় কিনতে চান, তার থেকে বেশি টাকা আমি ওঁকে দেব। উনি আমার মেয়েকে ফেরত দিন।” তাঁর কথায়, “ওরা (তৃণমূল) তো আগেই টাকা দিতে চেয়েছিল, সেটা নিইনি বলেই এত কিছু বলা হচ্ছে।” 

এদিকে রায় ঘোষণার দিন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বান দাসকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “আমি মনে করি না, যেভাবে মৃত্যু হয়েছে, তাতে ক্ষতিপূরণ হয়। আপনাকে টাকা দিয়ে মেটাচ্ছি, এটা মনে করবেন না। কিন্তু এটা রাজ্যের দায়িত্ব নিরাপিত্তা দেওয়া। এটা ফাইন করা হয়েছে।” যদিও গত রবিবার কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, চক্রান্তকারীদের কথায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন তিলোত্তমার মা-বাবা। তাঁদের কথাতেই বারবার অবস্থান বদলাচ্ছেন। এমনকী মেয়ের মৃত্যুর পর তাঁদের শরীরি পরিভাষার কাঠিন্য, ‘নির্লিপ্ত’ থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কুণালের সাফ কথা, “আমাদের বিস্ময় লাগছে যে, মেয়ের মৃত্যুতে বাবা-মার বুক ভেঙে গিয়েছে। অথচ সেদিন থেকে স্নায়ু ধরে রেখে একেকদিন একেকরকম বিবৃতি দিয়ে যাওয়া, কী করে সম্ভব? আমরা কান্নার ছবি দেখতে পেলাম না।” তাঁর বিস্ফোরক দাবি, চ্যানেলের লোগো দেখে বক্তব্যের ‘অ্যাঙ্গেল সেট’ করছেন তিলোত্তমার বাবা-মা। তাঁর স্পষ্ট প্রশ্ন, “এত সক্রিয়তাই বা কেন! রায়ের কপি পড়ে উঠতে পারলাম না, ওঁরা মামলা করে দিলেন! এক মাস তো সময় ছিল।”

‘যা বলেছি ঠিক বলেছি’

এই কুণালকেই আবার ‘অংসবেদনশীল’, ‘রূঢ়’ বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা তাপস পালের স্ত্রী। সামাজিক মাধ্যমে উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ। ফেসবুকে লিখছেন, “কুণালবাবু প্লিজ জানুন কষ্ট বেদনার প্রকাশ বড় ব্যক্তিগত। আপনার মন্তব্য এত অংসবেদনশীল, রূঢ় কেন? দোষী কী একজন? নাকি মা-বাবা কাঁদছেন না মানে তাঁরা তাঁদের মেয়েকে মেরেছেন?” বিতর্ক বাড়লেও কুণাল অনড় তাঁর অবস্থানেই। অকপটেই বলেছেন, যা বলেছেন ঠিকই বলেছেন।  

সে যাই হোক, কুণালদের মতোই একই সুর কলকাতার মেয়র ফিরহাদের গলাতেও। তাঁর কথায়, “মেয়ের শোকে ওনাদের এক্তিয়ার বহির্ভূত কিছু বলা উচিত নয়। যাতে সহানুভূতিই নষ্ট হয়ে যায়।” বারবার যেখানে চক্রান্ত আর চক্রান্তকারীদের কথা উঠে আসছে সেই আবহে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় তো আবার তিলোত্তমার মা-বাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের নেপথ্যে বামেদের ছায়া দেখছেন। 

পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে সিপিএম? 

দিন দু’য়েক আগে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় তিলোত্তমার মা-বাবার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “প্রথম থেকেই নানা সময়ে নানারকম বক্তব্য রাখছেন। তাঁরা নিজেদের মত দিচ্ছেন বলে মনে হয় না।” এরপরই সিপিএমের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তাঁর দাবি, “কিছু লোক মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে নিজেদের স্বরূপটা প্রকাশ করে ফেলেছেন। ডাক্তারদের আন্দোলনে ডাক্তারদের কোনও নৈতিকতাই ছিল না। কারণ, সরকারের মাইনে নিয়েছে আর প্রাইভেট প্রাকটিস করেছে। তাঁদের যাঁরা পরিচালনা করছিল সিপিএম। তাঁদের স্বরূপটা প্রকাশ পেয়ে গেল।” কিন্তু এ নিয়ে রাজনীতি যে চান না তা ফের একবার সেদিনই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তিলোত্তমার বাবা। 

শোভনদেবের আক্রমণের পরেই তিলোত্তমার বাবা বলেন, “শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় নিজে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। উনি ভাল করে জানবেন আমরা কী ধরনের লোক। আমরা কোনও রাজনীতি চাই না। সহযোগিতা চাই। উনি একজন বর্ষিয়ান নেতা। উনি আমাদের গাইড লাইন দিক। উনি একদিন আমার বাড়ি এসে দেখে যাক আমরা কেমন ভাবে আছি।” যদিও কুণাল বলছেন, “ওঁরা কী বলেন, সেটা আমরা গণশক্তিতে রোজ সকালে দেখতে পাই।” তিলোত্তমার বাবা কার কথায় চলছেন সেটাও তদন্তে আসা উচিত বলে মনে করছেন ফিরহাদ হাকিমও। তাঁর আরও সংযোজন, “আমরা অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ওনাদের প্রতি। ওনাদের মেয়ে এভাবে মারা গিয়েছে, আমরা সবাই তার প্রতিবাদ করছি। আমরা সবাই ফাঁসির সাজা চাই। কিন্তু তার মানে এমন নয়, মেয়ের শোকে এমন কিছু বলা উচিত নয়, যেটা ওনাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।” 

সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও হতাশ 

এদিকে ইতিমধ্যেই আবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও হতাশ হয়েই ফিরতে হয়েছে তিলোত্তমার মা-বাবাকে। তিলোত্তমার পরিবারের আবেদন প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। শিয়ালদহ আদালতের রায়ের কপি শীর্ষ আদালতে জমা দিয়ে পিটিশন ফাইল করেছিলেন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী করুণা নন্দী। স্পষ্ট দাবি, সঞ্জয় রায় একা নয়, পিছনে অনেক বড় বড় মুখ রয়েছে। তাঁরা অনেকই রীতিমতো প্রভাবশালী। বড় বড় পদেও বসে আছেন। সে কারণেই তাঁরা চাইছেন সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করুক। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি যেহেতু শিয়ালদহ কোর্টের রায়ের আগেই তাঁরা এই পিটিশন জমা দিয়েছেন সে কারণেই তাঁরা এখন এই বিষয়টি শুনবেন না। 

জল কোনদিকে গড়াচ্ছে? 

প্রসঙ্গত, আরজি কর কাণ্ডে শুরুতেই তদন্তভার হাতে নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। যদিও তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে শুরু থেকেই গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্নের মুখে পড়েন তদন্তকারীরা। বিতর্কের মধ্যেই সরে যেতে হয়েছিল কলকাতা পুলিশের তদানন্তীন সিপি বিনীত গোয়েলকে। পরে তো আবার সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সিবিআই-ও সঞ্জয় ছাড়া আর কারও খোঁজ না পেতে তা নিয়ে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়ে যায়। শিয়ালদহ কোর্টের রায় বের হতেই ফের একবার পুলিশের ভূমিকায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় তৃণমূল নেতাদের। রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলছেন, “রাজনীতি সবসময়ই মানুষের দুঃখ-কষ্টকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ভাবনা রয়েছে। সেটা যে দল যে ভাবে দেখে তার প্রতিফলনই বাস্তবের মাটিতে দেখা যায়। রাজ্যে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল তিলোত্তমা কাণ্ড নিয়ে যে ডামাডোল তৈরি হয়েছিল তাতে তৃণমূল যুক্ত কিনা! এই যুক্ত থাকার কথা শাসকদল প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছে। আদালতের রায়ের পর তাঁরা সুর আরও চড়িয়েছেন। কলকাতা পুলিশও শুরু থেকেই এই ঘটনার নেপথ্যে একজনের কথা বলেছিল। তৃণমূলও বলছে।” তাঁর কথায়, “মনে রাখতে হবে তৃণমূলও কিন্তু প্রয়োজনে পুলিশকে খারাপও বলে। যেমন বিজেপি এখন সিবিআইকে নিয়ে এখন সুর বদলাতে শুরু করেছে। আসলে রাজনৈতিক স্বার্থ রাষ্ট্রশক্তিকে দুর্বল করে। তা সত্ত্বেও রাজনীতির এই খেলা চলতেই থাকে।”

এরইমধ্যেই আবার সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে আলাদা করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য ও সিবিআই। সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টে তিলোত্তমার বাবা-মা আবার স্পষ্ট জানিয়েছেন আপতত তাঁরা সঞ্জয়ের ফাঁসি চাইছেন না। হাইকোর্টের বাইরে দাঁড়িয়েই তিলোত্তমার বাবা বললেন, “কেন আমরা সঞ্জয়ের ফাঁসি চাইছি না, সেটা আমাদের আইনজীবী স্পষ্ট করে দেবেন। এখনও পর্যন্ত এই মামলার বিষয়ে আমাদের রাজ্যের তরফে কিছুই জানানো হয়নি। কে কী পিটিশন করেছে, সেটাও জানি না। সংবাদমাধ্যমের খবর দেখে এসেছি। কী হয় কোর্টে সেটা নিয়ে টেনশনে আছি। আমরা চাইছি, এই ঘটনার সঙ্গে যারা যারা জড়িত, তাদের সবাইকে সামনে আনা হোক, এটাই চাইছি। আমরা হাইকোর্টে সিঙ্গল বেঞ্চে ৫৫টা প্রশ্ন রেখেছি।”  তিলোত্তমার বাবা-মায়ের হয়ে লড়ছেন আইনজীবী শামিম আহমেদ। তিনিও বলছেন, “আমরাও বলেছি, যারা মূল অপরাধী তারা এখনও ধরা পড়েনি। আমরা বলছি, এই মুহূর্তে এই অ্যাপিলে আমরা ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট চাই না। আমরা চাই যারা মূল অপরাধী তারা ধরা পড়ুক, তাদের কড়া সাজা হোক।” তিলোত্তমার পরিবারের তরফেও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। শুনানি ৫ ফেব্রুয়ারি। এখন দেখার জল কোনদিকে গড়ায়। যদিও তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “ফাঁসি চাওয়া বা না চাওয়াটা বাবা-মায়ের উপর নির্ভর করে না। সাজা দেওয়া হয় সমাজে বার্তা দেওয়ার জন্য, যাতে কেউ এই ধরনের কোনও ক্রাইম না করে।”