মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৩৪–‘দ্য কুইন অফ ছোটনাগপুর মালভূমি’র সবচেয়ে সুন্দর জায়গা কোনটি?
Motorcycle Ride: বেশিরভাগ মানুষ রাঁচিতে দু’দিন থেকেই পাত্রাতু ভ্যালি ঘুরে নিয়ে আবার রাঁচিতে স্টে করে। হোটেল থেকে বেরিয়ে রাতু-আর্যপুরি রাস্তা ধরে কুরু, তারপর লোহারদাগা ক্রস করে ঘাঘরা থেকে ডানদিক নিয়ে কোয়েল রিভার পেরিয়ে নেতারহাটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা, কোয়েল ভিউ পয়েন্টে, পৌঁছে গেলাম।

আজও ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে বাধ্য হলাম, তার কারণ আজও প্রায় ২০০ কিলোমিটারের যাত্রা। সকাল সাতটার সময় ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম পাত্রাতু ভ্যালির লেকে বোটিং করতে। শান্ত, কোলাহলমুক্ত এই প্রকৃতির মাঝে বোটিং করার মজাই আলাদা। হোটেলে ফেরার পথে একটি রেস্টুরেন্টে সকালের খাবার খেয়ে ফিরে আসলাম। বাইকে লাগেজপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আজকের প্রথম গন্তব্য স্থান কোয়েল ভিউ পয়েন্টে। আজকের নাইট স্টে নেতারহাট-এ। হোটেল থেকে এই কোয়েল ভিউ পয়েন্টের দূরত্ব ১৮৫ কিলোমিটার।
বেশিরভাগ মানুষ রাঁচিতে দু’দিন থেকেই পাত্রাতু ভ্যালি ঘুরে নিয়ে আবার রাঁচিতে স্টে করে। কিন্তু আমার মতে একই জায়গায় দু’দিন থাকাটা লোকসানের; তাই আমি প্ল্যানটা এভাবেই করেছিলাম। হোটেল থেকে বেরিয়ে রাতু-আর্যপুরি রাস্তা ধরে কুরু, তারপর লোহারদাগা ক্রস করে ঘাঘরা থেকে ডানদিক নিয়ে কোয়েল রিভার পেরিয়ে নেতারহাটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা, কোয়েল ভিউ পয়েন্টে, পৌঁছে গেলাম। রাস্তা বেশ ভাল এবং চওড়া রাস্তা দিয়ে কখনও ছোট-বড় পাহাড়, কখনও জঙ্গল, আবার কখনও গ্রামের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যাবেন এখানে। এই ১৮৫ কিলোমিটার রাস্তায় দু’-তিনবার দাঁড়িয়ে রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনি বাধ্য হবেন। কখনও ছোট গ্রাম, আবার কখনও পাহাড় এবং জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই রাস্তা আপনাকে বারবার দাঁড়াতে বাধ্য করবে। তাই এখানে আসতে আপনার ৫ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে।
এখানে এসেই আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন পাইন গাছের জঙ্গল দেখে। পাইন গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটলে অনুভব করবেন এখানে আলাদা রকমের আবহাওয়া বিরাজমান। কিছুদূর যাওয়ার পর আপনি দেখতে পাবেন কোয়েল ভিউ পয়েন্টে বসার জায়গা। এখানে বসে আপনার সময় হারিয়ে যাবে, আর দূরে দেখতে পাবেন ছোটনাগপুর মালভূমির সবচেয়ে সুন্দর পাহাড়ের ভিউ এবং তার সঙ্গে কোয়েল নদীর বয়ে যাওয়া। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
এরপরেই চলে আসুন পাশের নেতারহাট লেকে। নেতারহাট একটি সুন্দর গ্রাম; তার মাঝে বাদকা বাঁধ নামে এই লেকটির সৌন্দর্য আরও অপরিসীম। এরপরই চলে আসুন জঙ্গলের মধ্যে থাকা আপার ঘাঘরি ওয়াটার ফলস-এ। লেক থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে থাকা এই নদীর ধারা বয়ে যাওয়ার রাস্তা খুবই অসাধারণ। চারিদিকে নাশপাতি গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মাটির রাস্তা। বর্ষার পরে নাশপাতি ফল কেটে নিয়ে যাওয়ায় নাশপাতি দেখতে পাইনি। এটি দেখার জন্য আপনাকে গরমের শেষে আসতে হবে—ঠিক কাটার সময়। ফলসটি বেশ বড়, বেশ কয়েকটি সিঁড়ি নেমে নীচের থেকে দেখলে ঝর্ণাটিকে আরও ভাল লাগে। এটির দু’পাশে সবুজে ঢাকা জঙ্গল আর ঘাঘরি নদির ওপর গড়ে ওঠা সুন্দর একটি জলপ্রপাত। এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে আসুন পরবর্তী গন্তব্যস্থান, যা কি না মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাইন ফরেস্ট-এ।
আমার চোখে দেখা পাইন গাছের সবচেয়ে সুন্দর বন এটি, তার সঙ্গে এটি নেতারহাটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। কয়েক কিলোমিটার ঘন পাইনের অভয়ারণ্যের আগে কখনও দেখিনি। এখানে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে সঙ্গে অনেক ছবি তুলে চলে এলাম আজকের দিনের শেষ ভিউ পয়েন্ট: ম্যাগ্নোলিয়া সানসেট পয়েন্ট। ‘দ্য কুইন অফ ছোটনাগপুর মালভূমি’র সবচেয়ে সুন্দর জায়গা এটি। এখান থেকেই সবচেয়ে সুন্দর ভাবে এই মালভূমিটিকে দেখা যায়। এরপর আমাদের প্ল্যান ছিল পালামৌ টাইগার রিজাভ দেখে বেতলা ন্যাশনাল পার্কে নাইট স্টে করা; কিন্তু নেতারহাট এতটাই ভাল লেগে গেল যে, বাধ্য হয়ে এখানে আরও কিছু সময় কাটানোর জন্য রাত্রিটা এখানেই থেকে গেলাম।
‘দ্য কুইন অফ ছোটনাগপুর মালভূমি’র পরবর্তী এবং শেষ অংশ আগামী পর্বে….





