Indian Nudists: পোশাক যাঁদের কাছে আবরণমাত্র, নগ্ন হয়ে থাকাতেই স্বচ্ছন্দ্য যে সব ভারতীয়…
Nudists Community: গত সপ্তাহ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া মেতেছে রণবীর সিংয়ের নগ্ন ফটোশুট নিয়ে। ঠিক একই সময় এই দেশেরই কোনও অফবিট স্থানে একদল মানুষ উপভোগ করছেন তাঁদের শরীর।

গত সপ্তাহ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া মেতেছে রণবীর সিংয়ের নগ্ন ফটোশুট নিয়ে। রণবীরের নান্দনিকতায় সমাজের এক বড় অংশ মুগ্ধ হলেও নেটজুড়ে মিমের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। পাশাপাশি এই নগ্ন ফটোশুটের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ঠিক একই সময় এই দেশেরই কোনও অফবিট স্থানে একদল মানুষ উপভোগ করছেন তাঁদের শরীর। ভাবছেন এতে রণবীরের সঙ্গে কী যোগসূত্র রয়েছে কিংবা এতে ‘অস্বাভাবিক’ কী রয়েছে? চলুন জানা যাক…
কেরলের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ত্রিসূর। সেখান থেকেও কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি বাগানবাড়িতে কোনও এক ছুটির দিনে জড়ো হয়েছিলেন ৫০ জন মানুষ। সেই ছোট্ট গেট-টুগেদারে তাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ গিটার বাজাচ্ছেন, খাবার তৈরি করছেন, যোগাসন করছেন, বই পড়ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। এখনও অবধি কোনও ‘অস্বাভাবিকতা’ নিশ্চয়ই খুঁজে পাননি? এই যে ৫০ জন মানুষ এক জায়গায় মিলিত হয়ে ছুটি উদযাপন করছেন, এঁরা প্রত্যেকেই নগ্ন। জামাকাপড়ের চিহ্ন নেই সারা শরীরে। এঁরা হলেন আমাদের দেশেরই নিউডিস্ট (Nudists) এবং নেচারিস্টস (Naturists)।
নিজের শরীরকে উপভোগ করেন এঁরা। প্রকৃতির সঙ্গে শরীরের মেলবন্ধন তৈরি করেন। এঁদের কাছে জামাকাপড় হল একপ্রকার আস্তরণ, যা শুধুই আমাদের ঢেকে রাখার কাজ করে। কিন্তু যখন এঁরা নগ্ন দেহে প্রকৃতির কাছাকাছি আসেন, নিজেদের ‘স্বাধীন’ মনে করেন। ভারতে এমন নিউডিস্টের সংখ্যা কম নেই। বরং ২০ থেকে ৭০ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নিউডিস্ট কমিউনিটির সদস্য। তাঁদের প্রত্যেকের লিঙ্গও আলাদা। এখন নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন আসছে যে, এভাবে নগ্নরূপে একে-অপরের সামনে এসে দাঁড়ালে যৌন আকর্ষণ তৈরি হয় না?
নিউডিস্টদের কথায়, একে-অপরকে নগ্ন অবস্থায় কিছুক্ষণ দেখার পর কোনও যৌন আকর্ষণই তৈরি হয় না এঁদের মধ্যে। বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, নগ্নতার সঙ্গে যোগ রয়েছে যৌনতার। এই ধারণাকেই পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে ভারতের নিউডিস্ট কমিউনিটি।
‘নিউডিস্ট’ হলেন যাঁরা নগ্নতা উপভোগ করেন। পাশাপাশি রয়েছেন নেচারিস্টিস। এঁরা কোনও প্রাইভেট সার্কেলে নগ্ন হওয়া প্র্যাক্টিস করেন। কারণ নগ্ন হয়ে দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম করা কিংবা পাঁচজন মানুষের সামনে চট করে নগ্ন হওয়া একদিনে সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের অনুশীলনই গড়ে তোলে এই আত্মবিশ্বাস। এই এঁদের মধ্যে এমনও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘নিউডিস্ট’।
এই নিউডিস্টরা মাসে বা সপ্তাহে এক-দু’বার কিংবা কোনও ছুটির দিনে এক জায়গায় মিলিত হন। তাঁরা এমন জায়গা বেছে নেন, যা শহুরে জনবসতি থেকে অনেকটা দূরে। কোনও জঙ্গলের মধ্যে, পাহাড়ের কোলে, নির্জন সমুদ্র সৈকতে কিংবা কোনও প্রাইভেট রিসর্ট বা কোনও উষ্ণ-প্রস্রবণের কাছে। এমন জায়গা বেছে নেন যেখানে তাঁরা প্রকৃতির সঙ্গে শরীরের মেলবন্ধন তৈরি করতে পারবেন। তাঁরা একসঙ্গে নিজেদের শরীরকে উপভোগ করেন।
প্রকৃতির মাঝে, আরও পাঁচজনের সঙ্গে নগ্ন হওয়ার পিছনেও বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে বলে মনে করেন এই নিউডিস্টরা। প্রথমত, তাঁরা মনে করেন জামাকাপড় ধনী-গরিবে মধ্যে বিভাজন তৈরি করে দেয়। পাশাপাশি বডি শেমিং একটি বিশাল বড় কারণ। শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে শরীরে থাকা দাগ মানুষের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। এখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নিউডিস্ট কমিউনিটি। এখানে কেউ কাউকে শরীর দিয়ে বিচার করে না, বডি শেম করে না। ধনী-গরিবের কোনও প্রসঙ্গই তৈরি হয় না। এখানে সকলেই সমান। বরং নিউডিস্টদের এই গেট-টুগেদারে ফিরে পাওয়া যায় নিজের প্রতি হারানো আত্মবিশ্বাস।
আজ ভারতের অন্দরে একাধিক নিউডিস্ট কমিউনিটি রয়েছে, যারা নিয়মিত একে-অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাঁদের প্রত্যেকের বয়স যেমন আলাদা, তেমনই প্রত্যেকের পেশাও আলাদা। কেউ গৃহবধূ, কেউ শিক্ষক আবার কেউ চাকুরিজীবী। পাশাপাশি ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন এঁরা। এঁদের কোনও হোয়াইটসঅ্যাপ গ্রুপ নেই। তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করেন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন: টেলিগ্রাম।
কিন্তু চাইলেই যে এই ধরনের গেট-টুগেদার আয়োজন করা যায়, তা কিন্তু নয়। কিছু নিয়মও মানতে হয়। একে ‘এটিকেট গাইড’ (Etiquette Guide) বলে। এই ধরনের গেট-টুগেদারের ক্ষেত্রে যে ‘এটিকেট গাইড’ মেনে চলতে হয়, তা হল:—
-নিজের তোয়ালে বা টাওয়েল ব্যবহার করতে হবে
-ব্যালকনি বা খোলা জায়গায় গেলে সেই তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে যেতে হবে
-কোনও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার কর যাবে না’
-কোনও ‘ফিজ়িক্যাল কন্ট্যাক্ট’ করা যাবে না একে-অপরকে
শুধু গেট-টুগেদারের ক্ষেত্রেই নয়, পোশাক-পরা সভ্য সমাজে ‘ফিরে’ যাওয়ার পরও মানতে হয় সেই ‘এটিকেট গাইড’:—
-প্রকাশ্যে অর্থাৎ পাবলিক প্লেস-এ সহ-নিউডিস্ট বা নেচারিস্টকে আলাদা করে ‘চিহ্নিত’ করা যাবে না
-প্রাইভেট অনলাইন গ্রুপে ন্য়ুড ছবি শেয়ার করা গেলেও সেক্ষেত্রে রয়েছে স্পষ্ট DONT’S যাতে সেই ছবি কোনওভাবেই যৌন উত্তেজনামূলক বা মাত্রাতিরিক্ত খোলামেলা না হয়।
ঘটনাচক্রে প্যানডেমিকের সৌজন্যে এই নিউডিস্টদের পক্ষে নিজেদের মুক্তি আবিষ্কার করাটা অনেক সহজ হয়েছে। পুণের ৩৫ বছরের এক বাসিন্দা—নিজের ‘নিউডিস্ট লাইফস্টাইল’ সম্পর্কে যিনি অবগতই ছিলেন না একটা সময়—বানিয়ে ফেলেছেন ‘নিউডিস্ট ক্যালেন্ডার’। এই ধরনের ‘নিউডিস্ট ডেস্টিনেশন রিভিউ প্ল্যাটফর্ম’ তৈরির উদ্যোগ এই প্রথম। এই ক্যালেন্ডার উল্লেখ করে সেইসব জায়গার যেখানে কেউ যেতে পারেন ‘নেকেশন’ (Nakation)-এ অর্থাৎ NAKED VACATION-এ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘পাবলিক নিউডিটি’ ভারতে বেআইনি।
