AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Bhanga Mela: ভাঙাচোরা টুকরো অতীত দিয়ে সেজে ওঠে যে মেলা, এই বাংলাতেই রয়েছে তার হদিশ

Fair in Bengal: গ্রামবাংলার জীবনযাপনের সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে মেলা জড়িত। আর পুরনো, ভাঙা জিনিসের বিকিকিনির সঙ্গেও বাঙালি বেশ অভ্যস্ত।

Bhanga Mela: ভাঙাচোরা টুকরো অতীত দিয়ে সেজে ওঠে যে মেলা, এই বাংলাতেই রয়েছে তার হদিশ
| Edited By: | Updated on: Jan 27, 2023 | 1:31 PM
Share

গ্রামের মাঠজুড়ে পৌষ সংক্রান্তির মেলা বসেছে। পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। বিকিকিনি চলছে। রয়েছে সাদা-কালো টিভি, ক্যামেরা, ফ্যান, মিক্সার গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি আরও অনেক কিছু। এসবই সেকেন্ড হ্যান্ড, ভাঙাচোরা, বাড়ির বাতিল করে দেওয়া জিনিসপত্র। হ্যাঁ, এমনও মেলা বসে গ্রামবাংলায়। আর এই মেলার নাম ভাঙা মেলা। পুরনো বই, খাতা, জুতো থেকে শুরু করে যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় এই ভাঙা মেলায়। সঙ্গে জিলিপি, ঘুগনিও পাওয়া যায়। আর মেলায় লোকের সংখ্যাও বেশ ভাল। এমন মেলা বাংলার কোথায় বসে জানেন?

গ্রামের নাম দক্ষিণ বিষ্ণুপুর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে অবস্থিত এই গ্রাম। এই দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মেলার মাঠে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মেলা বসে। ভাঙাচোরা, বাতিল ও সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস মূলত পাওয়া যায় এই মেলায়। তা-ই মেলার নামও হয়ে গিয়েছে ‘ভাঙা মেলা’। ছোটবেলা যে ভিডিও গেমস আপনার সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল, যে সাদা-কালো বক্স টিভিতে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন, সেই সব কিছু আপনার হাতের নাগালে চলে আসবে যদি একবার ভাঙা মেলায় আসেন। এটাই এই মেলার বৈশিষ্ট্য।

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এই মেলা বসে। চলে প্রায় এক মাস। শোনা যায়, নবদ্বীপ থেকে শ্রী চৈতন্য ওড়িশা রওনা দেওয়ার সময় মকর সংক্রান্তির দিন এই মথুরাপুরে রাত্রিবাস করেছিলেন। তখন এই গ্রামের মধ্য দিয়ে গঙ্গা বয়ে যেত। সেখানেই গঙ্গাস্নান করেছিলেন তিনি। তাই দক্ষিণ বিষ্ণুপুর মহাশ্মশানের ঘাটে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে ভাঙা মেলা শুরু হয়। যদিও বাংলায় মেলার ইতিহাসও শ্রী চৈতন্যদেবের সময়কাল থেকেই।

গ্রামবাংলার জীবনযাপনের সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে মেলা জড়িত। আর পুরনো, ভাঙা জিনিসের বিকিকিনির সঙ্গেও বাঙালি বেশ অভ্যস্ত। একসময় বাড়িতে বাড়িতে বাসন বিক্রি করতে আসত। মা-ঠাকুমারা পুরনো শাড়ির বদলে সেই বাসন কিনতেন। এখনও দুপুরের দিকে কান পাতলে শোনা যায়, পাড়ার মোড়ে কেউ ভাঙা কম্পিউটার কিংবা পুরনো হারমোনিয়াম কিনবে বলে হাঁক পাড়ছে। এমন ফেরিওয়ালার দেখা এখনও মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। তাছাড়া পুরনো জিনিস বিকিকিনির দোকান তো এখনও রয়েছে। বাড়িতে খবরের কাগজের স্তূপ হয়ে গেলে কিলো দরে বিক্রি করে দেন অনেকেই। বাঙালির জীবনে ‘ওএলএক্স’, ‘কুইকার’ আসার অনেক আগে থেকেই এসব রয়েছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে মথুরাপুরের ভাঙা মেলা প্রায় দু’শো বছরের পুরনো।

এই গ্রামের মানুষের কাছে ‘ভাঙা মেলা’ কম দামে মূল্যবান জিনিস কেনার জায়গা। আস্ত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, কীবোর্ড, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ, ফ্যান, সাইকেল, সাউন্ড সিস্টেম, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার যাবতীয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় এই ভাঙা মেলায়। এমনকী খাট-বিছানা, তক্তোপোষ, বাটি-ঘটি, বইপত্র, আয়না, আলমারি, ফুলদানি-ধূপদানি, ছুরি-কাঁচি সব কিছু পাওয়া যায় এখানে। অর্থাৎ আপনার দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু প্রয়োজন, সংসারে যা যা দরকার, সব কিছু পাওয়া যায় এখানে। শুধু তফাৎ সেগুলো ভাঙাচোরা এবং পুরনো।