Pitru Paksha: গয়াতেই কেন পিণ্ডদান করা হয়? জেনে নিন পৌরাণিক গুরুত্ব

রামায়ণ অনুসারে, সীতা কুণ্ড নামক স্থানটিতে পিণ্ডদান করেছিলেন মা জানকী। হাত বাড়িয়ে সেই পিণ্ড গ্রহণ করেছিলেন রাজা দশরথ। সাক্ষী ছিল অক্ষয়বট, বহমান ফল্গুনদী, গোমাতা, পুরোহিত তথা ব্রাহ্মণ এবং তুলসী।

Pitru Paksha: গয়াতেই কেন পিণ্ডদান করা হয়? জেনে নিন পৌরাণিক গুরুত্ব
গয়াতেই কেন পিণ্ডদান করা হয়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 26, 2021 | 6:18 AM

সনাতন ধর্মের পবিত্র তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম গয়া । সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পিতৃ-মাতৃ ঋণের শোধার্থে তথা পিতৃপুরুষের পরলোকগত আত্মার শান্তি কামনার জন্য পিন্ডদান করতে গয়াতে যান। ভারতীয় তীর্থগুলির মধ্যে একমাত্র গয়া পারলৌকিক ক্রিয়াভূমি। স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক উভয় মৃত্যুর পরে আত্মার সদগতির জন্য গয়ায় পিণ্ডদান এক মহৎ ও পরম কল্যাণ কর্ম।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনিই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় (ঈশ্বর) লীন হন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে; এবং এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

গয়া মানে চিরকাঙ্খিত চিরবিস্ময় ‘শ্রীবিষ্ণুপাদপদ্ম’। এজন্য গয়াকে বিষ্ণুক্ষেত্রও বলা হয়ে থাকে। সুপ্রাচীন গ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতেও গয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণে বর্ণিত হয়েছে রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ গয়ায় পদার্পন করেছিলেন রাজা দশরথের পিণ্ডদান করার উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে মহাভারতে গয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘গয়াপুরী’ নামে।

গয়াপুরী যার নামে আজও বিখ্যাত, তিনি হলেন গয়াসুর। বায়ুপুরানের গয়া মাহাত্ম্য পাঠ করলেই জানা যায় এই অসুরের মহান আত্মত্যাগের কাহিনি। অসুরকুলের মধ্যে গয়া ছিল মহাবলি ও মহাপরাক্রমশালী। তার শরীর দৈর্ঘ ছিল ১২৫ যোজন স্থুলতা ছিল ৬০ যোজন । তবে তার শরীর যতই বিশাল হোক না কেন, আচরনে তিনি ছিলেন পরম বৈষ্ণব। ভগবান বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন এই গয়াসুর। একটি মত বলছে পিতা ত্রিপুরাসুর এবং মাতা প্রভাবতীর পুত্র ছিলেন গয়া। অন্যমতে গয়া ছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মার সৃষ্টি, অর্থাৎ তার কোন জাগতিক পিতা মাতা নেই। এবং এই কারনে তার মধ্যে কোন আসুরিক প্রবৃত্তিও ছিল না। গয়াসুর ভগবান শ্রীবিষ্ণুর কাছে বর প্রার্থনা করেছিলেন, ‘আমার দেহশিলা স্পর্শমাত্র সুর অসুর, কীটপতঙ্গ, পাপী, ঋষি, মুনি, ভূত প্রেত পিশাচ সবাই পবিত্র হয়ে যেন মুক্তিলাভ করে।’ শ্রীবিষ্ণু তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করেছিলেন। গয়াতে পিণ্ডদান মাত্রই আত্মার মুক্তি ও সদগতি লাভ হয়।

রামায়ণ অনুসারে, সীতা কুণ্ড নামক স্থানটিতে পিণ্ডদান করেছিলেন মা জানকী। হাত বাড়িয়ে সেই পিণ্ড গ্রহণ করেছিলেন রাজা দশরথ। সাক্ষী ছিল অক্ষয়বট, বহমান ফল্গুনদী, গোমাতা, পুরোহিত তথা ব্রাহ্মণ এবং তুলসী। প্রসঙ্গত, এখানেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আপন স্বরূপদর্শন হয় বা অষ্টসাত্ত্বিক লক্ষণ প্রথম প্রকাশিত হয়। এখানেই তাঁর গুরুদেব শ্রীঈশ্বরপুরীর সাথে প্রথম সাক্ষাত হয়। এবং সেখানেই তাঁর দীক্ষালাভ হয়। আবার এখানেই শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় পিতৃপিণ্ডদান করতে গেলে গদাধর স্বপ্নে তাঁর পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করার কথা জানান।

আরও পড়ুন: Pitri Paksha 2021: শ্রাদ্ধে কাকের উপস্থিতি এত গুরুত্ব পায় কেন, জানেন?