Bonedi Barir Durga Puja: বলির মাঠেই হয় কাদা খেলা! ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর ইতিহাস শুনলে চমকে উঠবেন
Bonedi Barir Durga Puja: এই ঘটনার বেশ কয়েক বছর পরে জন্ম হয় তাঁর পুত্র অমৃতহরি ভট্টাচার্যের। সেই বছরেই বাড়িতে দুর্গাপুজোর শুরু করেন দেবীপ্রসন্নবাবু।
দুর্গাপুজোর সঙ্গে দুই বাংলার অদ্ভুত যোগ রয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে আজ আমরা যে মায়ের পুজো করি, অর্থাৎ দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে অসুরদলনী দুর্গা রূপে! সেই রূপের পুজো শুরু হয়েছিল বর্তমানের বাংলাদেশে। রাজা কংসনারায়ণের আমলেই দশভুজার আরাধনা শুরু হয়েছিল। সেই সময়ের শাস্ত্রজ্ঞদের পন্ডিতদের ডেকে তৈরি করা হয়েছিল পুজোর নিয়মবিধি। আজ সারা বঙ্গে সেই রূপেই পূজিত হন দেবী দুর্গা।
অবশ্য এ রাজ্যে দুর্গাপুজোর শুরু মনে করা হয় ১৬০১ সালে। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে। তিনিই প্রথম জাঁকজমকের সঙ্গে শুরু করেন দশভূজার। তবে এই প্রতিবেদন দুর্গাপুজোর ইতিহাস নিয়ে নয়। বরং এমন এক বাড়ির পুজো নিয়ে যেখানে যার ইতিহাস প্রায় ৭০০-৮০০ বছরের পুরনো। এমনকি এই বাড়ির পুজোর সঙ্গে যোগ রয়েছে দুই বাংলার।
বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের বাসিন্দা রাঘবেন্দ্র ভট্টাচার্য। পণ্ডিত ব্যাক্তি ছিলেন। তাঁর হাতেই প্রতিষ্ঠা পায় কৃষ্ণনগরের ভট্টাচার্য বংশ। শোনা যায় একবার তিনি নদীর তীরে বসে গাছের তলায় ধ্যান করছিলেন। সেই সময় নৌকা বিহারে বেড়িয়েছিলেন নদীয়ার তৎকালীন রাজা। এমন সময় রাজার নজরে পড়েন ধ্যানমগ্ন রাঘবেন্দ্র। তাঁকে দেখেই তাঁর সঙ্গে কথা বলার বাসনা হয় নদীয়ার রাজার। ধ্যান শেষ হলে রাঘবেন্দ্রর সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হন রাজা। তাঁর পাণ্ডিত্য দেখে নিজের রাজত্বের মধ্যে একটি টোল খোলার অনুরোধ করেন রাজা। সেই অনুরোধ রক্ষার্থে বাংলাদেশ ছেড়ে সপরিবারে কৃষ্ণনগরে চলে আসেন রাঘবেন্দ্র। রাজা মশাই তাঁকে থাকার জন্য বিল্ব পুষ্পরানি গ্রামটি লিখে দেন। এরপর সেই গ্রামে রাঘবেন্দ্র একে নাপিত, কুমোর, ছুতোর, ও আরও সব জীবিকার পরিবারকে নিয়ে এসে বসতি গড়ে তোলেন। খোলেন একটি টোলও।
এবার আসি দুর্গাপুজোর গল্পে। তখনকার বিল্ব পুষ্পরানি গ্রাম আজকের বেলপুকুর নামে পরিচিত। ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজোর শুরু হয় দেবীপ্রসন্ন ভট্টাচার্যর আমলে। বংশের পরম্পরা মেনেই তিনিও ছিলেন পণ্ডিত ব্যাক্তি। কেবল পণ্ডিত নয়, সমাজের কুসংস্কার মুক্ত ছিলেন তিনি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রথম সমাজের বেড়াজাল টপকে বিধবা বিবাহের প্রচলন করেন। সব ব্যবস্থা হলেও সেই বিয়েতে পৌরহিত্য করার জন্য কোনও পুরোহিত রাজি ছিলেন না। সেই সময় এগিয়ে আসেন কৃষ্ণনগরের বেলপুকুর গ্রামের দেবীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। বিধবা বিবাহের পৌরহিত্য করেন তিনি। এই ঘটনার বেশ কয়েক বছর পরে জন্ম হয় তাঁর পুত্র অমৃতহরি ভট্টাচার্যের। সেই বছরেই বাড়িতে দুর্গাপুজোর শুরু করেন দেবীপ্রসন্নবাবু। দেখতে এই পুজো বয়স হল প্রায় ১৪০ বছর।
ভট্টাচার্য পরিবার সেই প্রাচীনকাল থেকেই পণ্ডতিদের বংশ। যুগে যুগে টোলে পড়িয়ে আর পুজো অর্চনা করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন তাঁরা। ভট্টাচার্য বাড়িতে রয়েছে প্রাচীন দুটি শিব লিঙ্গ। শোনা যায় এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা দেবীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য গ্রামের এক বেল গাছের তলায় পান একটি শিব লিঙ্গ। অপর শিব লিঙ্গটি প্রতিষ্ঠা করেন দেবীপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের চতুর্থ সন্তান নিত্যহরি ভট্টাচার্য। শোনা যায়, কাশী থেকে দ্বিতীয় শিবলিঙ্গটি নিয়ে আসেন তিনি। প্রতি মাসে ঘটা করে কালী পুজোর প্রচলন আছে এখানে। যদিও ঠিক কবে এই কালী পুজোর শুরু হয়েছিল তা ঠিক বলতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মতে অন্তত ৩০০-৩৫০ বছরের পুরনো।
ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোতেও আছে চমক। বাড়ির এক সদস্যা জানান বেলপুকুর গ্রামে এখনও সর্বজনীন বা বারোয়ারি পুজোর চল নেই। গ্রামে ৬-৭ টা পুজো হয়। তাঁর মধ্যে ৫টি পুজোই ভট্টাচার্য পরিবারের শরিকরা করে থাকেন। অনান্য সব বাড়ির পুজোতে এখনও রয়েছে পশুবলির চল।
এই পুজোর সবচেয়ে বড় চমক হল কাদা খেলা। আগে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোয় প্রচলিত ছিল বলিপ্রথার। নবমীর দিন বলি শেষে হাড়িকাঠ তুলে, সেই মাঠে জল ঢেলে হত কাদা খেলা। তবে এখন আর বলি হয় না। তা সম্পূর্ণ বন্ধ। কিন্তু সেই মাঠে কাদা খেলার চল আছে আজও। বাড়ির সকল সদস্যরা মেতে ওঠেন এই খেলায়। এরপর দশমীর দিন প্রথা মেনেই হয় বিসর্জন।