Rath Yatra 2022: পুরীর জগন্নাথ আসলে কে? সমুদ্রে ভেসে আসা কাঠের টুকরোয় গড়া মূর্তি অসম্পূর্ণ কেন?
Puri Jaganath Temple: এই পবিত্র উৎসবটি প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট সময়ে উদযাপিত হয়ে থাকে। রথের নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের (Lord Krishna) নাম।
বিশ্বকবি যে রথযাত্রার (Rath Yatra 2022) কথা কবিতায় লিখেছেন, সে রথযাত্রার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাসে আছে কল্পকাহিনী আর পুরাণের মিশেল, আছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর আচার-প্রথার বর্ণনা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রথ শব্দের অর্থ কিন্তু ভিন্ন। গুরুত্ব এবং শ্রদ্ধার দিক থেকেও বেশ উপরে। তাদের কাছে রথ একটি কাঠের তৈরি যান, যাতে চড়ে স্বয়ং ভগবান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। ভগবানের এই রথারোহণই ‘রথ যাত্রা’ (Rath Yatra)নামে পরিচিত। এই পবিত্র উৎসবটি প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট সময়ে উদযাপিত হয়ে থাকে।
রথের নানা কাহিনি প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের (Lord Krishna) নাম। জগন্নাথ (Jaganath) এবং বিষ্ণু, শ্রী কৃষ্ণেরই দুই রূপ। বলরাম বা বলভদ্র, শ্রী কৃষ্ণ বা জগন্নাথ এবং সুভদ্রাদেবী এই তিনজন একে অপরের ভাইবোন। পুরাণে এমনটা বর্ণিত যে, তাদের তিন ভাইবোনের ঘনিষ্ঠ এবং স্নেহপরায়ণ সম্পর্কের জন্যই তাঁরা পূজনীয়।
লোকমুখে শোনা যায়, পদ্মপুরাণ এর বর্ণনায় পাওয়া যায় এই রাজার হাত ধরে রথযাত্রার ইতিহাস। তখন সত্যযুগ, মালবদেশ এর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন শ্রী হরি তথা বিষ্ণু ভক্ত। তিনি গড়ে তুলেছিলেন জগন্নাথধাম তথা শ্রীক্ষেত্র নামের পবিত্র মন্দির। কিন্তু মন্দিরে ছিল না কোনও বিগ্রহ। একদিন এক সন্যাসীর আগমন ঘটে রাজপ্রাসাদে। শ্রী কৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তাঁর মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। রাজা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সেই স্থানে গিয়ে দেখতে পেলেন এক খন্ড কাঠের টুকরা। হাতি-সৈন্য এনেও সেই কাঠ নড়ানো গেল না। তখন শ্রী হরির সপ্নাদেশে খবর পাঠানো হল শবররাজ বিশ্ববসুকে। তিনি আসার পর বিদ্যাপতি , রাজা ও বিশ্ববসু এই তিনজনে মিলে সেই কাঠের টুকরো নিয়ে যান রাজার প্রাসাদে। ঠিক তখন এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন।
তিনি রাজার কাছে মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন এবং জানিয়ে দেন, নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। দরজার আড়ালে কাষ্ঠমূর্তি নির্মাণ শুরু হয়। রাজা-রানীসহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন ভেতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ শুনতে। কিছুদিন বাদে রাজা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রানী কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন তারা দেখেন মূর্তি অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা।
বিমর্ষ হয়ে পরেন রাজা। কিন্তু ভক্তের কষ্ট ভগবান সইবেন কেন। সে রাত্রেই রাজাকে আবার স্বপ্নে দেখা দিলেন। তাকে বললেন তিনি এই রুপেই পূজিত হবেন। তার নিজস্ব কোনও আকার বা আকৃ্তি নেই । ভক্তেরা যে রূপ কল্পনা করে তার আরাধনা করেন তিনি তার কাছে ঠিক তেমনই। তিনি রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন কে বললেন এই অসম্পূর্ণ অবস্থায়ই তিনি পূজো গ্রহণ করবেন এবং তাকে পুরুষোত্তম ধামে স্থাপণ করা হয় যেন এবং সেখানেই তিনি পুজো গ্রহন করবেন।
তখন দেবর্ষি নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তিই পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ। তিনি এমন রূপই চেয়েছিলেন। তার লৌকিক হস্ত নাই, অথচ তিনি সকল দ্রব্য গ্রহণ করেন। তার পদ নাই, অথচ সর্বত্রই চলেন। তার চোখ নাই, অথচ সবই দেখেন। কান নাই, কিন্তু সবই শোনেন। তাকে জানা কঠিন, তিনি জগতের আদিপুরুষ। এই বামনদেবই বিশ্বাত্মা, তার রূপ নেই, আকার নেই। উপনিষদের এই বর্ণনার প্রতীক রূপই হল পুরীর জগন্নাথদেব। তার পুরো বিগ্রহ তৈরি করা সম্ভব হয়নি, কারণ তার রূপ তৈরিতে মানুষ অক্ষম। জগন্নাথ মন্দিরে প্রান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। এভাবেই জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব ঘটে।