কথায় কথায় পুরাণ নিয়ে তর্কের ফোয়ারা তোলেন, জানেন পুরাণের পাঁচ লক্ষণ কী কী?

পুরাকালের সৃষ্টি, ধর্ম, আচার, ধর্ম, প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনার সংকলনকে সাধারন ভাষায় পুরাণ বলে।

কথায় কথায় পুরাণ নিয়ে তর্কের ফোয়ারা তোলেন, জানেন পুরাণের পাঁচ লক্ষণ কী কী?
ছবিটি প্রতীকী
Follow Us:
| Updated on: Sep 04, 2021 | 6:12 AM

ধর্মীয় জীবন ও পুরাণগুলি যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। শৈব এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রধান গ্রন্থ হল পুরাণ। “মার্কণ্ডেয়” পুরাণের অন্তর্গত “চণ্ডী” নামক দেবীমাহাত্ম্য হিন্দুধর্মের অতি পরিচিত ধর্মগ্রন্থ। ভারতীয় ধর্ম,সমাজ ও সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে পুরাণগুলি থেকে মূল্যবান উপাদান সংগ্রহ করে অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে।

পুরাণ বলতে কি বোঝেন ?

পুরাণ শব্দের অর্থ হল প্রাচীন কথা। শাস্ত্রে আছে -“যস্মাৎ পুরাহি আসীৎ ইদং তৎ পুরাণম্” অর্থাৎ ,যেখানে প্রাচীন কথা বর্ণিত হয়েছে তাই পুরাণ। পুরাকালের সৃষ্টি, ধর্ম, আচার, ধর্ম, প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনার সংকলনকে সাধারন ভাষায় পুরাণ বলে।

পুরাণের রচয়িতা কে ?

পুরাণের রচয়িতা হলেন মহর্ষি বেদব্যাস ।

পুরাণ সাহিত্য কয় ভাগে বিভক্ত ও কি কি ?

“পুরাণ” সাহিত্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- ১) মহাপুরাণ এবং ২) উপপুরাণ। তবে বর্তমান পুরাণ সাহিত্যে প্রধান পুরাণ বলতে মহাপুরাণকেই বোঝায়।

মহাপুরাণ কী?

অষ্টাদশ পুরাণের নামগুলি হল -১) ব্রহ্ম, ২)পদ্ম, ৩) বিষ্ণু, ৪) শিব, ৫) ভাগবত, ৬) নারদীয়, ৭) মার্কন্ডেয়,৮) অগ্নি, ৯) ভবিষ্য, ১০) ব্রহ্মবৈবর্ত, ১১) লিঙ্গ, ১২) বরাহ, ১৩) স্কন্দ, ১৪) বামন,১৫) কূর্ম, ১৬) মৎস্য, ১৭) গরুড় এবং ১৮) ব্রহ্মান্ড। মহাভারতের স্বর্গারোহন পর্বে এবং হরিবংশে এই অষ্টাদশ পুরাণের উল্লেখ আছে।

পুরাণের লক্ষণ:

“সর্গশ্চ প্রতি সর্গশ্চ বংশো মন্বন্তরানি চ বংশানুচরিতঞ্চৈব পুরাণং পঞ্চলক্ষণম্।।”

পুরাণের পাঁচটি লক্ষণ হল,

সর্গ – প্রথম সৃষ্টি। প্রতিসর্গ – সৃষ্টির পর আবার সৃষ্টি। বংশ – দেবতা ও ঋষিদের বংশপরিচয়। মন্বন্তর – মনুদের রাজত্বকাল এবং বংশানুচরিত – বিভিন্ন প্রাচীন রাজাদের বংশাবলীর পরিচয়।

পুরাণের বৈশিষ্ট্য:

পুরানগুলি সৃষ্টি, প্রলয়ের পর নতুন সৃষ্টি, ঋষি ও দেবগনের বংশাবলী, মনুদের রাজত্বকাল এবং প্রাচীন রাজবংশাবলীর ইতিহাস নিয়ে রচিত হয়েছিল। এছাড়াও দানধর্মবিধি, শ্রাদ্ধকল্প, বর্ণাশ্রমবিভাগ, ইষ্টাপূর্ত ও দেবপ্রতিষ্টা প্রভৃতি বিষয়গুলির কথাও পুরাণগুলিতে আলোচিত হয়েছে। ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতিষ, শারীরবিদ্যা, ব্যাকরণ, চিকিৎসাশাস্ত্র, অস্ত্রবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনাও পুরাণগুলিতে স্থান পেয়েছে। পুরাণগুলিতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর-এই তিনজন দেবতার উপসনাই প্রাধান্য পেয়েছে। পুরানগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- এক একটি পুরাণে একটি বিশেষ দেবতার উপস্থিতি দেখা যায়। কোনো কোনো পুরাণে দর্শন, অলংকার, ব্যাকরণ, ছন্দ ও ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

পুরাণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

পুরাণগুলির ঐতিহাসিক মূল্য অবিস্মরণীয়। প্রাচীনকাল থেকে অযোধ্যার রাজা পরীক্ষিতের রাজ্যাভিষেক পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস জানতে হলে পুরানগুলিই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। পুরাণগুলিতে প্রাচীন ভারতবর্ষের যে সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় অন্য কোথাও তার সন্ধান মেলে না। দেবতা, ঋষি ও মহানরাজাদের বংশপরিচয় ও তাদের কর্ম সম্বন্ধে সঠিক বিবরন সংরক্ষণ করে রাখাই ছিল পুরাণ সাহিত্যের উদ্দেশ্য। প্রাচীন রাজাদের মধ্যে শিশুনাগ, নন্দ, মৌর্য, শুঙ্গ ও গুপ্তযুগের বিভিন্ন কাহিনী পুরাণগুলিতে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও বিম্বিসার, অজাতশত্রু, চন্দ্রগুপ্ত প্রভৃতি রাজাদের ইতিহাসেও পুরাণসাহিত্যে স্থান পেয়েছে।সুতরাং, ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনায় পুরাণগুলির অবদান অনস্বীকার্য ।

তথ্য সুত্র – Modernsanskrit.In

আরও পড়ুন: September 2021 festival calendar: গণেশ চতুর্থী থেকে বিশ্বকর্মা পুজো, হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই মাসের পুজোর তালিকা জানুন