Chetan Sakariya: স্বপ্ন, লড়াই ফেরাবে চেতনকে? একসময় ক্রিকেট খেলার জুতো কেনার টাকাও ছিল না…
IPL 2025, KKR: ছোটা চেতন এখন বড় হয়েছেন। কিন্তু লড়াই আর স্বপ্নের আঁধার থেকে বেরিয়ে আসেননি। নাইট শিবিরে সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনছেন চেতন সাকারিয়া।

অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল আয়ের কারণে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে ইন্ডিয়ান মানি লিগও বলা হয়। প্রতি বছরই নিলামে কোন প্লেয়ার কত দাম পেল, সবচেয়ে বেশি দাম কার, কাকে প্রয়োজনের থেকে বেশি দাম দেওয়া হল, আলোচনার অন্ত নেই। এত চর্চার কারণও তো আছে। এই লিগ যে লহমায় পাল্টে দেয় ক্রিকেটারের ভূত-ভবিষ্যৎ। দারিদ্রে জন্ম নেওয়া অনেকেই আইপিএলের দৌলতে বড় তারকা হয়ে উঠেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া, জিশান আনসারির মতো অনেক নাম। এঁদের জীবন বদলে দিয়েছে আইপিএল। তাঁদের একজন ছিলেন চেতন সাকারিয়া (Chetan Sakariya)। বাবা টেম্পো চালক। চেতনের একসময় ক্রিকেট খেলার জুতো কেনার টাকাও ছিল না। ভাইয়ের মৃত্যু, করোনায় বাবার মৃত্যুতে জীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে চেতনের। তবু হাল ছাড়েননি।
গুজরাটের ছোট এক শহর ভার্তেজের বাসিন্দা চেতন। বাবা-মায়ের থেকে খুব বেশি সমর্থন পাননি। তাঁর বাবা-মা বিশ্বাস করতেন যে একটি সরকারি চাকরি পেলে ছেলের জীবনে সফলতা আসবে। কিন্তু তাঁর মামা তাঁর স্বপ্নের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর মামা মনসুখ ভাই, জামনগরে একটি স্টেশনারি দোকান চালান। তিনিই চেতনকে ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সাকারিয়ার পাশে বরাবর ছিল তাঁর মামা। যখনই তিনি বিপদে পড়তেন, তাঁর কাকা সবসময় তাঁর পাশে দাঁড়াতেন। তিনি স্যার ভাবসিংজি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রাজেন্দ্র গোহিলের কোচিংয়ে বড় হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ব্যাটিং পছন্দ ছিল চেতনের, কিন্তু পরে একজন বাঁ-হাতি ফার্স্ট বোলার হয়ে ওঠেন তিনি। এই সময়ে তিনি তাঁর মামার স্টেশনারি দোকানেও কাজ করতে থাকেন। সাকারিয়া খুব তাড়াতাড়িই সৌরাষ্ট্র অনূর্ধ্ব-১৬ দলে জায়গা করে নেয়। চেতন জানতেন না দ্রুত বোলিং শরীরের উপর কতটা চাপ সৃষ্টি করে। তাই তিনি লোয়ার ব্যাকের আঘাত উপেক্ষা করেছিলেন। এতে তাঁর আঘাত আরও বেড়ে যায়। এবং তাঁকে পরের পুরো বছর দলের বাইরে থাকতে হয়েছিল।
সাকারিয়ার আসল সুযোগ আসে যখন তাঁকে কোচবিহার ট্রফি খেলার জন্য সৌরাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে নেওয়া হয়। তিনি ৬ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন। প্রচুর পরিশ্রম করে সাকারিয়া ২০১৮-১৯ মরসুমের জন্য সৌরাষ্ট্র দলে জায়গা করে নেন। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে খেলার সুযোগ পাননি। বিজয় হাজারে ট্রফিতে তিনি মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। তখন সিনিয়র ফাস্ট বোলার জয়দেব উনাদকাট চোটে ছিটকে যান। সাকারিয়া পেয়ে যান রঞ্জিতে খেলার সুযোগ।
সাকারিয়া এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন। ৮ ম্যাচে ২৯ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরে তাঁর স্ট্রেস ফ্র্যাকচার হয়। কিছুদিন দলের বাইরে ছিলেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যান। সাকারিয়ার জন্য সংগ্রাম নতুন কিছু ছিল না। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। একটা সময় তার কাছে ক্রিকেট জুতো কেনার পয়সাও ছিল না। এমআরএফ পেস একাডেমিতে যোগদানের ঠিক আগে, সৌরাষ্ট্রের সিনিয়র খেলোয়াড় শেলডন জ্যাকসন তাঁকে একজোড়া জুতো উপহার দিয়েছিলেন। তিনি জানান, চিরকাল এই উপহারের জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন।
চেতনের বাবা ছিলেন একজন টেম্পো চালক। অসুস্থতার কারণে তাঁকে এই কাজও ছাড়তে হয়েছিল। সাকারিয়া পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য হয়ে ওঠেন। ২০২১ সালের আইপিএল নিলামে, রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে ১.২ কোটি টাকায় কিনেছিল। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর ছোট ভাই আত্মহত্যা করেছিল। এই ট্র্যাজেডি কাটিয়ে, সাকারিয়া আইপিএলে ভালো পারফর্ম করেছেন। তিনি ১৪ ম্যাচে ১৪ উইকেটও নিয়েছিলেন। সাকারিয়ার সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আইপিএল শেষে তাঁর বাবাও করোনায় মারা যান। এত সব প্রতিকূলতার মধ্যেও, সাকারিয়া ক্রিকেটে নিজের ছাপ রেখেছেন। এরপর ২০২২ সালের আইপিএল নিলামে দিল্লি ক্যাপিটালস তাঁকে ৪.২ কোটি টাকায় কিনেছিল।
চলতি মরসুমের নিলামে প্রথমে অবিক্রিত থাকলেও উমরান মালিকের চোট কলকাতা নাইট রাইডার্সে জায়গা করে দেয়। ছোট থেকেই লড়াই শব্দটার সঙ্গে পরিচিত। ছোট থেকেই স্বপ্নবিসালী। ছোটা চেতন এখন বড় হয়েছেন। কিন্তু লড়াই আর স্বপ্নের আঁধার থেকে বেরিয়ে আসেননি। নাইট শিবিরে সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনছেন চেতন সাকারিয়া।
