T20 World Cup 2021: প্রথম ছটা বল কিন্তু আমার পুরো গল্প বলবে না: মিচেল মার্শ

ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল, ফিঞ্চ, মিচেল--- অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার উপুড় করে দিয়ে নতুন ইতিহাস লিখে ফেললেন। ওয়ান ডে, টেস্ট ক্রিকেটের পর টি-টোয়েন্টিতে অজি আধিপত্যের নতুন ইতিহাস শুরু হল!

T20 World Cup 2021: প্রথম ছটা বল কিন্তু আমার পুরো গল্প বলবে না: মিচেল মার্শ
মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার জুটি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 15, 2021 | 12:14 AM

সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। ১৫ বছরের অপেক্ষার অবসান হল বলে! প্রথম বার অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল বলে! আর সেই জয়ে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য! ৫০ বলে নট আউট ৭৭ রানের ইনিংসটা বিশ্বকাপের মতো মূল্যবান সারা দেশের কাছে। ক্যাপ্টেন অ্যারন ফিঞ্চের উইকেট হারিয়ে যখন প্রবল চাপে টিম, তিন নম্বরে নেমে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেললেন মিচেল মার্শ (Mitchell Marsh)। তাঁর দুরন্ত ব্যাটিং দেখতে দেখতে মোহিত হয়ে গিয়েছে ক্রিকেটমহল।

আর তিনি? ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না ব্যাখ্যা করার। ম্যাচের নায়ক বলে গেলেন, “সত্যিই আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না!’ তৃপ্তি যেন চুঁইয়ে চুইঁয়ে পড়ছিল তাঁর হলুদ রংয়ের জার্সি থেকে। চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে দারুণ সফল তিনি। আর তাই বোধহয় বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চ বেছে নিয়েছিলেন চিরকালীন ইতিহাসে থেকে যাওয়ার জন্য। মিচেল বলছেন, ‘দুরন্ত ছ’টা সপ্তাহ কাটালাম টিমের সঙ্গে। ভাবতেই পারছি না যে, আমরা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।”

বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেই প্রথম তিন নম্বরে ব্যাট করতে শুরু করেন। মিচেল বলছেন, “এক কোচিং স্টাফ এসে বলেছিলেন, এই ম্যাচে তো বটেই, বাকি বিশ্বকাপেও তুমি তিন নম্বরে ব্যাট করবে। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। ওই কোচিং স্টাফকে বলেছিলাম, আমাকে টপ অর্ডারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”

প্রথম ৬ বলে একটু নড়বড়ে দেখাচ্ছিল মিচেল মার্শকে। তারপর আর কোনও জড়তা ছিল না তাঁর ব্যাটিংয়ে। নিউজিল্যান্ড বোলাররা তাঁকে কোনও অস্ত্রেই থামাতে পারেননি। মিচেলও হাসতে হাসতে বললেন, “প্রথম ৬টা বল দিয়ে কিন্তু পুরো গল্প শোনানো যাবে না! আসলে আমি মাঠে থাকতে চেয়েছিলাম। যাতে লড়াই করতে পারি। নিজের খেলাটা খেলতে পারি। আর সেটাই করে দেখাতে পেরেছি।”

কিউয়ি বধ করে টি-২০ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া (Australia)। পাঁচ বারের ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এই প্রথম বার টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) জয়ের স্বাদ পেল। দুবাইতে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মিচেল মার্শ-ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে ভর করে নিউজিল্যান্ডকে হারাল অস্ট্রেলিয়া।

কিউয়িদের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচে অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮ বলে ৫৩ রান। আইপিএলে দল থেকে বাদ পড়ার পর বিশ্বকাপে তাঁর ব্যাট কিন্তু নানা ম্যাচে জ্বলে উঠেছে। আর যার সুবাদে টুর্নামেন্টের সেরার পুরস্কার পেলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ম্যাচের শেষে ওয়ার্নার বলেন, “আমি সবসময়ই ভালো অনুভব করেছি, দুটো অনুশীলন ম্যাচের মাঝে খুব একটা সময় পাননি। আমার জন্য এটি বেসিক বিষয়গুলিতে ফিরে যাওয়ার মতো ছিল। নিশ্চিতভাবে ২০১৫-র বিশ্বকাপ দলে থেকে এক দশক আগে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে সত্যিই কষ্ট পেয়েছিলাম। এই ছেলেরা বিশ্বজুড়ে দুর্দান্ত খেলছে। সাপোর্ট স্টাফরাও অসাধারণ কাজ করেছে। সকলের সমর্থন নিয়েই কাপ জিতে বাড়ি ফিরতে চলেছি আমরা। ফাইনালে বরাবরের মতো চারপাশজুড়ে কিছুটা স্নায়ুর চাপ ছিল কিন্তু ছেলেদের ডেলিভারিগুলো দারুণ ছিল।”

৭ বল বাকি থাকতেই চার মেরে দলকে জেতান ম্যাক্সি। ১৮ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকা অজি তারকা ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বলেন, “এটা নিখুঁত ছিল, আমি তরতাজা ছিলাম এবং বলগুলো সত্যিই ভালোভাবে মারতে পারছিলাম। জয়ের জন্য শেষ রানটা তুলতে পেরে ভালোই লাগছিল। জাম্পা এই ফর্ম্যাটে এবং ওয়ানডে তে একজন সুপারস্টার। এবং আমি ওকে যে খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে উঠতে দেখেছি তা দেখে আমি আনন্দ বোধ করি। ওকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ওর দারুণ প্রতিভা দিয়ে খেলতে দেখা একটি আনন্দের বিষয়। ও ভালো ফিল্ডিংও করেছে, এবং লেগ স্পিনার হিসাবে গত তিন বছরে বিশ্বে এর চেয়ে ভালো কিছু হয়নি।”

ফাইনাল ম্যাচে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি স্টিভ স্মিথকে। তবে ম্যাচের শেষে স্মিথ বলেন, “এই জয়টার গুরুত্ব অনেক। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং এখানে ছেলেদের সঙ্গে থাকা এবং ট্রফি বাড়িতে নিয়ে যাওয়াটা সম্মানের। ওয়ার্নারের গত দুই সপ্তাহ দারুণ কেটেছে। অনেকে ওকে লেখালেখি করছিল। ও একটা আলাদা প্ল্যান ছকে নিয়ে এসেছিল এবং শুরু থেকেই সেভাবেই খেলাটাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”

প্রথম বার টি-২০ বিশ্বকাপ জিতে অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বলেন, “এই অনুভূতিটা বিশাল। প্রথম বার অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হতে পারল। আমরা ভীষণ গর্বিত। আমরা জানতাম আমাদের পিঠ দেয়ালের উল্টোদিকে ঠেকে ছিল। আমাদের ব্যক্তিগত কিছু দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল, কিছু দুর্দান্ত দলগত পারফরম্যান্স ছিল। যার জন্যই এই জয়টা অর্জন করতে পারলাম আমরা।”

এ বার টুর্নামেন্ট জিতলে প্রথম বার টি-২০ বিশ্বকাপ জেতা হত কিউয়িদেরও। তবে সে সুযোগ দিলেন না ওয়ার্নার-মার্শরা। ম্যাচের শেষে নিউজিল্যান্ডের ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন বলেন, “দুবাইয়ের পিচে পার্টনারশিপ তৈরি করাটা কিছুটা কঠিন এবং আমরা যা ভেবেছিলাম সেই রকম একটা টার্গেট দিতে পেরে ভালো লেগেছিল। তবে উইকেট বেশ মন্থর ছিল। শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া দুর্দান্তভাবে তাড়া করে গেল। ওরা দুর্দান্ত। আমরা অবশ্যই সব কিছু উজাড় করে চেষ্টা করেছি। ছেলেরা নিজেদের পরিকল্পনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। ওরা আসলে এক ইঞ্চিও জায়গা দেয়নি। আমাদের দলের সকলের চেষ্টার জন্য আমি সত্যিই গর্বিত। আনরা ফাইনালে এসে আমাদের সেরাটা দিয়েছিলা,ম কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। অস্ট্রেলিয়াকে শুভেচ্ছা। আজ তারা সত্যিই দারুণ খেলা দেখিয়েছে। খেলার সঙ্গে সব সময় উচ্চ আশা জুড়ে থাকে। হার এবং জিত এই দুটিই থাকে সম্ভাব্য ফলাফল।”

ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল, ফিঞ্চ, মিচেল— অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার উপুড় করে দিয়ে নতুন ইতিহাস লিখে ফেললেন। ওয়ান ডে, টেস্ট ক্রিকেটের পর টি-টোয়েন্টিতে অজি আধিপত্যের নতুন ইতিহাস শুরু হল!