Brazil’s Yellow Jersey: হলুদ নয়, ছিল সাদা; কীভাবে বদলে গেল ব্রাজিলের জার্সির রং?
পেলে, গ্যারিঞ্চা, সক্রেটিস, জিকো, রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহোর মতো ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা ফুটবলাররা হলুদ জার্সিতে মাঠ মাতিয়েছেন। সেই লেগ্যাসি বইছেন নেইমাররা।

সেই ১৯৩০ সাল থেকে প্রতি চারবছর অন্তর হয়ে আসছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ। ফুটবল বিশ্বকাপের এই দীর্ঘ ইতিহাসে ভেঙে গিয়েছে কতশত রেকর্ড। একইসঙ্গে ফুটবলারদের পায়ে পায়ে তৈরি হয়েছে নতুন নজির। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন নাটকীয় পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। ফুটবলের এই মেগা প্রতিযোগিতাকে ঘিরে গল্পগাছার অন্ত নেই। অনেকেই সেই গল্প শুনে থাকবেন। আবার অনেকের কাছে অজানা। কাতার বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়ছে। এই ফাঁকে বিশ্বকাপের অতীতের কিছু তথ্য ফুটবলপ্রেমীদের জন্য় তুলে ধরল TV9 Bangla।
হলুদ রঙা জার্সির বাঁদিকে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের ব্যাজ। তার উপরে সবুজ রঙের ছোট ছোট পাঁচটি তারা। ব্রাজিলের মানুষের গর্বের প্রতীক। পাঁচ বারের ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী দল তাঁদের হলুদ জার্সি নিয়ে গর্ব করে থাকেন। শুধু লাতিন আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বের ফুটবলের পরাশক্তি ব্রাজিলের হলুদ জার্সি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। ফিফা বিশ্বকাপের সময় জার্সির বিক্রি বেড়ে যায় বহুগুণ। পেলে, গ্যারিঞ্চা, সক্রেটিস, জিকো, রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহোর মতো ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা ফুটবলাররা এই হলুদ জার্সিতে মাঠ মাতিয়েছেন। সেই ঐতিহ্য় বয়ে চলেছেন নেইমাররা। পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ীরা এই হলুদ রঙটিকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য পর্যায়ে। বিশ্বের অন্যান্য ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলিকে যেখানে পৌঁছনোর স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু জানেন কি, ব্রাজিলের জাতীয় ফুটবল দলের জার্সির রং প্রথম থেকে হলুদ ছিল না! ব্রাজিল ফুটবলের বড় ভক্ত হলে, লাতিন আমেরিকার ফুটবল জায়ান্টদের জার্সির রঙের বিবর্তনের ইতিহাস আপনার জেনে রাখা উচিত।
১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় ব্রাজিলের। তখন নেইমারদের পূর্বসূরীরা সাদা রঙের জার্সি গায়ে মাঠে নামতেন। কলার দেওয়া সাদা জার্সির গলা ও হাতার শেষপ্রান্ত রাঙানো ছিল নীল রঙে। সেই জার্সি পরে ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকা খেতাব জেতে ব্রাজিলিয়ানরা। লাতিন আমেরিকার ফুটবল জায়ান্টদের গৌরবময় ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৯১৯ সালের কোপা আমেরিকা খেতাব দিয়ে। ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপ থেকে সাদা জার্সি গায়ে চড়িয়ে খেলেছে ব্রাজিল। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ানরা ফুটবল বিশ্বকাপ খেলেছে সাদা জার্সি গায়ে। তারপরই জার্সিবদল (রং)। ব্রাজিলের জাতীয় ফুটবল দলের সাদা জার্সি কেন হলুদ রঙে পরিণত হল, তার পিছনেও রয়েছে লম্বা ইতিহাস।

এই জার্সি পরে প্রথম বিশ্বকাপ জয় ব্রাজিলের
ব্রাজিলের সাদা থেকে হলুদে ডুবে যাওয়ার পিছনে ছিল মারাকানাজো বা মারাকানা ট্র্যাজেডি। ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথম থেকে অংশ নিলেও খুব একটা সুবিধে করতে পারেনি। ১৯৩০ সালে গ্রুপ স্টেজ, ১৯৩৪-এ প্রথম রাউন্ড এবং তার পরের বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থানে শেষ করে ব্রাজিল। এরপর ১৯৫০ সাল। ব্রাজিল বনাম উরুগুয়ে ম্যাচ। ফাইনাল ম্যাচ বলে কিছু ছিল না। যে দল বেশি পয়েন্ট নিয়ে শেষ করবে তারাই বিজয়ী। ১৬ জুলাই মারাকানায় ব্রাজিল বনাম উরুগুয়ে ম্যাচটিই ছিল কার্যত ফাইনাল। ঘরের মাঠে জুলে রিমে ট্রফি জয়ের স্বপ্নে বিভোর সারা ব্রাজিল। মারাকানা সেদিন কানায় কানায় পূর্ণ। অফিশিয়াল রেকর্ডে দর্শক সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৪ জন। বেসরকারি হিসেব বলছে, দু লক্ষ মানুষে ঠাসা ছিল রিও ডি জেনেইরোর স্টেডিয়াম। মারাকানার দর্শকদের উদ্বেল করে ৪৭ মিনিটে ফ্রিয়াসার গোলে এগিয়ে যায় আয়োজকরা। শুরু হয়ে যায় বিজয়োৎসব। ৬৬ মিনিটে শিয়াফিনোর গোলে উরুগুয়ে সমতায় ফিরলেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট যে ব্রাজিলের মাথাতেই উঠবে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না ব্রাজিলিয়ানদের। কারণ ড্র করলেও বিশ্বকাপের ট্রফি উঠত আয়োজকদের হাতেই। মারাকানার দু লাখ দর্শকের কাছে সেদিন কী যন্ত্রণা অপেক্ষা করছে তা বোঝা গেল ৭৯ মিনিটে। উরুগুয়ের ঘিঘিয়ার গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় উরুগুয়ে। গোটা স্টেডিয়ামে যেন পিনপতন নীরবতা। বাকি সময়ে বহু চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে পারেনি সেলেকাওরা। ব্রাজিলিয়ানদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে জুলে রিমে ট্রফি নিয়ে যায় উরুগুয়ে।

ব্রাজিলিয়ানদের গর্ব হলুদ জার্সি
হারের যন্ত্রণা সঙ্গে সে দিন মিশেছিল মৃত্যুর হাহাকার। মারাকানার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন এক ফুটবলপ্রেমী। শোনা যায়, হার সহ্য না করতে পেরে বেশ কয়েকজনের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপের সেই হার, পাঁচ পাঁচটি বিশ্বকাপ জিতলেও ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারেনি। ভিলেন বনে যান জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা। একে একে অবসর নিতে থাকেন তাঁরা। একসময় তাঁদের রাগ গিয়ে পড়ে জার্সির উপর। ব্রাজিলিয়ানদের মনে হয়েছিল, যত নষ্টের গোড়া ওই সাদা জার্সি। সাদা রঙ ব্রাজিলিয়ানদের আবেগকে ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারে না। কেউ কেউ জার্সিকে অপয়া বলে দেগে দেন। দেশবাসীর ইচ্ছের মর্যাদা দিয়ে জার্সির রঙ বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় সে দেশের ফুটবল ফেডারেশন।
শুরু হয় ব্রাজিলের জার্সি ডিজাইনের প্রতিযোগিতা। এক তরুণের ডিজাইন করা জার্সিতে ব্রাজিলের পতাকা তিনটি রঙ ছিল বর্তমান। নীল, হলুদ ও সবুজ। মূল জার্সির রঙ হলুদ, কলারে সবুজ রং ও নীল রঙের প্যান্ট। সাদা থেকে হলুদ—নয়া জার্সি পরে ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ খেলতে নামে ব্রাজিল। জার্সি বদল হলেও ভাগ্য বদলায়নি সেবারও। ভাগ্য ফেরে তার পরের বছর। সুইডেন বিশ্বকাপে। যদিও ফাইনাল ম্যাচ হলুদ জার্সি পরে খেলতে নামেনি ব্রাজিল। সুইডেনের জার্সির রঙ হলুদ হওয়ায় ব্রাজিলিয়ানদের অন্য রঙের জার্সি পরে খেলতে বলা হয়। কোনওক্রমে বাজার থেকে নীল রঙা জার্সি কিনে তাতে ফেডারেশনের ব্যাজ সেলাই করে ফাইনালে নামেন পেলেরা। ৫-২ গোলে ব্রাজিল জিতে নেয় বহু কাঙ্খিত ফুটবল বিশ্বকাপ। এই তথ্যে চোখ রাখলে কিন্তু নীল জার্সিটিকে একেবারে অপয়া বলা যাবে না। বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মত্ত ব্রাজিলিয়ানরা জার্সির রঙ নিয়ে ভাবার সময় পাননি। দাবি না ওঠায় হলুদ রঙ হয়ে যায় ব্রাজিল ফুটবলের প্রতীক।
