2021 Maruti Suzuki Celerio Review: মাইলেজে দুর্ধর্ষ, বিপুল জায়গা, মধ্যবিত্তের মন জিতবে নতুন মারুতি সুজুকি সেলেরিও!
New Maruti Suzuki Celerio Review: নতুন সেলেরিও লঞ্চ হয়েছে ভারতে। দাম বেশ কম। চমৎকার কিছু ফিচার্সও রয়েছে। সেই সব তথ্য জেনে নিন।
২০১৪ সালে লঞ্চ হয়েছিল মারুতি সুজ়ুকি সেলেরিও। কম দামের এই গাড়ি অল্প সময়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। স্টার্টারদের বেশ নজর কেড়েছিল ছোট্ট এই চারচাকা গাড়ি। এবার সেই জনপ্রিয় গাড়িরই একটি নতুন মডেল লঞ্চ করল মারুতি সুজ়ুকি। খুব শিগগিরই এই সেকেন্ড জেনারেশন সেলেরিও হ্যাচব্যাক কেনাকাটির জন্য উপলব্ধ হবে। তবে টেস্ট ড্রাইভ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই কেল্লাফতে করে দিয়েছে নতুন মারুতি সুজ়ুকি সেলেরিও (New Maruti Suzuki Celerio)। মাইলেজ কেমন, ডিজাইন থেকে শুরু করে অন্যান্য ফিচার্স নিয়েই বা কী বলছেন ড্রাইভাররা – সেই সব তথ্যই জেনে নেওয়া যাক।
মারুতি সুজ়ুকি সেলেরিও: এক্সটিরিয়ার ডিজাইন, প্ল্যাটফর্ম ও ডাইমেনশন –
সংস্থার হার্টেক্ট প্ল্যাটফর্মের উপরে ভিত্তি করে সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির মিশেলে তৈরি করা হয়েছে এই সেকেন্ড জেনারেশন সেলেরিও। ডাইমেনশনের দিক থেকে আগের মডেলে তুলনায় এই নতুন মডেলে সব দিক থেকেই পরিবর্তন করা হয়েছে। ৩,৬৯৫ মিমি লম্বা, ১,৬৫৫ মিমি উচ্চতা এবং ১,৫৫৫ মিমি বিস্তৃত এই গাড়ি। গাড়ির ভিতরে অতিরিক্ত জায়গা দিচ্ছে বড় একটি হুইলবেস, যার পরিমাপ ২,৩৪৫ মিমি। নতুন প্রজন্মের মন জয় করতে এই লেটেস্ট গাড়ির ডিজাইনেও রয়েছে একাধিক চমক! বেশ বড় হেডলাইট, ক্রোম-স্ট্রিপড গ্রিলের সংমিশ্রণে সেলেরিও-র নতুন মডেল লুকের দিক থেকে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বাম্পারে আবার ক্ল্যাডিং থাকছে, যাতে টপ ভ্যারিয়েন্টের ফগ লাইট দেওয়া হয়েছে। প্রোফাইলে রয়েছে ১৫ ইন অ্যালয়, যার লুক এক্কেবারে স্পোর্টি। লো ভ্যারিয়েন্ট রাইড করবে ১৪ ইন স্টিল হুইলে। প্রোফাইল খুব সাধারণ হলেও কিলেস এন্ট্রির জন্য বাটন একটু অদ্ভুত রকমের দেখতে। নতুন ড্রপলেট স্টাইলের টেল লাইট ব্যতিরেকে গাড়ির পিছনে যদিও ফ্যান্সি তেমন কিছুই নেই।
মারুতি সুজ়ুকি সেলেরিও: ইন্টিরিয়ার ডিজাইন, ফিচার্স, কেবিন স্পেস –
এই নতুন জেনারেশনের সেলেরিও গাড়ির সেন্টার কনসোলে ১৭.৭৮ সেমি ইনফোটেনমেন্ট সিস্টেমের জন্য রয়েছে বেশ বড় একটি স্লট। আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে নেভিগেশন ডিসপ্লে করার জন্য কাজে আসবে এই সিস্টেম। বেশ উজ্জ্বল ডিসপ্লে, বাটনগুলি বেশ বড়, যা খুব সহজেই গাড়িটিকে অপারেট করতে সাহায়্য় করে। পাওয়ার উইন্ডোজ়, ডোর লক, হ্যাজ়ার্ড লাইট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একাধিক বাটন রয়েছে সিটের ঠিক ডান দিকের নীচে। গিয়ার লেভেল কনসোলে একগুচ্ছ স্টোরেজ স্পেস অফার করে, তার মধ্যেই রয়েছে ডুয়াল কাপ হোল্ডার্স। একটি ১২ভি সকেট এবং ইউএসবি পডও রয়েছে এই গাড়িতে।
নতুন সেলেরিও মডেলের ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেলে রয়েছে একটি বড় অ্যানালগ স্পিডো এবং ছোট্ট একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে। অন্যান্য তথ্য দেখানোর পাশাপাশি ডিজিটাল কনসোল ডিসপ্লে করবে টাচো, ফুয়েল ডউজ় এবং ওডো। স্টিয়ারং হুইলে আবার অডিও সিস্টেম এবং ব্লুটুথ কন্ট্রোল করার জন্য পৃথক একটি সিস্টেম রয়েছে।
সেকেন্ড জেনারেশন সেলেরিও মডেলের কেবিনে বেশ বড় জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করেছে মারুতি সুজ়ুকি। গাড়ির সামনে যাঁরা বসবেন, তাঁদের মাথার উপরে ঠিক যতখানি স্পেস থাকবে, ততখানি স্পেসই আবার পায়ের কাছেও থাকছে। ফ্রন্ট স্পেস বেশ কিছুটা ফ্ল্যাট রাখা হলেও স্পেস কিন্তু অনেকটাই থাকছে। রিয়ার বেঞ্চ দু’জনের জন্য যথেষ্ট। তবে তৃতীয় ব্যক্তির বসতে একটু সমস্যা হতে পারে। অ্যাম্পল নি এবং হেডরুমও রয়েছে। তবে পার্কিং ব্রেক লিভারের ডান দিকের ঠিক পিছনে রয়েছে পাওয়ার উইন্ডো কন্ট্রোলস, যা রাইডারের পক্ষে কিছুটা সমস্যার হতে পারে। তবে গাড়ির বুট কিন্তু রাইডারকে আকর্ষিত করবে। ৩১৩ লিটারের স্পেস থাকছে এবং ৬০:৪০ স্প্লিট রিয়ার বেঞ্চও থাকছে।
মারুতি সুজ়ুকি সেলেরিও: ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন অপশন, জ্বালানি দক্ষতা এবং সেফটি ফিচার্স –
একটি মাত্রই ইঞ্জিনের অপশন রাখা হয়েছে এই গাড়িতে। সেটি হল K10C, একটি 3cyl মোটর, যা 998cc ডিসপ্লেস করতে সক্ষম। এই ইঞ্জিন 65bhp এবং 89Nm পর্যন্ত টর্ক দিতে সক্ষম। ম্যানুয়াল বা এজিএস-এর সাহায্যে রাইডাররা এটি নিতে পারবেন। মারুতি সুজ়ুকি-র তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সেলেরিও এমটি 24.97kmpl ফুয়েল ইকোনমি অফার করে এবং তার এজিএস ভ্যারিয়েন্ট 26Kmpl অফার করতে সক্ষম। এই নতুন Maruti Suzuki Celerio মডেলের ওজন ৮২৫ কেজি। এজিএস ভ্যারিয়েন্টে হিল হোল্ড অ্যাসিস্ট এবং স্টার্ট/স্টপ সিস্টেম দিয়েছে মারুতি সুজ়ুকি। সেফটির কথা বিচার করতে গেলে এই নতুন মারুতি সুজ়ুকি সেলেরিও মডেলে থাকছে ডুয়াল এয়ারব্যাগস, এবিএস, রিভার্স পার্কিং সেন্সর-সহ একাধিক আকর্ষণীয় ফিচার।
মারুতি সুজ়ুকি সেলেরিও: পারফরম্যান্স ও রাইড কোয়ালিটি –
এই গাড়ি ঘোড়ার গতিতে ছুটবে, এমনটা মনে করলে ভুল করবেন রাইডাররা। তবে হ্যাঁ দুর্দান্ত মাইলেজের সঙ্গে দৈনন্দিন সমস্ত কাজে অত্যন্ত সহায়ক হতে চলেছে এই লেটেস্ট সেলেরিও মডেল। এই গুরুত্বপূর্ণ দুই দিক মাথায় রেখেই গাড়িটি চালানো উচিত। গাড়ি একবার স্টার্ট দিলেই বুঝে যাবেন যে, তার ইঞ্জিন অত্যন্ত স্মুথ। তবে একনাগাড়ে যত বেশি ড্রাইভ করবেন, ততই তার ইঞ্জিন রাফ ভাবে বিহেভ করতে থাকবে। নিশ্চিন্তে এই নতুন মারুতি সুজ়ুকি সেলেরিও মডেল আপনাকে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার করে স্পিড দিতে পারবে। তবে ভুললে চলবে না যে, দুর্দান্ত ফুয়েল ইকোনমিও আপনাকে দিতে পারবে সেলেরিও-র এই লেটেস্ট মডেল।
তবে সবথেকে বড় পরিবর্তন নজরে আসবে AGS ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে, যা আগের সব Maruti Suzuki মডেলের থেকে আলাদা। শিফট খুবই মসৃণ রাখা হয়েছে এবং গিয়ার পরিবর্তনের সময় কিছুই মনে হবে না রাইডারের। গাড়ির সিস্টেম কিন্তু বেশ স্পর্শকাতর, অ্যাক্সিলারেশন খুব সহজেই হতে পারে এবং ডাউনশিফ্টস খুবই দ্রুততার সঙ্গে আসতে পারে। যখন ম্যানুয়াল গিয়ারবক্সের কথা আসে, তখন আমরা জানাতে পেরে খুশিই হলাম যে, শিফটগুলি খাস্তা এবং কাউকে কোনও ভাবেই গিয়ারের সন্ধান করতে হবে না। সত্যিকারের শহুরে গাড়ির ফ্যাশনের নিরিখে বিচার করলে ক্লাচ অ্যাকশন খুবই হালকা। আর সেই কারণেই ট্রাফিকের সময় গাড়িটি চালাতে ড্রাইভারের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
রাইডের মানের কথা উঠলেই সেই গল্পের পুনরাবৃত্তি হয়! হালকা ভাবে এবং খুব সহজে গাড়ি চালান, তাতে সেলেরিও-র সাসপেনশন ভাল ভাবে শোষণ করবে এবং যাত্রীদের খুশিও রাখবে। অযথা গতি বাড়িয়ে দ্রুত যাত্রা করার চেষ্টা করলেই গাড়ির সাসপেনশন কিছুটা বিধ্বস্ত হওয়ার আশা করুন। স্টিয়ারিং সিস্টেমটিও ওজন করা হয়েছে এবং একটি ভাল প্রতিক্রিয়া দেয়। পাশাপাশি চালকের পার্কিং বা ইউ-টার্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা আরামদায়ক করার জন্য যথেষ্ট হালকাই রাখা হয়েছে স্টিয়ারিং সিস্টেম।
আরও পড়ুন: 2021 Maruti Suzuki Celerio: ভারতে লঞ্চ হয়েছে মারুতি সুজুকির নতুন Celerio মডেল, দাম কত?