WhatsApp Ukraine Link: আজকের যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেন থেকেই উঠে এসেছিলেন হোয়াটসঅ্যাপ সৃষ্টিকর্তা, জানতেন?
History Of WhatsApp: ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ আবিষ্কার করেছিলেন জ্যান কুম। সেই জ্যান ছিলেন আসলে ইউক্রেনের ব্যাক্তি। আমেরিকায় অভিবাসী হিসেবে চলে এসেছিলেন। এহেন ইউক্রেন টেক স্টার্টআপের পীঠস্থান ছিল রাশিয়ার হানা দেওয়ার আগের মুহূর্তেও।
রাশিয়ার আক্রমণের আগে ইউক্রেন ছিল স্টার্টআপ সাম্রাজ্য, বিশ্বের সেরা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম, যেখানে ৪০০০-এরও বেশি স্থানীয় টেক সংস্থা গড়ে উঠেছিল। ইঞ্জিনিয়ার এবং আইটি স্নাতকদের যেন পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল ভলোদিমির জ়েলেনস্কির দেশটি। এমন একটা দেশ, যারা বিস্ময়কর হারে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইটি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে এসেছে বছরের পর বছর ধরে। পরিসংখ্যান বলছে, ইউক্রেনে প্রতি বছর ১৩০,০০০ ছাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করতেন এবং আইটি স্নাতক হয়ে উঠতেন ১৬,০০০ জন। আর এই হিসেব ব্রিটেন বা পোল্যান্ডের মতো দেশগুলির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। স্বাভাবিক ভাবেই এমন দেশের উদ্ভাবনী শক্তিও তাক লাগানোর মতোই হওয়া উচিৎ। হয়েছেও তাই। আজকের দুনিয়ায় সবথেকে বড় ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম, বিশ্বজুড়ে যার অ্যাক্টিভ ইউজার ২ বিলিয়ন, তারও জন্ম হয়েছিল ইউক্রেনেই। বলা ভাল, হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, তাঁর জন্ম দিয়েছিল এই স্টার্টআপ সাম্রাজ্য, ইউক্রেন (Ukraine)।
টাইমমেশিনে ফিরে যাওয়া যাক ১৩ বছর আগে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক্কেবারে শেষের দিকটা। ইয়াহু-র দুই কর্মচারী ব্রায়ান অ্যাক্টন এবং জ্যান কুম নিয়ে এলেন ওয়ান টু ওয়ান চ্যাট অ্যাপ সার্ভিস, হোয়াটসঅ্যাপ। অফিসিয়ালি তা লঞ্চ করল সেই বছরেরই নভেম্বর মাসে। প্রাথমিক ভাবে, তা কেবল মাত্র সীমাবদ্ধ থাকল আইওএস অর্থাৎ আইফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যেই। পরে ২০১০ সালের অগস্ট মাসে অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ আর একটি ডেডিকেটেড অ্যাপ লঞ্চ করল। আর তারপর মাত্র ৪ বছর সময় লাগল – হোয়াটসঅ্যাপ তার ঝুলিতে প্রতি মাসে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি অ্যাক্টিভ ইউজার যোগ করে নিল। আর এখন সারা বিশ্বে হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক সক্রিয় ইউজার সংখ্যা ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি। আর তার ক্রেডিটটা অতি অবশ্যই প্রাপ্য সেদিনের ফেসবুক তথা আজকের মেটা-র, যারা ২০১৪ সালে ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নিয়েছিল। সেই সঙ্গেই অতি অবশ্যই ক্রেডিট প্রাপ্য ওই দুই ব্যক্তির, যাঁদের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম।
বন্ধু, পরিবার, প্রিয়জন, মনের মানুষ – সকলের সঙ্গে মনের ভাব আদান প্রদান করতে পকেটের কথা ভাবতে দেয় না যে অ্যাপ, সেই অ্যাপ যার মস্তিষ্কপ্রসূত, তাঁকে ক’জনই বা চেনেন? আর চিনলেই বা কতজন মনে রাখেন? একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, হোয়াটসঅ্যাপ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পিছনে ফেসবুকের অবদান কম ছিল না। কিন্তু সেই অবদানের কথা বলতে গেলে, ডিম আগে না মুরগি আগের প্রসঙ্গটা চলে আসে। হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যান কুমের জন্ম হয়েছিল ইউক্রেনে, কিয়েভের কাছে ফ্যাস্টিভে। আজ যে ভাবে রাশিয়ার আক্রমণে বহু মানুষ ইউক্রেন ছাড়ছেন, ১৯৯২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে ইউক্রেন ছেড়েছিলেন জ্যান। তখন যদিও রাশিয়ার আক্রমণ ছিল না। তবে মা-ছেলের লক্ষ্য ছিল একটাই, জীবনটা আর একটু ভাল করে কাটানো। চলে এসেছিলেন ক্যালিফর্নিয়ার মাউন্টেন ক্যালিফে। সরকারি সহায়তায় পেয়ে গিয়েছিলেন একটি অ্যাপার্টমেন্ট। দারোয়ানের কাজ শুরু করলেন জ্যান। তাঁর মা শিশুদের দেখভাল করতে লাগলেন। বেশ চলে যাচ্ছিল দু’জনের।
কাজের সঙ্গে পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন জ্যান। কিন্তু সংসারের চাপে আজকের আরও বিখ্যাত সব উদ্যোগপতির মতোই মাঝপথে পড়াটা ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। তবে প্রোগ্রামিং শেখার ঝোঁক ছিল তাঁর বরাবরের। শিখেও ফেলেছিলেন। তারপর জুটিয়ে ফেলেছিলেন চাকরিও। এলিতেলি নয়। সোজা ইয়াহু-র মতো নামজাদা সংস্থায় চাকরি পেয়েছিলেন জ্যান কুম। কিন্তু সেই চাকরিও যেন তাঁকে হতাশ করে তুলছিল দিনের পর দিন। নতুন কিছু করতে সেই চাকরিও ছেড়ে দেন তিনি। অনুপ্রেরণার সন্ধানে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। এদিকে ২০০৯ সালে অ্যাপল তার অ্যাপ স্টোর নিয়ে আসে। আর সেখানেই যেন ইউরেকার সন্ধান পান জ্যান কুম। দিনরাত এক করে, সময়, প্রচেষ্টা এবং সম্পদ ঢেলে দিয়ে এই আমেরিকান অভিবাসী তৈরি করেন হোয়াটসঅ্যাপ।
কাট টু ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪। জ্যান কুমকে নৈশভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানান ফেসবুক সিইও মার্ক জ়াকারবার্গ। জ্যান তখন হোয়াটসঅ্যাপের সিইও। তার ঠিক ১০ দিনের মাথায় হোয়াটসঅ্যাপের দুই প্রতিষ্ঠাতা কুম এবং ব্রায়ান অ্যাক্টন ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ফেসবুকের কাছে বিক্রি করে দেন নিজেদের কষ্টের ফসলটিকে। ২০১৭ সালে সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-র একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, সেই সময় জ্যান কুমের সম্পত্তি ছিল প্রায় ৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু নিজের হাতে গড় ফসল অন্যের হাতে তুলে দিয়ে তিনি যেন হারিয়ে গেলেন! নিজেকে আজও লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখতেই ভালবাসেন জ্যান। সামাজিক কার্যকলাপে ব্যস্ত থাকেন। আর বক্সিংয়ে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন হোয়াটসঅ্যাপের সৃষ্টিকর্তা। তবে একাধিক বার ট্যুইট করে জানিয়েছেন যে, তাঁকে কেউ যেন উদ্যোগপতি না বলে। তাতে তিনি ভয়ঙ্কর রেগেও যান। একবার তো এমনও বলেছিলেন, “এর পর আমাকে কেউ উদ্যোগপতি বললে, আমার বডিগার্ড তাঁকে গিয়ে একটা ঘুষি মেরে আসবে।” কিন্তু তিনি নিজেকে উদ্যোগপতি বলতে চান না কেন? জ্যান কুম মনে করেন যে, উদ্যোগপতিরা অর্থ উপার্জনের আকাঙ্ক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। আর তিনি শুধু মানুষের প্রয়োজনের জন্য পণ্য তৈরি করার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান।
২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ – হোয়াটসঅ্যাপের সিইও থাকাকালীন বেশির ভাগ ফিচার্সই যোগ করেছিলেন জ্যান নিজেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৪ সালের পরে এন্ড টু এনক্রিপশন ও ইউপিআই পেমেন্ট ব্যতিরেকে হোয়াটসঅ্যাপে যে সব ফিচার্স যোগ হয়েছে সেগুলির প্রায় বেশির ভাগই গৌণ। সেই শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপে মূল কী কী ফিচার্স যোগ হয়েছে, সেগুলি পর্যায়ক্রমে একবার দেখে নেওয়া যাক।
২০০৯ – আইফোনের ওয়ান টু ওয়ান চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
২০১০ – অ্যান্ড্রয়েডের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ চালু হয়।
২০১০ – প্রথম বড় ফিচার – লোকেশন শেয়ারিং।
২০১১ – গ্রুপ চ্যাট ফিচার যোগ করা হয়।
২০১৩ – ভয়েস মেসেজ পাঠানোর ফিচার চলে আসে।
২০১৪ – রিড রিসিপ্টস (মেসেজ কেউ পড়লে ব্লু টিক)।
২০১৫ – অ্যাপের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব সাপোর্ট নিয়ে আসা হয়।
২০১৬ – হোয়াটসঅ্যাপ ডেস্কটপ অ্যাপ লঞ্চ হয়।
২০১৬ – ভিডিয়ো কলিং ফিচার।
২০১৬ – এক বছর ধরে সিকিওরিটি প্রোগ্রামে কাজ করার পর যোগ হয় এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন।
২০১৮ – গুচ্ছের জরুরি ফিচার্স এসে যায় – স্টিকার্স, হোয়াটসঅ্যাপ দ্বারা সংগৃহীত ডেটা ডাউনলোডের ক্ষমতা, গ্রুপ কলিং, ইউপিআই পেমেন্ট, পিপ মোড, হোয়াটসঅ্যাপ বিজ়নেস-সহ আরও একাধিক।
জেনে রাখা ভাল: শুধু হোয়াটসঅ্যাপ নয়। স্টার্টআপ হিসেবে ইউক্রেনে জন্ম হয়েছিল আজকের বহু নামীদামি সংস্থার। সেই তালিকায় রয়েছে, গ্র্যামারলি, গিটল্যাব, ট্রেসেসডটএআই, পেটকিউব, জুবল, স্ন্যাপচ্যাট, পেপাল, ক্লিনমাইম্যাক, ক্রিপ্টো-র মতো নামজাদা সংস্থা।
আরও পড়ুন: এখন নিজেকেও একটা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠাতে পারেন! কী ভাবে জানেন?
আরও পড়ুন: এই ভাবে লুকিয়ে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস দেখে নিন, তিনি জানতেও পারবেন না!