High Tech Sleeping Bag: চোখের সমস্যা দূরে সরিয়ে মহাকাশচারীদের নিশ্চিন্ত ঘুমের ব্যবস্থা করবে এই হাই-টেক স্লিপিং ব্যাগ
Sleeping Device: উচ্চ প্রযুক্তির একটি স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা, যার সাহায্যে এবার মহাকাশচারীদের ঘুমের সমস্যা চিরতরে দূর হতে চলেছে।
কবিতায় ছিল ‘নীল স্লিপিং পিলের রাতের’ কথা। সে কথা সত্যি হয়ে গিয়েছে। সারা দিনের দশটা পাঁচটার ধকলের পর শান্তিতে নিদ্রা যেতে কত কী-ই না করতে হয় আমাদের! লাইট অফ, চোখে পট্টি বাঁধা, কখনও বা স্লিপিং পিল – এমনই আরও কত কী! কিন্তু কখনও কী ভেবে দেখেছেন, মহাকাশচারীদের শান্তিতে ঘুমের জন্য কী করতে হয়? অনেক কিছুই করতে হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিসসুতে হয় না। শেষমেশ একটা সহজ সমাধানের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশে বসবাস করার সময় মহাকাশচারীদের দৃষ্টির সমস্যা হয়। আর তা দূর করতে বিজ্ঞানীরা একটি উচ্চ প্রযুক্তির স্লিপিং ব্যাগ তৈরি করেছেন যা কার্যকর ভাবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত তরল শোষণ করার মধ্যে দিয়ে প্রতিরোধক চাপ সৃষ্টি করে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তরলকে জমে যাওয়া থেকে বিরত রাখে, যা হওয়া উচিত নয়। তবে স্থানের শূন্যতায় অর্ধেক গ্যালনের বেশি শরীরের তরল মাথার মধ্যে জড় হতে পারে যা চোখের মণি দুটি চেপে ধরে। ফলে মহাকাশে ঘুমানো খুবই কষ্টকর হয়ে যায়।
এই ধরনের অবস্থাকে বলা হয় স্পেস অ্যাসোসিয়েটেড নিউরো ওকুলার সিনড্রোম (SANS)। এর পিছনে কাজ করে একাধিক বিষয় – মাথার চাপ বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে রক্তনালীর অতিরিক্ত ভরাট অবস্থা, প্রদাহ, কার্বন ডাই অক্সাইডের উচ্চ মাত্রা, র্যাডিয়েশন, জেনেটিক্স এবং ভিটামিন বি-এর স্টেটাস। টেক্সাস সাউধওয়েস্টার্ন মেডিক্যাল সেন্টারের ইন্টারনাল মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর বেঞ্জামিন লেভাইন এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, “অভিকর্ষ যেখানে এক তার থেকে শূন্য অভিকর্ষের চাপ কম হয়। কিন্তু আপনি যখন দাঁড়াচ্ছেন তখন আবার এতটা কম হয় না।”
শরীরের তরল শুষে নিতে পারে এমন একটি স্লিপিং ব্যাগ রেখে আসা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে। একটি গবেষণা দল তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করেছে। সেই দলেই ছিলেন বেঞ্জামিন লেভাইন। তিনি দাবি করলেন, “সাধারণত আমরা রাতের এক-তৃতীয়াংশ শুয়ে থাকি এবং দিনের দুই-তৃতীয়াংশ সোজা হয়ে কাটাই।” তাঁর আরও ব্যখ্যা, “নাসার মহাকাশচারীরা আকাশে ওড়ার সময় দাঁড়াতে পারেন না।”
মোটামুটি ভাবে ISS (ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন) ক্রু সদস্যদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি সদস্যের মধ্যে বিভিন্ন ডিগ্রির উপরে ভিত্তি করে দৃষ্টিসংক্রান্ত সমস্যা দেখা গিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ২০০৫ সালে জন ফিলিপস নামের এক সদস্য ৬ মাসের বেশি সময় ভাসমান ল্যাবরেটারিতে কাটানোর পরে শেষমেশ চোখের সমস্যার জন্য ফিরে আসেন। তাঁর ভিজ়ন একটা সময়ে যেখানে ২০/১০০ ছিল, সেটাই পরবর্তীতে ২০/২০ হয়ে যায়। সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের বেশ কিছু দিন আগের একটি রিপোর্ট থেকে এমনই তথ্য জানা গিয়েছিল।
লেভাইন বলছেন, “দুই বছরর লাগাতার মঙ্গল গ্রহে অপারেশনের মতো দীর্ঘ ফ্লাইটে এর প্রভাব কতটা খারাপ হতে পারে তা আমাদের জানা নেই। তবে বিপর্যয় হতে পারে যদি মহাকাশচারীদের এমন গুরুতর প্রতিবন্ধকতা থাকে, যেখানে তাঁরা ঠিক করে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে মিশনও বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়াতে পারে।”
অনন্তকাল ধরে মহাকাশচারীরা ক্যাম্পিং বেডরোলেই মহাকাশে ঘুমানোর অভ্যেস করে এসেছেন। তার থেকে অনেকটাই আলাদা হতে চলেছে এই নতুন স্লিপিং ডিভাইস যাকে স্পিলিং ব্যাগ বলা হচ্ছে। এই ডিভাইস তৈরি করেছে বহিরঙ্গন সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা REI। কোমরের সঙ্গে সংযুক্ত করে শরীরের নীচের অংশকে শক্ত ভাবে আবদ্ধ করে রাখতে পারে স্লিপিং ব্যাগ। ঠিক যেমনটা আপনার বাড়ির ভ্যাকুম ক্লিনারের সঙ্গে হয়ে থাকে। একটি ইন-বিল্ট সাকশন সিস্টেম (তরল শুষে নিতে পারে এমন সিস্টেম) থাকে, যা শরীরের তরল মাথায় না পাঠিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে ভিন্ন চাপ সৃষ্টি করে।
তবে এখান থেকে এই ভাবনার কোনও কারণ নেই যে, ISS সদস্যরা এর পর থেকেই এই রেশমের গুটির মতো দেখতে স্লিপিং ব্যাগটি বগলদাবা করে মহাকাশযাত্রা করছেন। প্রথমেই বিজ্ঞানীদের এই স্লিপিং ব্যাগে প্রতিদিন সর্বোধিক সময় কাটানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করতে হবে এবং এটি প্রত্যেকের জন্য উপযুক্ত কি না বা যাঁদের স্পেস অ্যাসোসিয়েটেড নিউরো ওকুলার সিনড্রোমের ঝুঁকি রয়েছে তাদের জন্য নিরাপদ কিনা, তা ভাল করে খুঁটিয়ে দেখতে হবে।
আরও পড়ুন: আইনস্টাইনের ১০৬ বছর আগের হিসেব নির্ভুল ছিল, এমনটাই জানালেন আজকের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা…
আরও পড়ুন: মঙ্গলগ্রহের গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে গোপন জলের রিজার্ভারের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
আরও পড়ুন: কোভিডকালে অতিরিক্ত ওজন? জাস্ট একটা আইফোনেই কেল্লাফতে! ফিরে পাবেন ছিপছিপে গড়ন…