রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম পারমাফ্রস্ট আগ্নেয়গিরির মুখ, যার নাম বাটাগাইকা। পারমাফ্রস্ট আগ্নেয়গিরিটি বরফে ঢাকা থাকে। অর্থাৎ একে বরফাবৃত আগ্নেয়গিরি বললে ভুল বলা হবে না। তবে এবার সেই বরফই ক্রমাগত গলে যাচ্ছে। বাটাগাইকার বরফ গলে যাওয়া নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁদের মতে, এটি রাশিয়ার উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এটি শুধুমাত্র রাশিয়ান শহরগুলির জন্যই নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যও হুমকির কারণ। গলনের কারণে বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণ জৈব কার্বন আসছে, যা বিশ্ব উষ্ণায়নকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র মতে, পারমাফ্রস্ট বলতে বোঝায় এমন একটি ভূমি বা স্থান, যা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে অন্তত দুই বছর ধরে সম্পূর্ণ হিমায়িত থাকে। আর সেই বরফগুলি মাটি, শিলা এবং বালির সংমিশ্রণে গঠিত। পারমাফ্রস্ট উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে থাকে। আর NASA-র গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর বড় অংশ জুড়ে রয়েছে একাধিক পারমাফ্রস্ট। বিশেষ করে উত্তর গোলার্ধে, প্রায় এক চতুর্থাংশ ভূমি এলাকা পারমাফ্রস্ট দ্বারা আবৃত। যদিও পারমাফ্রস্টের অঞ্চলগুলি সব সময় বরফে আবৃত থাকে না।
‘গেটওয়ে টু আন্ডারওয়ার্ল্ড’ (Gateway to Underworld)
বাটাগাইকার কাছে অবস্থিত স্থানীয় লোকেরা এটিকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের গেটওয়ে বা গেটওয়ে টু আন্ডারওয়ার্ল্ড বলে। এটি এক কিলোমিটার দীর্ঘ গভীর গর্ত। 1960-এর দশকে প্রথম এটিকে দেখা গিয়েছিল। স্থানীয়রাও চোখের সামনে এই গর্তকে খুব দ্রুত বাড়তে দেখেছেন। সেখানকার স্থানীয় লোকেদের মতে, দুই বছর আগে যে গর্ত রাস্তা থেকে 30 মিটার দূরে ছিল, তা এখন খুব কাছে।
বিজ্ঞানীদের কাছে এটি ‘মেগা স্লাম্প’…
স্থানীয়রা যেটিতে আন্ডারওয়ার্ল্ডের গেটওয়ে বলে, বিজ্ঞানীরা সেটিকেই মেগা স্লাম্প বলেন। আর তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের মতে, রাশিয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কমপক্ষে 2.5 গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। আর তার উপর বাটাগাইকাও দিনের পর দিন গলে যাচ্ছে, যা রাশিয়ার প্রায় 65 শতাংশ জুড়ে রয়েছে। এটি একটি বিপদ সংকেত। এর ফলে রাশিয়ার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহরে রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে, বাড়িঘর ধসে পড়ছে এবং পাইপলাইনগুলিকে ব্যাহত হচ্ছে। পরবর্তীকালে যে ভয়ানক পরিস্থিতি আসতে চলেছে, তা এখন থেকেই অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা।