Kazi Nazrul Islam Gramophone: নজরুলের গ্রামোফোন এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে
ত্রুটি কাটিয়ে ফের শুরু নজরুল গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। কবির ব্যবহৃত গ্রামোফোন এলো গবেষণার জন্য কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
উপচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চলছিল লাগাতার আন্দোলন। থমকে ছিল নজরুল গবেষণার কাজ। ডিজাইনের ত্রুটির জন্য আটকে ছিল নজরুল গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের কাজও। রাজ্যপাল সেই উপচার্যকে বরখাস্ত করে নিজে নতুন উপচার্যকে নিয়োগ করেন। এরপরেই অচলাবস্থা কেটে শুরু হল নজরুল গবেষণার কাজ।
বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামকে সম্মান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শুধু তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ায় লক্ষ্য ছিল না। কবির সৃষ্টিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ করে দিতে নজরুল সেণ্টার ফর সোশ্যাল অ্যাণ্ড কালচারাল স্টাডিজের ব্যবস্থা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসনিক ভবনের পাশেই কবির পূর্ণাবয়ব মূর্তির ঠিক পিছনে বিশাল এলাকা জুড়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। বিশাল অডিটোরিয়াম, গবেষণা কক্ষ, প্রদর্শণী কক্ষ নানা পরিকল্পনা করেই কাজ শুরু হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ হওয়ার পর হঠাৎ নির্মিয়মান অংশের বিস্তীর্ণ এলাকা ধসে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তৎকালীন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। থমকে যায় সমস্ত কিছু।
সেই কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু কোটি টাকা ব্যায়ে গড়ে উঠতে চলা নজরুল সেণ্টার ফর সোশ্যাল অ্যাণ্ড কালচারাল স্টাডিজের বিল্ডিংয়ে একাংশ ভেঙে পড়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ‘গোঁড়ায় গলদের’ সন্ধান পাওয়া যায়। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এসে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিল্ডিংয়ের ডিজাইনেই ত্রুটি ধরেছেন। অবশেষে নতুন ডিজাইন করে ত্রুটি শুধরেও দিয়েছেন তাঁরা। বিশ্ব বিদ্যালয়ের বর্তমান উপচার্য দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, নতুন ডিজাইন অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের শেষেই কাজ শেষ হবে। দীর্ঘদিন এই বিল্ডিং তৈরির কাজ বন্ধ থাকায় ব্যথিত ছিলেন নজরুল অনুরাগীরা।
অন্যদিকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ব্যবহৃত গ্রামোফোন এবং বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য রেকর্ড এবার কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হল। সেগুলিকে আর্কাইভ করে রাখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের গবেষণার জন্য যারা আসবেন তাদের গবেষণার স্বার্থেই এমন দুষ্প্রাপ্য জিনিসকে নিয়ে আসা হয়েছে। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এমন দুষ্প্রাপ্য এবং অমূল্য জিনিসকে সংরক্ষণ করাই তাঁদের প্রধান কর্তব্য।
জামুড়িয়ার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এই জামুরিয়ার চুরুলিয়াতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। আসানসোলের বেকারিতে চাকরি করা। পরবর্তীকালে লেটো গানের সঙ্গে যোগ দেওয়া। নজরুল একজন কবি এবং বিশিষ্ট সংগীতকার হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর রচিত সংগীত বিস্ময় জাগায়। কাজী নজরুল ইসলাম মুসলিম হয়েও প্রচুর শ্যামা সংগীত লিখে গিয়েছেন যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির হয়ে আছে। তার জীবন জুড়েই ছিল সংগীত। আর তাঁর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল দুটি গ্রামোফোন। যেগুলি কবি নিজে ব্যবহার করতেন। সজ্ঞানে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত গ্রামোফোন ছিল তার সঙ্গী।
কবির ব্যবহৃত একটি গ্রামোফোন রয়েছে কবির জন্মস্থান চুরুলিয়ায় নজরুল অ্যাকাডেমীর সংরক্ষণশালায়। আরও একটি দুস্প্রাপ্য এবং অমূল্য গ্রামোফোন এবার কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে নজরুল একাডেমীর যে সংগ্রহশালা রয়েছে সেই সংগ্রহশালাটিও কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুতরাং কবির ব্যবহৃত দুটি গ্রামোফোনই এখন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এই গ্রামোফোন দুটিকে সঠিকভাবে, আধুনিক উপায়ে সংরক্ষণ করাই কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ।
তিনি জানান “কাজী নজরুল ইসলামের ব্যবহার করা এই গ্রামোফোনগুলি আর্কাইভ করা হবে। এই গ্রামোফোনগুলি ইংল্যান্ডে নির্মিত। শুধু গ্রামোফোন নয়, রয়েছে কবির কণ্ঠস্বরের রেকর্ড। পাশাপাশি নজরুলের পুরোনো গানের বেশ কিছু দুস্প্রাপ্য রেকর্ড। এই গ্রামোফোনগুলিকে কারিগরি মেরামতি করে চালু করা হবে। যাতে যারা গবেষণা করতে আসবেন তারা এই রেকর্ড এবং গ্রামোফোন ব্যবহার করে তারা তাদের গবেষণার কাজে লাগাতে পারেন। কবির কণ্ঠস্বর শুনতে পারেন। ফলে গবেষণা ক্ষেত্রে এক নতুন দিক উন্মোচন হবে।”