College Teacher Harassed: ‘বলছে লোকাল মাতালদের দিয়ে মার্ডার করিয়ে দেবে’, অধ্যাপকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ TMC নেতার বিরুদ্ধে
Bankura: যদিও, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ওইটা আলোচনা হচ্ছিব। কোনও রকম হুমকি দেওয়া হয়নি।

বাঁকুড়া: দিন কয়েক আগে প্রকাশ্যে মদ্যপানের ঘটনার প্রতিবাদ করায় বেলিয়াতোড় ‘যামিনী রায় কলেজের’ এক আদিবাসী অধ্যাপককে শাসক দলের মদতে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় গর্জে উঠেছিল আদিবাসী সমাজ। তার রেশ কাটতে না কাটতে আবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এলো বাঁকুড়ার ‘বেলিয়াতোড় যামিনী রায় কলেজ’। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিয়ো। তার সত্যতা যাচাই করেনি টিভি৯ বাংলা। তবে সংশ্লিষ্ট ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ওই কলেজেরই পরিচালন সমিতির বৈঠকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কালিপদ মুখোপাধ্যায় তুমুল হম্বিতম্বি করছেন। এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরিচালন সমিতির ওই বৈঠকে কলেজের দুই অধ্যাপককে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন তৃণমূলের ওই নেতা। বিষয়টি নিয়ে ওই দুই অধ্যাপকই ইমেইলের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগও জানান। এই ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। যদিও, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ওইটা আলোচনা হচ্ছিব। কোনও রকম হুমকি দেওয়া হয়নি।
তবে শিক্ষকদের প্রাণে মারার হুমকি নতুন কোনও ঘটনা নয় এ রাজ্যে। কখনও রাস্তার উপরে মদ্যপানের প্রতিবাদ করার জন্য মার খেতে হয় শিক্ষককে। কখনও আবার ক্লাসে বকাবকির জন্য ছাত্র সরাসরি ৯এমএম পিস্তল নিয়ে চলে আসে। এই ঘটনাগুলির সঙ্গে যুক্ত হল বাঁকুড়ার এই ঘটনা।
গত ১৪ অগাস্ট রাতে প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হন ওই কলেজেরই ইতিহাস বিষয়ের আদিবাসী অধ্যাপক মার্সাল সোরেন। শাসক দলের মদতেই ওই হামলা হয়েছে এই দাবি তুলে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার বেলিয়াতোড় বাজারে মিছিল করে আদিবাসী সমাজ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ‘যামিনী রায়’ কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকের একটি ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গিয়েছে, গত ২৬ মার্চ কলেজের সেমিনার রুমে পরিচালন সমিতির বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছিল। সেই বৈঠকে কলেজের অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকেরা ছাড়াও পরিচালন সমিতির সরকারি প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের বড়জোড়া ব্লকের সভাপতি কালিপদ মুখোপাধ্যায় ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়ন্ত দাস। অভিযোগ, কলেজের অধ্যক্ষর উস্কানিতে তৃণমূলের ওই দুই নেতা তুমুল হম্বিতম্বি শুরু করেন। ওই বৈঠকে তৃণমূলের ওই দুই নেতা কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক লক্ষ্মীনারায়ণ যাদব ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কুন্তল সিনহাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ।
বিষয়টি নিয়ে সেই সময় ওই দুই অধ্যাপক বেলিয়াতোড় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও পুলিশ সেই অভিযোগ নেয়নি বলে অভিযোগ। পরে ইমেইলের মাধ্যমে বিষয়টি বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারকে জানানো হলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। নিগৃহীত অধ্যাপকদের দাবি এমন ঘটনায় একদিকে যেমন কলেজের পঠন পাঠনের পরিবেশ লাটে উঠেছে, তেমনই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা।
এই ভিডিয়ো দেখার পরই কড়া সমালোচনা করেন বড়জোড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বেলিয়াতোড় কৃষ্টির দিক থেকে অনেক উন্নত। এই ঘটনা এখানকার মানুষকে আঘাত করেছে বলে মনে করছি।” বিজেপি নেতা সোমনাথ কর বলেন, “অধ্যাপক নিগ্রহের স্ক্রিপ্ট আগেই লেখা হয়েছে। একাধিকবার ওরা এই ঘটনা ঘটায়। আমরা অধ্যাপকের পাশে আছি।”
কলেজের অধ্যাপক লক্ষ্মীনারায়ণ যাদব বলেন, “আমাদের বলছে লোকাল মাতালদের দিয়ে মার্ডার করিয়ে দেবে। আমরা তো বাইরে থেকে এসে থাকি। উনি যদি এই সব বলেন তাহলে আমাদের সুরক্ষার দায়িত্ব কে নেবে।”
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই বড়জোড়া তৃণমূল ব্লক সভাপতি কালিপদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। অধ্যাপকের সঙ্গে ছাত্র ছিল প্রচুর। যারা ভিডিয়ো ভাইরাল করেছে তাদের থেকে শিক্ষা নেওয়ার কিছু নেই। আমরা হুমকি দিইনি। কথাবার্তা হচ্ছে। আর কথাবার্তার সঙ্গে হুমকির কী আছে?”
