SIR: বাচ্চাদের পেট ভরত ওই মিড ডে মিলেই, ২ শিক্ষকই যাচ্ছেন BLO হতে, ৩ মাস ঝুলবে স্কুলের গেটে তালা
Bankura: বাঁকুড়ার অন্যতম পিছিয়ে পড়া গ্রাম সয়েরবেড়িয়া। গ্রামের একশো শতাংশ মানুষ পিছিয়ে পড়া শবর সম্প্রদায়ের। গ্রামের প্রায় কারোরই জমি জিরেত নেই। অন্যের জমিতে জনমজুরি করা অথবা স্থানীয় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করাই গ্রামবাসীদের একমাত্র জীবিকা।

বাঁকুড়া: SIR ইস্যুতে পারদ চড়ছে রাজ্য-রাজনীতির। অভিযোগ উঠছে বিএলও (BLO)-দের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কাজে যেতেই চাইছেন না অনেকেই। আর এই আবহের মধ্যেই এবার প্রায় বন্ধের মুখে স্কুল। কারণ,সেখানে দুই শিক্ষক BLO-র কাজে চলে যাওয়ায় আগামী তিন মাস ঝুলবে তালা। চিন্তিত গ্রামবাসীরা। কারণ, এই কয়েক মাস না জুটবে খাবার না জুটবে কিছু।
বাঁকুড়া (Bankura) জেলার ইন্দপুর ব্লকের শবর অধ্যুষিত সয়েরবেড়িয়া গ্রাম। হতদরিদ্র এই গ্রামে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটানোই যেখানে দস্তুর সেখানে শিশুদের লেখাপড়া কিছুটা হলেও বিলাসিতা। তবু দুপুরে মিড ডে মিলে একবেলা পেট পুরে খাবার আশায় শিশুদের স্কুলে পাঠান গ্রামের অভিভাবকেরা। বাড়তি পাওনা হিসাবে শিশুরা শেখে অ-আ-ক-খ। কিন্তু গণতন্ত্রের মহান উৎসব বলে কথা। অগত্যা স্কুলের দুই শিক্ষক যাবেন বিএলও র কাজে। স্কুলে পড়বে তালা। বন্ধ হবে মিড ডে মিল। লাটে উঠবে শিশুদের অ আ ক খ পড়ার অভ্যেস। চিন্তায় গোটা গ্রাম।
বাঁকুড়ার অন্যতম পিছিয়ে পড়া গ্রাম সয়েরবেড়িয়া। গ্রামের একশো শতাংশ মানুষ পিছিয়ে পড়া শবর সম্প্রদায়ের। গ্রামের প্রায় কারোরই জমি জিরেত নেই। অন্যের জমিতে জনমজুরি করা অথবা স্থানীয় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করাই গ্রামবাসীদের একমাত্র জীবিকা। সমাজের মূল স্রোত থেকে অনেক দূরে গ্রামের কোনায় কোনায় জমাট বেঁধে রয়েছে অশিক্ষা,কুসংস্কার,মদাসক্তির মতো নানান ব্যাধি। সেই গ্রামেই আশার আলো জাগিয়েছিল সরবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্কুলের দুই শিক্ষকের নিরলস চেষ্টায় স্কুলমুখী হয়েছিল গ্রামের ৩৫ জন শিশু। বাড়িতে শুধু ফ্যানাভাতের বদলে দুপুরে স্কুলের মিড ডে মিলের থালায় জুটেছিল ডিম,সয়াবিন,ডাল এবং সবজী। প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া হিসাবে ছোঁয়া হিসাবে একটু একটু করে অক্ষরের সঙ্গে পরিচিতি ঘটছিল। তাঁরা রপ্ত করেছিল সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত গাইবার কৌশল। কিন্তু ভোট আসছে, আর তাতেই সমস্যায় পড়েছেন এরা।
জানা যাচ্ছে, আর কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রামের স্কুলের দুই শিক্ষকই যোগ দেবেন বিএলও র কাজে। অগত্যা প্রায় ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে স্কুলের দরজায় ঝুলবে তালা। জুটবে না দুপুরের মিড ডে মিল। বাড়িতে লেখাপড়া করানোর মতো কেউ না থাকায় অনভ্যাসে শিশুরা ভুলবে এতদিন ধরে একটু একটু করে শেখা অ আ ক খ। স্কুল যাওয়ার অভ্যাস হারিয়ে আগের মতো হয়তো শিশুরা বাবা মা-র হাত ধরে ফের গিয়ে জুটবে ইট ভাটা অথবা অন্যের ধান জমিতে শিশু শ্রমিকের কাজে। আর সেই আশঙ্কাই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে গোটা সয়েরবেড়িয়া গ্রামের মানুষকে। অভিভাবক চারুবালা শবর বলেন, “বাড়িতে তো খাবার পায় না। পড়াশোনা স্কুলেই করে। ওইখানেই খেতে পায়। এখন তো তালা ঝুলবে বুঝতেই পারছি না কিছু।”
