‘বাপরে এত দাম!’ আধার সংশোধনের মূল্য শুনে আঁধার দেখছেন বোলপুরবাসী

Aadhar: আধার কার্ডের সংশোধন করার সুযোগে এক সংস্থার বিরুদ্ধে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল বোলপুরে। গত তিন বছর ধরে চলছে এই কালোবাজারির রমরমা। আধার কার্ড সংশোধনের নামে প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

'বাপরে এত দাম!' আধার সংশোধনের মূল্য শুনে আঁধার দেখছেন বোলপুরবাসী
আধার কার্ড সংশোধনে আসা এক মহিলা
Follow Us:
| Updated on: Aug 18, 2021 | 8:04 PM

বোলপুর: আধার কার্ডের সংশোধন করার সুযোগে এক সংস্থার বিরুদ্ধে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল বোলপুরে। গত তিন বছর ধরে চলছে এই কালোবাজারির রমরমা। আধার কার্ড সংশোধনের নামে প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এদিকে এত টাকা খরচ করে একপ্রকার বাধ্য হয়েই গ্রাহককে সেই টাকা মেটাতে হচ্ছে সংশোধিত আধার কার্ড পাওয়ার জন্য। জড়িয়ে রয়েছে কমিশন খাওয়ার অভিযোগও।

বর্তমানে চাকরি, অন্যান্য সরকারি সুবিধা ও পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং কিছু জায়গায় আবশ্যিকও বটে। আধার কার্ড তৈরির সময় অনেকের নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ প্রভৃতি ভুল হয়েছে। সেগুলি সংশোধন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অনুমোদন করা হয়েছে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসকে। পাশাপাশি কিছু এজেন্সিও সরকারি আইডি ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক ফ্র্যাঞ্চাইজি করে আধার কার্ড সংশোধন করছে।

ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে প্রতিদিন ১৫ জন পর্যন্ত নাম নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য আধার কার্ড অপরিহার্য হওয়ার কারণে বোলপুরের সাধারণ মানুষ এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে আধার কার্ড সংশোধন করতে বাধ্য হচ্ছেন। মানুষের এই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে চড়া মূল্যের বিনিময়ে চলছে আধার কার্ড সংশোধন। এমনই অভিযোগ উঠেছে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহের পাশে বাজারের একটি ফ্রাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে। আধার কার্ড সংশোধন করতে প্রতিটি কার্ড পিছু ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

এছাড়া জন্ম শংসাপত্রের তারিখ সংশোধন করতে গিয়ে আসল জন্ম শংসাপত্র দেখাতে না পারলে তো পোয়াবারো এই ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের। ঠিক করে দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে আরও বেশি মোটা টাকা হাতানো হয় বলে অভিযোগ। নানুর থানার ঘিদহ অঞ্চলের বাসিন্দা আবু তালেব অভিযোগ করেন, ওই ফ্র্যাঞ্চাইজি আধার কার্ড ঠিক করে দেওয়ার নামে তার কাছ থেকে আঠারশো টাকা দাবি করেন। এক মহিলা তো আধার কার্ড সংশোধন করতে গিয়ে পারিশ্রমিক শুনেই বলে ফেললেন, ‘বাপরে এত দাম!’

তিনি বলেন, “আধার কার্ডের নাম ও জন্ম তারিখ ভুল থাকায় সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছিনা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে হন্যে হয়ে ঘুরছি তবুও সংশোধন করতে না পেরে বাধ্য হয়ে এই ফ্রাঞ্চাইজিতে এসেছি। সংশোধনের নাম করে তারা যে টাকা দাবি করছেন নিরুপায় হয়েই তা দিতে হবে, না হলে আধার কার্ড পাওয়া যাবে না। আমাদের এলাকার বহু মানুষ এই ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে আধার কার্ড সংশোধন করে কাজ চালাচ্ছেন।

শুধু নানুর নয় বোলপুর, ইলামবাজার, লাভপুর সহ শান্তিনিকেতনের বহু মানুষ একপ্রকার নিরুপায় হয়েই মোটা টাকার বিনিময়ে আধার কার্ড সংশোধন করতে বাধ্য হচ্ছেন।‌ যদিও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক ইমরান আহমেদ বিষয়টি প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও পরে বলেন ফ্র্যাঞ্চাইজির থেকে ইউআইডিএআই আধিকারিকরা সংশোধনের নাম করে মোটা টাকা কমিশন চান। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বেশি টাকা নিতে হয়।

বোলপুরের আরও একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মী বলেন এর সাথে বেসরকারি ব্যাঙ্কের কয়েকজন আধিকারিক জড়িয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁরা বারবার ফিরিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন ফলে তারা একপ্রকার বাধ্য হয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে আধার কার্ড সংশোধন করেন ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকে। এর জন্য ব্যাঙ্কের ওই আধিকারিকদের কমিশনও গুনতে হয়।

এ বিষয়ে বোলপুরের এসডিও অয়ন নাথের প্রতিক্রিয়া, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি, এরকমভাবে বেশি টাকা নেওয়া যায় না। খুব শীঘ্রই ওই ফ্র্যাঞ্চাইজি বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আরও পড়ুন: ছাত্রীকে বাইরে বার করে পোশাক পাল্টাতেন গৃহশিক্ষিকা, আলমারি খুলে হাঁ সেনানীর পরিবার!