Deocha Pachami Coal Mining Project Meeting: ডেউচা পাচামি প্রকল্প চালু করতে তত্‍পর প্রশাসন, রবীন্দ্র সদনে আদিবাসীদের নিয়ে প্রথম বৈঠক

Birbhum: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনির সন্ধান পাওয়ার সুবাদে বীরভূমের ডেউচা পাচামি কোল ব্লক এলাকার নাম এখন অনেকেরই জানা। বীরভূমের দেউচা পাচামি কয়লা খনির কাজ শুরুর বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।

Deocha Pachami Coal Mining Project Meeting: ডেউচা পাচামি প্রকল্প চালু করতে তত্‍পর প্রশাসন, রবীন্দ্র সদনে আদিবাসীদের নিয়ে প্রথম বৈঠক
পাচামিতে কি বদলাচ্ছে ছন্দ? নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 19, 2021 | 8:52 PM

বীরভূম: “সিঙ্গুরে যেভাবে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছিল, আমরা সেভাবে করব না। আমরা প্রথমে নিজেদের জমি দিয়ে শুরু করব। তার পর প্যাকেজটা এজন্য বলে দিলাম। জমি দিলে দেওয়া হবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও বাড়ি।” ডেউচা পাচামি কয়লা ব্লক প্রকল্প নিয়ে এদিন বিধানসভায় এমনই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। এই প্রকল্প চালু করতে তত্‍পর জেলা প্রশাসন। শুক্রবার  সিউড়ির রবীন্দ্রসদনে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে করলেন সরকারি কর্তারা।

এদিনের বৈঠকে, বীরভূম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক বিধান রায়, বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠী, সিউড়ি বিধানসভার বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তারা। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত প্যাকেজ সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়। সেই তথ্য় তুলে ধরা হয় আদিবাসী মানুষের সামনে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সরেন।

বৈঠক শেষে বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, “আমরা আজ আদিবাসী গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বললাম। ওঁদের কাছে  বাংলা, ইংরেজি আর সাঁওতালি অলিচিকি তিনটি ভাষায় গোটা প্যাকেজটির বিস্তারিত বর্ণনা করে সমস্ত লিখিত তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ওঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা আলোচনাও করেছি। বাকি দেখা যাক ওঁরা কী করেন। জোর করে কোনও সিদ্ধান্ত চাপানো হবে না।”

অন্যদিকে, রবীন সরেন বলেন, “আমরা প্রস্তাবটা শুনেছি। এবার গ্রামের সকলকে বোঝাবো। তাঁরা রাজি হোক, হলে দেখা যাবে। এখনই কিছু বলতে পারব না। সকলের মতামত নিয়েই আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।”

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনির সন্ধান পাওয়ার সুবাদে বীরভূমের ডেউচা পাচামি কোল ব্লক এলাকার নাম এখন অনেকেরই জানা। বীরভূমের দেউচা পাচামি কয়লা খনির কাজ শুরুর বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। প্রায় ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত ডেউচা পাচামি কোল ব্লক এলাকা। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৩০১০টি পরিবার এই খনি অঞ্চলে বসবাস করেন যার মধ্যে ১০১৩টি আদিবাসী পরিবার। ৩০৭ একর জমি বনভূমি রয়েছে এখানে।  মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে প্যাকেজের ঘোষণা করেছেন।

বলা হয়েছে, প্রায় ১৭ জন খাদান মালিক বাড়ির দাম ও ক্ষতিপূরণ পাবেন। ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজের অধীনে বাড়ি দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের। ওই এলাকায় থাকা বাসিন্দা, যাঁদের বাড়ি সহ জমি রয়েছে, তাঁরা পাবেন ১০ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সুবিধা দিতে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া বাড়ি বা জমি হারানো অথবা বর্গদাররা পরিবার পিছু জুনিয়র পুলিশ কনস্টেবল পদমর্যাদার চাকরি পাবেন। সব মিলিয়ে এই ত্রাণ পুনর্বাসন প্যাকেজের মোট আর্থিক মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা।

যদিও এদিন বিধানসভায় এই প্রকল্প ঘোষণার পর খুশি নন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রীর প্যাকেজ ঘোষণার পর খুশি নন আদিবাসীরা। আবার গ্রাম ছাড়তেই নারাজ আদিবাসী পরিবারগুলি। তাই প্যাকেজ ঘোষণার পরই প্রাথমিক সংশয়ে ডেউচা পাচামি কয়লা প্রকল্প ।

বীরভূমের মোহাম্মদ বাজার এলাকায় দেউচা পাচামি বৃহৎ কয়লা প্রকল্পের আগেই ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। এবার এই প্রকল্পের দরুণ প্যাকেজের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সিঙ্গুরের মতো জমি অধিগ্রহণ নয়। আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে। থাকছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, চাকরি ও পুনর্বাসনের মতো সুবিধা।

কিন্তু, এত ঘোষণার পরও আদৌ কি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে? সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এদিন এলাকার আদিবাসী মানুষদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায়। তাঁরা কেউ কেউ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, গ্রাম ছাড়বেন না। প্রকল্প করতে হলে সরকারি ভেস্ট জমি ও ফাঁকা জমিতে করা হোক। একই সঙ্গে দাবি জানাচ্ছেন, প্যাকেজের সরকারিভাবে শ্বেত পত্র বের করা হোক। এবং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা সেই নিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক।

মোহাম্মদ বাজার ডেউচা পাচামি এলাকার আদিবাসী সংগঠন, আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক তথা জমিদাতা রবিন সোরেন বলেন, “আমরা চাই গ্রামের পাশের সরকারি থাকা ল্যান্ড ও ভেস্ট ল্যান্ডের ওপর প্রকল্প হোক। আমরা কোনভাবেই গ্রাম উচ্ছেদ চাইছি না।”

আদিবাসী জমিদাতা সোমনাথ হেমব্রম ও শ্যামল মুর্মু জানান, “আমরা কোনও ভাবেই গ্রাম ছাড়তে রাজি নই। আমরা চাই, মুখ্যমন্ত্রী যেমন ঘোষণা করেছেন সেই মতই সরকারি কাগজ প্রকাশ করা হোক। তারপর প্রশাসন আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসুক। পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”

সরকার পুনর্বাসন দেওয়ার কথা বললেও সেই পুনর্বাসনের আগে ব্যবস্থা করলে তারপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানাচ্ছেন। তবে তাঁদের একটাই কথা, “আমরা কোনভাবেই বাপ-মার ভিটে গ্রাম উচ্ছেদ হোক চাই না।”

যদিও এ বিষয়ে বীরভূম জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “আমরা আগেও চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রাথমিকভাবে, ভেস্ট ল্যান্ডের উপরেই কাজ শুরু করা হবে। তার পরে, পরবর্তীতে বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষ।” তিনি আরও বলেন, “এই এলাকায় তিন ধরনের ল্যান্ড (জমি) রয়েছে। ফরেস্ট লান্ড, ভেস্ট ল্যান্ড ও প্রাইভেট ল্যান্ড। আমরা সকল প্রকার মানুষের সাথে কথা বলে কাজ শুরু করব।” একইসঙ্গে রাজ্য সরকার পরবর্তীতে যেমন নির্দেশিকা দেবেন সেই মোতাবেক কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খবর পজিটিভলি করুন…বিজ্ঞাপন নিশ্চই পাবেন’