Mamata Banerjee: ‘ওই পরিচয়পত্র নেবেন না কিন্তু NRC-তে পড়ে যাবেন’, কোন কার্ড নিয়ে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী?
Mamata Banerjee: রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজবংশী এলাকার বুকে দাঁড়িয়ে বারবার একটি বার্তাই এদিন দিতে চাইলেন মমতা। তিনি স্পষ্টত বুঝিয়ে দিলেন, কোনওভাবেই CAA হতে দেবেন না। প্রসঙ্গ উত্থাপনে একাধিক উদাহরণ টেনে আনেন তিনি। সতর্ক করেন পরিযায়ী শ্রমিকদেরও।
কোচবিহার: লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে পাঁচ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সোমবার ছিল কোচবিহারের সভা। সকালেই এই দিনটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হবে বলে ‘গ্যারান্টি’ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। রবিবারই এই প্রতিশ্রুতি দেন শান্তনু, আর ঠিক তার পর দিনই মুখ খুললেন মুখ্য়মন্ত্রী। সোমবার সকালেই অবশ্য এই নিয়ে স্পষ্ট উত্তর দিয়েছেন শশী পাঁজা।
আর মুখ্যমন্ত্রী পরের দিনই বললেন, “বিএসএফের অত্যাচারে মানুষ তটস্থ। BSF সীমান্তে আলাদা আইডেনটিটি কার্ড দিতে চায়।” মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা, ” আমি বলে দিচ্ছি, নেবেন না সেই কার্ড। বলবেন আমাদের আধার কার্ড রয়েছে, রেশন কার্ড রয়েছে। ওই কার্ড যদি নেন, তাহলে NRC তে পড়ে যাবেন। সব থেকে বাদ চলে যাবেন। কোনও সরকারি সুবিধা পাবেন না কিন্তু। বিপদে পড়লে আমি আছি। বাঘের বাচ্চার মতো আছি আপনাদের সঙ্গে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজবংশী এলাকার বুকে দাঁড়িয়ে বারবার একটি বার্তাই এদিন দিতে চাইলেন মমতা। তিনি স্পষ্টত বুঝিয়ে দিলেন, কোনওভাবেই CAA হতে দেবেন না। প্রসঙ্গ উত্থাপনে একাধিক উদাহরণ টেনে আনেন তিনি। সতর্ক করেন পরিযায়ী শ্রমিকদেরও। তিনি বলেন, “২৮ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক নাম লিখিয়েছেন। তাঁরা যদি কোনও বিপদে পড়েন, তাঁদের আমরা ফিরিয়ে আনব। শুধু ভোটার লিস্টে নামটা তুলে রাখুন। কেউ NRC বোলে যাতে বাদ না দিয়ে দেয়। সকলেই সব সুবিধা পায়। নাগরিক না হলে ভোট দিতে পারত? সরকারি সুবিধা পেত?” সেক্ষেত্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে শীতলকুচির প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তিনি বলেন, “শীতলকুচির কথা মনে রয়েছে? যখন তখন গ্রামে ঢুকে গুলি করে দেয়! যেন জমিদারি পেয়ে গিয়েছে। যদি কখনও এরকম গ্রামে গ্রামে অত্যাচার করে, সঙ্গে সঙ্গে থানায় FIR করবেন, এটা মাথায় রাখবেন। ওরা ভয় দেখিয়ে ভোট করতে চায়, এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখিয়ে ভোট করতে চায়। বলে, শোন না আমাদের সঙ্গে না এলে তোর বাড়িতে ইডি পাঠিয়ে দেবে। শীতলকুচি কেসে কীভাবে বেল পেল? খুনি যদি বেল পায়, মানুষ বিচার পাবে কোথা থাকে? ”
তৃণমূল নেতৃত্ব বরাবরই সিএএ প্রসঙ্গে দাবি করে আসছেন, যে নাগরিকেরা ভোট দেন, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আছে, তাঁরাই এ দেশের নাগরিক। শান্তনু ‘CAA গ্যারেন্টি’র পাল্টা দিতে সকালেই রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “নির্বাচন এলেই বিজেপি নেতারা সিএএ নিয়ে যে ধুয়ো তোলেন, তা আর চলবে না।” যাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিক বলে আরও একবার জানিয়ে দেন শশী। আর সেই প্রসঙ্গ টেনেই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন NRC নিয়ে তাঁর অবস্থান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কোচবিহারের রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকায় দাঁড়িয়ে NRC নিয়ে মমতার এই বার্তা আক্ষরিক অর্থেই তাৎপর্যপূর্ণ। গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে রাজবংশী সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু সেখানকার বর্তমানে সমীকরণ বলছে, রাজবংশীদের অধিকাংশই এখন কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’নিয়ে ক্ষুব্ধ। মমতা এদিন আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজবংশীদের জন্য রাজ্য সরকার ঠিক কী কী করছে, আর বিজেপি সাংসদ কী করেছেন! রাজবংশীদের মন জয় করতে NRC নিয়ে আরও একবার নিজের অবস্থানকে স্পষ্ট করল মমতা সরকার।