AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Calcutta High Court: তলে তলে চলছিল ১০০ কোটির জমি হাতানোর পরিকল্পনা? বড় রায় দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট

Calcutta High Court: ভুয়ো ভোটার বিতর্কের মাঝেই এবার ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট? বাগডোগরায় দেদার ব্যবহার ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেটের, জমি-বাড়ি দখল থেকে পাসপোর্ট, ব্যবহার হচ্ছে এই নথিই? বাগডোগরায় একশো ডেথ সার্টিফিকেট বাতিলের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের।

Calcutta High Court: তলে তলে চলছিল ১০০ কোটির জমি হাতানোর পরিকল্পনা? বড় রায় দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট
কলকাতা হাইকোর্টImage Credit: Getty Images
| Edited By: | Updated on: Mar 02, 2025 | 3:07 PM
Share

শিলিগুড়ি: ভুয়ো ভোটার কার্ডে রক্ষা নেই, এবার দোসর ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট। শোরগোল শিলিগুড়িতে। বেআইনিভাবে জমি দখলের মামলাকে কেন্দ্র করেই সামনে এসেছিল একটি ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট। পরবর্তীতে দেখা গেল অন্তত একশো ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু হয়েছে। যার সঠিক রেকর্ড পর্যন্ত নেই। তাহলে কী অসাধু কাজেই ব্যবহার করার ছক ছিল? চাপানউতোরের মধ্যেই দ্রুত বাতিলের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। কিন্তু, কোথা থেকে মূল ঘটনার সূত্রপাত? 

সূত্রের খবর, বাগডোগরায় মাধব চন্দ্র মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন ২০০০ সালে। তার জমির উত্তরাধিকার নিয়ে মামলা হয় ২০১৩ সাল নাগাদ। মামলা করেন রেখা পাল নামে এক মহিলা। মামলা শুরু হতেই নানা তথ্য জমা পড়ে আদালতে। সেখানেই জমা পড়েছিল একটি ডেথ সার্টিফিকেট। তাতে দেখা যাচ্ছে মাধবের মৃত্যু হয়েছে ১৯৯৮ সালে। কিন্তু, এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় বাস্তবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ২০০০ সালে। এদিকে ডেথ সার্টিফিকেটে সই পয়েছে বাগডোগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রবীর রায়ের। তাতেই সন্দেহ বাড়ে রেখা পালের। এরপরই তথ্য জানার অধিকার আইনে সত্যি খোঁজার চেষ্টা করেন রেখা পাল এবং স্থানীয় এক সমাজসেবী গৌতম কির্তনিয়া। স্বাস্থ্য দফতর সহ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকরণ দফতরের দ্বারস্থ হন। কিন্তু জানানো ওই নির্দিষ্ট সার্টিফিকেটের নম্বরের কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই। 

গৌতম কির্তনিয়া বলছেন, “যখন বুঝলাম সার্টিফিকেটটি ভুয়ো তখনই আরও সন্দেহ বাড়ে। ওই সার্টিফিকেট যে বই থেকে ইস্যু করা হয়েছিল তার আগে পিছে মোট একশোটি ডেথ সার্টিফিকেট কাদের কী নথির ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে RTI করি। এক্ষেত্রেও এর উত্তরে ২০২৪ সালের ৩০ অগস্ট স্বাস্থ্য দফতর জানায় ওই বইয়ের বাকি সার্টিফিকেট নিয়েও তাদের কাছে তথ্য নেই।” এরপরেই হাইকোর্টে জনসবার্থ মামলা করেন গৌতম কির্তনীয়া। অবিলম্বে ওই সমস্ত ডেথ সার্টিফিকেট বাতিল করার দাবি জানান। গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চ সব খতিয়ে দেখে ডেথ সার্টিফিকেটগুলি বাতিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে জেলা বাতিলের জন্য নোটিস জারির নির্দেশ দেওয়া হয় জেলাশাসককে।  

কী বলছেন আবেদনকারী? 

গৌতম কির্তনীয়া বলছেন, “একটি ভুয়ো সার্টিফিকেট তো প্রায় একশো কোটির জমি হরফ করতে বানানো হয়েছিল। বাকি সার্টিফিকেট কাদের ইস্যু করা হয়েছে জানি না। পাসপোর্ট থেকে ভোটার,  আধার কার্ড তৈরি করা, অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিতে, জমি দখল করতেই এর ব্যবহার হচ্ছে বলেই আশঙ্কা করছি।” অন্যদিকে রেখা পালের মেয়ে কৃষ্ণা পাল বলেন, “এভাবে বহু ভুয়ো সার্টিফিকেট টাকার বিনিময়ে মিলছে। যেসব সামনে রেখে নানা অবৈধ কাজ হচ্ছে। এখনও উত্তরাধিকার সূত্রে ওই জমি পাইনি। যারা এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হোক।”  

রাজনৈতিক মহলেও চাপানউতোর 

অন্যদিকে যে সময়ে মাধবচন্দ্র দে’র নামে এই সার্টিফিকেট ইস্যু হয়েছিল তখন গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় কংগ্রেস। উপপ্রধান ছিলেন প্রবীর রায়। তারই সই রয়েছে সার্টিফিকেটে। এখন তিনি আবার তৃণমূলে। টেলিফোনে প্রবীর জানান, “সার্টিফিকেটে আমার সই থাকলে আমিই তা দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন স্বাস্থ্য দফতরে রেকর্ড নেই, কেন এসব বাতিল তা আমি বলতে পারব না। সঠিক নথি দেখেই আমি ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করেছিলাম। বহু পুরানো ঘটনা, এখন আর মনে নেই।” 

চাপানউতোর চলছে রাজনৈতিক মহলে। স্থানীয় বাগডোগরা (লোয়ার) গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “রায়ের কপি পেয়েছি। যে বই থেকে ওই সার্টিফিকেট ইস্যু হয়েছিল গোটা বইটার খোঁজ নেই আমাদের কাছেও। কারা ওগুলো পেয়েছেন জানি না। নানা পরিষেবা নিতে ওই নির্দিষ্ট ডেথ সার্টিফিকেট কেউ জমা দিলে পদক্ষেপ করব৷” স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিরেন রায় বলেন, “এমনটা হয়ে থাকে তাহলে কারা করলেন তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হোক। যারা করেছিলেন তারা যদি এখন তৃণমূলেও থাকে তাহলেও শাস্তি হোক। যারা দু’নম্বরি করছে তাদের শাস্তি চাই।” অন্যদিকে ঘটনা সামনে আসতেই হইচই শুরু করেছে বিজেপিও। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “এই ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট শুধু জমি দখলে নয়, নাগরিকত্ব পেতেও কাজে লাগে৷ অনুপ্রবেশকারীদের কাজে লাগে৷ এরা বাংলাটাকেই বেচে দেয়নি এটাই যা সান্তনা।”