Hooghly: উৎকর্ষ বাংলায় বিলি নিয়োগপত্র ভুয়ো বলে অভিযোগ, ক্ষোভ চাকরিপ্রার্থীদের
অথৈজলে নিয়োগপ্রার্থীরা

Hooghly: উৎকর্ষ বাংলায় বিলি নিয়োগপত্র ভুয়ো বলে অভিযোগ, ক্ষোভ চাকরিপ্রার্থীদের

TV9 Bangla Digital | Edited By: Soumya Saha

Sep 16, 2022 | 8:34 PM

Hooghly: অফার লেটারে দেওয়া সেই নম্বরে ফোন করেন নিয়োগপ্রার্থীরা। আর তারপর যা জানতে পারেন, তাতে কার্যত অথৈজলে তাঁরা। কারণ, বেদ প্রকাশের দাবি, এমন কোনও ট্রেনিং-এর চিঠি তাঁরা ইস্যুই করেননি।

হুগলি: উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের আওতায় কারিগরি শিক্ষা বিভাগ থেকে রাজ্যের যুবক যুবতীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রশিক্ষণের শেষে চাকরি দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠান থেকেই যুবক-যুবতীদের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার কথা ছিল। যদিও সেই সময় তা সম্ভব হয়নি। জানানো হয়েছিল, তাঁরা বাসে করে যখন ফিরবেন, তখন টিফিনের সঙ্গে অফার লেটারও দেওয়া হবে। কিন্তু তাও হয়নি ওদিন। পরে হুগলি জেলার ১০৭ জনের কাছে ফোন আসে। সেই ফোনে জানানো হয়, চুঁচুড়ার হুগলি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কলেজ থেকে অফার লেটার নেওয়ার জন্য। সেই মতো দুই দিন আগে প্রত্যেকের মোবাইলে একটি পিডিএফ ফাইল দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর সেটি নিয়ে হুগলির ওই কলেজ থেকে অনেকেই অফার লেটার নিয়ে আসেন।

তাতে লেখা, গুজরাটে মারুতি সুজুকি কোম্পানিতে দুই বছরের আইটিআই প্রোগ্রামে ভেহিকেল টেকনিক্যাল-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাতে ১১ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। সঙ্গে আরও উল্লেখ রয়েছে, সেন্টার ফি বহন করবে সুজুকি মোটরস গুজরাট প্রাইভেট লিমিটেড। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নথি দেখার পরই প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করা হবে। চিঠির নীচে সেন্টার ম্যানেজার হিসাবে বেদ প্রকাশ সিং-এর নাম ও ফোন নম্বরও দেওয়া হয়। এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু বিপত্তি শুরু হয় এর পরে। অফার লেটারে দেওয়া সেই নম্বরে ফোন করেন নিয়োগপ্রার্থীরা। আর তারপর যা জানতে পারেন, তাতে কার্যত অথৈজলে তাঁরা। কারণ, বেদ প্রকাশের দাবি, এমন কোনও ট্রেনিং-এর চিঠি তাঁরা ইস্যুই করেননি।

বেদ প্রকাশের বক্তব্য়, “পুরোটাই ভুয়ো। আপনাদের যে লেটার দেওয়া হয়েছে, সেই রকমের ট্রেনিং আমরা করাই। দুই বছরের কোর্স। কিন্তু যে চিঠি আপনাদের দেওয়া হয়েছে, তা আমরা ইস্যু করিনি। অন্য জায়গায় আমরা এরকম লেটার দিয়েছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আমরা কাউকে এমন লেটার দিইনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।”

যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে এও উল্লেখ করা হয়েছে ফানফার্স্ট গ্লোবাল স্কিলার্স নামে এক সংস্থার সঙ্গে সুজুকি যৌথভাবে এই প্রশিক্ষণ দেয়। সেই ফানফার্স্টের পক্ষ থেকে সিদ্ধার্থ শংকর জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তবে এই ধরনের কোনও চিঠি তাঁরা ইস্যু করেননি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকদের মেল করে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। সঙ্গে তিনি আরও জানান, তাদের সংস্থা বিহার ও উত্তর প্রদেশের ছেলে-মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের কেউ এখনও প্রশিক্ষণ নেয়নি।

তাহলে কি এতকিছুর পর হাতে আসা নিয়োগপত্র ভুয়ো? কী করণীয়, ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না তাঁরা। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে। নিয়োগপ্রার্থীদের একাংশ মনে করছেন, পুরোটাই ভুয়ো।

গোলমাল ঠিক কোথায়? জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল জেলা আইটি বিভাগের নোডাল অফিসার সৌমিত্র সাহার সঙ্গে। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে কোনও মুখ খুলতে চাননি। শুধু জানিয়ে দেন, “আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সরাসরি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারি না।”

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল হুগলির জেলাশাসক পি দিপাপ প্রিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, “এটি ডাইরেক্টরেট থেকে হয়েছে। এটি তো আমরা দিইনি। ডাইরেক্টরেট থেকে কাগজটি দেওয়া হয়েছিল। তাই আমি এই বিষয়ে বলতে পারছি না। ডাইরেক্টরেটকে বিষয়টি জানিয়েছি। ওরা জানালে, তারপর বলতে পারব।”

যদিও কারিগরি দফতর সূত্রে খবর , বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার অভিযোগ এসেছে। সেই দিকগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এগুলো সবই মিটে যাবে বলেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য এই বিষয়টি নিয়ে সেই দিনই রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়েছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। নিয়োগপত্র নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরা। বলেছিলেন, “সরকারি চাকরি দিলেন না। যা দেওয়া হল, তা আসলে একটি কোর্সের ট্রেনিং। সেটিও এমনভাবে দিলেন, যাতে ১৪ তারিখ ১০ টার মধ্যে কারও পক্ষেই যাওয়া সম্ভব নয়। পয়সা থাকলেও সম্ভব নয়।”

কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, “সরকারি যন্ত্রকে ব্যবহার করে, যাঁদের বেকারির জ্বালা তাঁদের সঙ্গে মশকরা করা হচ্ছে। এই জন্য পরের দিনই আবার বললেন, তেলেভাজার দোকান দাও পুজোর সময়। রাজ্যের নাম ডুবছে।”

সমালোচনা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষও। বলেন, “আপনার উপস্থিতির জন্য আপনাকে প্রতি মাসে ১১ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। কীসের জন্য? কীসের ট্রেনিং? সব কোম্পানিকে জোর করে ডেকে নিয়ে এসেছেন। এইভাবে বাংলার ছেলেদের বোকা করা হচ্ছে।”

কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তিনি বলেন, “সারা বাংলায় যা কিছু দেখবেন, সবই ভুয়ো। নিয়োগপত্র ভুয়ো। তা আবার মুখ্যমন্ত্রী নিজে বণ্টন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, তিনি বাংলার বেকার যুবকদের কাজের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এর থেকে লজ্জার আর কী থাকতে পারে?”

 

Published on: Sep 16, 2022 08:12 PM