Family Found: গাড়ি থেকে বাড়ির সামনে নেমেই পুলিশের পায়ে ধরে হাউ হাউ করে কান্না বৃদ্ধার! ঘরে নিয়ে গেল ছেলে…
Chandannagar: বছরখানেক ধরে উত্তরপাড়ার সিএ মাঠ, শক্তি সংঘ এলাকার পথঘাট, দোকান, বাড়ির সামনে ফুটপাতই ছিল বিলা বিবির ঠিকানা।
হুগলি: বছরখানেক আগের ঘটনা। একদিন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব বিলা বিবি। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। পায়ে সংক্রমণ হয়ে যায় তাঁর। পথেই পথেই ঘুরে বেড়াতেন। বাড়ির লোকজন থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু খোঁজ মেলেনি বিলার। অবশেষে উত্তরপাড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এবং চন্দননগর পুলিশের চেষ্টায় বাড়ি ফিরলেন ওই মহিলা। উত্তরপাড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় নিজে গিয়েছিলেন ওই মহিলাকে ফেরাতে। বাড়ির গেটের সামনে নেমে পুলিশের পায়ের কাছে পড়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন বিলা।
বছরখানেক ধরে উত্তরপাড়ার সিএ মাঠ, শক্তি সংঘ এলাকার পথঘাট, দোকান, বাড়ির সামনে ফুটপাতই ছিল বিলা বিবির ঠিকানা। এলাকার লোকজন খাবার দিতেন। রাস্তার ধারে রাত কাটত। কিন্তু কনকনে শীতে এভাবে আর চলে না বুড়ির। রাস্তার ধারে বসে কাঁপতে থাকেন। কম্বলেও পথের শীত মানে না। স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েকবার বিলা বিবিকে হাসপাতালেও নিয়ে যেতে হয়েছিল। কোভিডকালে এভাবেই পথে পথে দিন কেটেছে অসুস্থ বিলার। এরপরই উত্তরপাড়ার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে বিষয়টি জানানো হয়। তারাই উত্তরপাড়া থানায় জানায়।
উত্তরপাড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, “এই ভদ্রমহিলা উত্তরপাড়ার বিভিন্ন জায়গায় অনেকদিন ধরেই রাস্তায় থাকতেন। মানসিক ভারসাম্যহীন একজন মহিলা উনি। এখানকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দেখাশোনা করত। আমরাও বহুবার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু পালিয়ে চলে যান। এরপরই প্রেরণা নামে এখানকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে প্রীতম চট্টোপাধ্যায় আমাকে ফোন করেন। শ্রীরামপুর এসডিওকে বিষয়টি জানানো হয়। উনিই আমাদের আইসি সাহেবকে নির্দেশ দেন। আমাদের চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের স্পর্শ বলে একটা দল আছে। বহু বয়স্ক মানুষকে স্পর্শ দেখে। স্পর্শের কাছে খবর আসার পরই আমরা তৎপর হই।”
শনিবারই উত্তরপাড়ায় আসে স্পর্শের সদস্যরা। তাঁরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, বৃদ্ধার বাড়ি পাণ্ডুয়া। পাণ্ডুয়া থানায় জানানো হয়। ওই থানাই নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগের তালিকা খুঁজে বিলা বিবির পরিচয় জানা যায়। পাণ্ডুয়া থানায় বছর খানেক আগে নিখোঁজের অভিযোগ হয়েছিল তাঁর নামে। বিলা বিবির বয়স ৬৫ বছর। পাণ্ডুয়ার সোমড়াগড়ি মসজিদতলার বাসিন্দা তিনি। স্বামীর নাম শেখ মেহের আলি, ছেলের নাম শেখ ইয়ামিন আলি। স্পর্শের তরফে উত্তরপাড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় বিলা বিবির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনিই রবিবার একটি গাড়ি ভাড়া করে প্রেরণার এক সদস্যকে নিয়ে বৃদ্ধাকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন। তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘরে নিয়ে যান তাঁর ছেলে। এতদিন পর প্রিয় মুখগুলো দেখে জবুথবু বিলা হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন। পায়ে পড়ে যান পুলিশ আধিকারিকের। হাত দু’টো জোড়া করে এমনভাবে মাটিতে বসে পড়েন, যেন কত জন্মের ঋণ রয়ে গেল এই উর্দিধারীর কাছে।