ভাণ্ডার পূর্তি ‘দালালে’, ‘লক্ষ্মী’ এল না ঘরে! শুধু ‘কাটমানির’ যাওয়া-আসা…

Laxmi Ka Bhandar: বৃহস্পতিবার, দেখা যায়, ডুয়ার্সের গয়েরকাটায় সাকোয়াঝোরা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য বরাদ্দ ফর্ম নিতে এসে অনেকেই দেখেন, স্থানীয় ফোটোকপির দোকানের বাইরেই ফর্ম পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ, সেই ফর্ম বিক্রি হচ্ছে কখনও ৫টাকায়, কখনও বা ১০ টাকায় কিংবা ১৫ টাকায়।

ভাণ্ডার পূর্তি 'দালালে', 'লক্ষ্মী' এল না ঘরে! শুধু 'কাটমানির' যাওয়া-আসা...
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 12, 2021 | 10:52 PM

জলপাইগুড়ি: মুখ্য়মন্ত্রীর (Mamata Banerjee) হুঁশিয়ারিকে থোড়াই কেয়ার! রাজ্যের মহিলাদের মাসিক ভাতা স্বরূপ ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে সক্রিয় দালালচক্র। মোটা টাকার বিনিময়ে ফর্ম বিলি কিংবা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ পাইয়ে দেওয়ার নামে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ রাজগঞ্জে। চাঞ্চল্যকর সেই ছবি ধরা পড়তেই তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।

বিধানসভা নির্বাচন আবহেই রাজ্যের ‘মা-বোনেদের’ জন্য মাসিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার, নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্য়মন্ত্রী (Mamata Banerjee) জানিয়ে দেন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প নিয়ে তিনি কোনও ধরনের ভুল বোঝাবুঝি বা জনগণের দুশ্চিন্তা হোক চান না। তাঁর কথায়, “পুরোপুরি বিনামূল্যে এই প্রকল্পে আবেদন জানানোর ফর্ম পাওয়া যাবে।” অথচ, তারই বিপরীত ছবি জেলার নানা এলাকায়।

বৃহস্পতিবার, দেখা যায়, ডুয়ার্সের গয়েরকাটায় সাকোয়াঝোরা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য বরাদ্দ ফর্ম নিতে এসে অনেকেই দেখেন, স্থানীয় ফোটোকপির দোকানের বাইরেই ফর্ম পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ, সেই ফর্ম বিক্রি হচ্ছে কখনও ৫টাকায়, কখনও বা ১০ টাকায় কিংবা ১৫ টাকায়। যে যা দাম দিতে পারছেন সেই দামেই ফর্ম কিনছেন!  ফর্ম নিতে আসা স্থানীয় এক মহিলার কথায়, “আমি ফর্ম নিতে এসেছি। জানি, ‘দুয়ারে সরকার’ পরে শুরু হবে। তবে আগেভাগে নাম লিখিয়ে রাখলে সুবিধা। তাই এখনই ফর্ম তুলে নাম লিখিয়ে রাখছি।” পঞ্চায়েতের সামনেই প্রকাশ্যে এমন দুর্নীতি ছবি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

দুর্নীতির ঘটনায় সাকোয়াঝোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান বিনোদ ওরাও বলেন, “আমরা কিছু সময় আগেই এই ফর্ম কেনার খবরটি পেয়েছি। এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানি না। শুনলাম অনেকে অনলাইনে ফর্মটি বের করছেন। ফলে টাকা দিতে হচ্ছে। এই দুর্নীতি যাতে বন্ধ হয়, সেইজন্য আমরা পদক্ষেপ করব। ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্প হলে যখন ফর্ম দেওয়া হবে তখন যেন সকলে ফর্ম নেন সেই ব্যবস্থা করব। সেক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছুটা সময় লাগবে।”

তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক রাজেশ কুমার সিং বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম সরকারিভাবে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প থেকেই দেওয়া হবে। যারা মোটা টাকার বিনিময়ে এই ফর্ম বিক্রি করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশকে বলব কড়া ব্যবস্থা নিতে। কোনোভাবেই বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না।”

প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের বহু প্রতীক্ষিত ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের সূচনা হতে চলেছে। লক্ষ্মীবারে নবান্ন থেকে বড় ঘোষণা করে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প নিয়ে যাবতীয় বিভ্রান্তিও এ দিন দূর করার চেষ্টা করেন তিনি। আগামী ১৬ অগস্ট থেকে রাজ্যজুড়ে যে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প শুরু হতে চলেছে, তার মাধ্যমেই এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়া যাবে বলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

এদিনের বৈঠকে মুখ্য়মন্ত্রী স্পষ্টই বলেন, ““দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য কাউন্টার থাকবে, সবার প্রথম সেখানে যেতে হবে। সেখানে গেলেই একটি ফর্ম পাওয়া যাবে। সেই ফর্মে একটি নির্দিষ্ট নম্বর থাকবে। সেই নম্বরের রেকর্ড সরকারের কাছেও থাকবে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এই ফর্ম কোনও ভাবে জেরক্স বা ডুপ্লিকেট করা যাবে না। এই ফর্ম ছাড়া অন্য কোনও ফর্ম নেওয়াও হবে না। কেউ যাতে এই ফর্মের অপব্যবহার করতে না পারে তার জন্যই এই ব্যবস্থা।”

মমতা আরও জানান, ফর্মের সঙ্গেই কম্পিউটার জেনারেটেড ইউনিক নম্বর থাকবে। তার সঙ্গে আধার কার্ডও লিঙ্ক করে দেওয়া হবে। এই নম্বরটাই ফর্ম ফিলাপের জন্য স্বীকার্য হবে। ঘুরপথে যদি কেউ অন্যভাবে ফর্ম জোগাড় করে তা জমা দেওয়ার চেষ্টা করে, তা  মেনে নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র দুয়ারে সরকার শিবির থেকেই ফর্ম নিতে হবে। তারপরেও কী করে চলছে এই নকল ফর্ম বিলি? যদিও এ বিষয়ে এখনও নীরব জেলা প্রশাসন। আরও পড়ুন: ‘ত্রিপুরার বিজেপি আর বঙ্গের তৃণমূল পরস্পরের সমার্থক’, আলিমুদ্দিন ‘বিরোধী সুর’ অশোকের?