
মালদহ: নবান্ন থেকে একদিন আগেই তৃণমূল সরকারের ১৫ বছরের কাজের খতিয়ান প্রকাশ করেছেন তিনি। লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্য সাথী, কন্যাশ্রী-সহ তাঁর সরকারের নানা প্রকল্পের কথা বলেছেন। সেইসব প্রকল্পের সুবিধা রাজ্যবাসী কীভাবে পেয়েছেন, এবার মালদহের গাজোলে তৃণমূলের সভা থেকে তা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে রাজ্যের টাকা আটকে রাখার জন্য ফের কেন্দ্রকে আক্রমণ করলেন। রাজ্য ওয়াকফ সংশোধনী আইন মেনে নেওয়ায় সরব হয়েছেন কেউ কেউ। ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়েও এদিন মালদহের সভা থেকে বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, “আমাকে হিন্দুত্ব শেখাতে আসবেন না।”
অমিত শাহকে আক্রমণ মমতার-
আর মাস পাঁচেক পর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এসআইআর আবহে কয়েকদিন আগে মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁয় সভা করেন মমতা। সেখানে এসআইআর নিয়ে মতুয়াদের আশ্বস্ত করেন। এদিন গাজোলোর সভা থেকেও সবাইকে আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে এসআইআর নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করেন। মমতা বলেন, “এটা অমিত শাহের চালাকি। ভোট ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা হবে। তার তিন মাস আগে থেকে এসআইআর শুরু করেছে। এসআইআর না মানলে নির্বাচন বন্ধ করে দাও আর সরকার ফেলে দাও। তা না হলে এসআইআর করে দাও। এই চালাকি করেছে। চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না। হ্যাংলার দল। বাংলাকে দখল করার খুব লোভ। গণতন্ত্রের মাধ্যমে করো।”
এসআইআর নিয়ে আশ্বাস মমতার-
এসআইআর ফর্ম পূরণের জন্যও সবাইকে বার্তা দেন তিনি। বলেন, “এসআইআর ফর্ম ফিলাপ করুন। হিয়ারিং-এ যান। না হলে নাম কেটে দেবে।” তিনি জানান, ১২ ডিসেম্বর থেকে ব্লকে ব্লকে তৃণমূলের ‘মে আই হেল্প ইউ ক্যাম্প’ হবে। সবাইকে এসআইআর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে। সবাইকে আশ্বস্ত করে মমতার বক্তব্য, “কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে হবে না। কাউকে পুশব্যাক করা হবে না। আমি থাকতে কারও গায়ে হাত দিতে দেব না। আমি আপনাদের পাহারাদার।” বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “এসআইআর করে তোমরা নিজেদের কবর খুঁড়েছ।”
এসআইআর নিয়ে বিজেপি ও কেন্দ্রকে আক্রমণের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন মমতা। বলেন, “আমি যেটা বলি, সেটা করি। খাদ্য সাথী করেছি। লক্ষ্মীর ভান্ডার করেছি। দুয়ারে সরকার করেছি। এখন আমাদের নকল করছে।”
তিনি ভোট চাইতে মালদহে আসেননি জানিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না।” বিজেপি একপক্ষ রাজনীতি করে বলে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “আমাকে হিন্দুত্ব শেখাতে এসো না। আমি বলে দিলাম। আমিও হিন্দুত্ব জানি। জগন্নাথ ধাম আমরাই করেছি। তোমরা কী করেছ? তোমাদের ধর্মের মূল কথা, আসল ধর্মকে ভুলিয়ে দাও।” বিজেপি দুর্নীতিগ্রস্ত পার্টি বলেও সরব হন তিনি। বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলেন, “রক্ত দেব, বাংলাকে ভাগ করতে দেব না।”
ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বার্তা মমতার-
কয়েকদিন আগে ওয়াকফ সংশোধনী আইন মেনে নিয়ে কেন্দ্রীয় পোর্টালে ওয়াকফ সম্পত্তি আপলোডের জন্য জেলাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। এই নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এদিন মালদহের সভা থেকে ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়েও তাঁর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন মমতা। বলেন, “কোনও কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তি ধর্ম নিয়ে বিভাজন করছে। তাদের উদ্দেশে বলি, ওয়াকফ আইন কেন্দ্র এনেছে। আমরা করিনি। আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। সুপ্রিম কোর্টেও মামলা করি। আমরা যতদিন আছি, এইসব জায়গায় কাউকে হাত দিতে দেব না। আপনারা বিশ্বাস রাখবেন। হিন্দু হোক, শিখ হোক, খ্রিস্টান হোক, ধর্মীয় স্থানে হাত দিতে দেব না। আমি সব ধর্মকে ভালবাসি।”