AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘খবরদারি করব না, মাতব্বরিও করব না’, শাহি মঞ্চে আশ্বস্ত করলেন শুভেন্দু

শুরুটা করলেন, "অমিত শাহ আমার বড়ভাই, দাদা। দেশের আন বাণ শান" বলে।

'খবরদারি করব না, মাতব্বরিও করব না', শাহি মঞ্চে আশ্বস্ত করলেন শুভেন্দু
মেদিনীপুরের সভামঞ্চ
| Updated on: Dec 19, 2020 | 6:24 PM
Share

মেদিনীপুর: গোটা বাংলা তখন তাকিয়ে মেদিনীপুরের কলেজ ময়দানে। বেলা তিনটে। মঞ্চে উঠলেন শুভেন্দু অধিকারী। সভায় তখন করতালি আর ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘জয় শ্রী রাম’ নিনাদ। বিজেপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়ে ভাষণ রাখতে শুরু করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। গলায় তাঁর চরম আত্মবিশ্বাসের সুর। শুরুটা করলেন, “অমিত শাহ আমার বড়ভাই, দাদা। দেশের আন বাণ শান” বলে। তার আগেই অবশ্য অমিত শাহকে জড়িয়ে ধরে সৌজন্য বিনিময়পর্ব মিটিয়েছেন।

অমিত শাহর সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী

বেলা তিনটে বেজে পাঁচ মিনিট। বক্তৃতা রাখতে শুরু করলেন শুভেন্দু। করতালির ধ্বনি আরও জোরাল হতে শুরু করেছে। শুরু থেকেই তাঁর প্রতিটা কথার ভাঁজেই ছিল সদ্য প্রাক্তন দল, প্রাক্তন নেত্রীর উদ্দেশে বার্তা। বঙ্গ রাজনীতির বিশ্লেষক আর সভায় উপস্থিত প্রত্যেক কর্মী সমর্থক, সাংবাদিকদের কাছে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে তারই ফাঁকে নিজের বর্তমান দল আর সেই দলের প্রত্যেক স্তরে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশেও ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিলেন তিনি। বললেন, “শুভেন্দু আপনাদের ওপর খবরদারি করবেন না, মাতব্বরিও করবেন না।” সঙ্গে এটাও বললেন, “আপনারা এটা বিশ্বাস করুন।”

শুভেন্দু অধিকারী নামটি গত কয়েক মাস ধরে, বিশেষত নভেম্বরের পর থেকে বাংলার রাজনীতিতে সবচেয়ে চর্চিত বিষয়। রাজনৈতিক অবস্থান থেকে শুরু করে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা, ফের বিধায়ক পদ ত্যাগ-সবতেই গন্ধ পেয়েছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে মুখ থেকে একটি শব্দও ব্যয় করেননি তিনি। তবুও যবে থেকে রাজনৈতিক মহলে তাঁর বিজেপি-যোগ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল গেরুয়া শিবিরেই।

বাঁকুড়া থেকে পশ্চিম বর্ধমান কিংবা খোদ মেদিনীপুরের বিজেপি কর্মী সমর্থকরাই বলতে শুরু করেছিলেন, যাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছি এতদিন, তাঁরাই আজ দলে থাকবেন! রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা গিয়েছে এই গুঞ্জন। এদিন শুভেন্দু ছাড়াও বহু বিধায়ক, সাংসদ নেতা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘হেভিওয়েট’ নেতার উদ্দেশেই সবচেয়ে ধেয়ে এসেছিল এই প্রশ্ন। সূত্রের খবর, বিজেপির একাংশের মনে এই সংশয়ও দানা বাঁধতে শুরু করেছিল, শুভেন্দু দলে এলে ‘খবরদারি’ করবেন। দলে যোগ দিয়ে সেবিষয়টিই এদিন শুভেন্দু স্পষ্ট করে দিতে চাইলেন বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

অমিত শাহের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী।

তৃণমূল-বাণ তো প্রথম থেকেই ছিল। শুভেন্দুর কথায়, ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে তাঁকে বিদ্ধ করেছে ঘাসফুল শিবির। শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে তৃণমূল শিবির থেকে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছিল, পদের লোভই তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক তৃণমূল নেতৃত্বকে প্রকাশ্যেই বলতে শোনা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রীর লোভে বিজেপিতে যাচ্ছেন শুভেন্দু। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এদিনের সভা থেকে শুভেন্দু তাঁদের উদ্দেশেও বার্তা দিলেন। বললেন, “দলে নেতা যা বলবেন তাই করব। পতাকা লাগাতে বললে, তাই করব। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসা লোক।” অর্থাত্ বিজেপিতে যোগ যে তিনি পদের লোভে করেননি, নিতান্তই কর্মী হয়ে থাকবেন, তা স্পষ্ট করতেই এই কথা বলেছেন বলে মত রাজনৈতিক কুশীলবদের।

বিশ্বাসঘাতকতা প্রসঙ্গেও অবশ্য এদিন প্রাক্তন সহকর্মীদের বিঁধলেন তিনি। বললেন, “অনেকে আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে! প্রতিষ্ঠার পর এনডিএ-র শরিক ছিল তৃণমূল । এবারও দ্বিতীয় হবেন মমতা, প্রথম হবে বিজেপিই।” আরও বললেন, “যখন আমার করোনা হয়েছিল, যাঁদের জন্য অকৃতদার থেকেছি, যাঁদের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি, তাঁরা আমার খোঁজ নেননি, অমিত শাহ আমার খোঁজ নিয়েছিলেন।”

আরও পড়ুন: মেদিনীপুর যেন ‘ব্রিগেড’! বিজেপি নেতা শুভেন্দুর ডাকে গেরুয়া ঢেউ কলেজ মাঠে

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এতদিন নিজের অবস্থান নিয়ে চুপ থেকেছেন শুভেন্দু। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সে অর্থে দলকে আক্রমণ করেননি। তবে শেষ মুহুর্তে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়ে যে দল থেকে বেরিয়ে এসেছেন শুভেন্দু, এদিন ‘শাহি মঞ্চ’ থেকে সেই দলকেই দিলেন কড়া বার্তা। ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’-এর স্লোগান চড়িয়ে পঞ্চাশের শুভেন্দু শুরু করলেন নতুন ইনিংস।