Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

নবান্নের প্যাডে ছাপানো পূর্ত দফতরের নিয়োগপত্র, ৪ লক্ষ টাকা দিয়েই মাথায় হাত যুবকের!

Fake Job Recruitment: প্রতারিত  শান্তনু সাধু নামে যুবকের অভিযোগ, সোমনাথ নামের ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর কাজের সূত্রেই আলাপ হয়েছিল। সোমনাথ নিজেকে রেলের ঠিকা দফতরের শ্রমিক বলে পরিচয় দেন।

নবান্নের প্যাডে ছাপানো পূর্ত দফতরের নিয়োগপত্র, ৪ লক্ষ টাকা দিয়েই মাথায় হাত যুবকের!
প্রতারিত যুবক, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2021 | 9:20 PM

উত্তর ২৪ পরগনা: বেশি নয়, সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা! মোটে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দিলেই মিলবে পূর্ত দফতরে চাকরি। কথাটা বিশ্বাস করেছিলেন শান্তনু। নিজের কষ্টার্জীত সমস্ত টাকাই তুলে দিয়েছিলেন সোমনাথ দত্ত ও প্রদীপ চৌধুরী নামে দুই ব্যক্তির হাতে। কিন্তু, তখনও বোঝেননি কী ভুল করেছেন! পূর্ত দফতরে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় সাড়ে ৪লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল দুই প্রতারকের (Fraud Case) বিরুদ্ধে। ঘটনায়, এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে বনগাঁ থানার পুলিশ।

প্রতারিত  শান্তনু সাধু নামে যুবকের অভিযোগ, সোমনাথ নামের ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর কাজের সূত্রেই আলাপ হয়েছিল। সোমনাথ নিজেকে রেলের ঠিকা দফতরের শ্রমিক বলে পরিচয় দেন। অভিযোগ, সোমনাথ নামের ওই যুবক শান্তনুকে জানান তাঁর সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তিনি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। এরপর প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা দাবি করেন সোমনাথ ও প্রদীপ। সেইমতো, শান্তনু ওঁদের হাতে সমস্ত টাকা তুলেও দেন। সময়ে এসে পৌঁছয় নিয়োগপত্র।

অভিযোগ, নবান্নের প্যাডে ছাপানো পূর্ত দফতরের সেই নিয়োগপত্রে শান্তুনুর নাম, কাজের পদ বেতন-সহ সমস্ত তথ্য দেওয়া ছিল। এমনকী, সরকারি আধিকারিকদের সইও ছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু, শান্তনু কাজে যোগ দিতে গেলে আরও ৫লক্ষ টাকা দাবি করেন অভিযুক্ত। সন্দেহ হওয়ায়, সরাসরি পূর্ত দফতরে খোঁজ নেন শান্তনু। তখনই জলের মতো সত্যি সামনে আসে। জানতে পারেন, এমন কোনও নিয়োগ পূর্ত দফতরে হয়নি। যে নিয়োগপত্র তিনি পেয়েছেন তা পুরোটাই জাল। এরপর টাকা ফেরত চাইতেই গা-ঢাকা দেন অভিযুক্ত। সঙ্গে সঙ্গে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শান্তনু।

প্রতারিত শান্তনুর কথায়, “আমার সঙ্গে কাজের সূত্রেই সোমনাথের আলাপ হয়েছিল। আমায় বলেছিল, সাড়ে চার লক্ষ টাকা দিলেই আমায় পূর্ত দফতরে চাকরি দেবে। ওঁর নাকি অনেক জানাশোনা। সরকারি কর্মীদের এমনকী উপরমহলের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ রয়েছে। সেইমতো আমি আমার সমস্ত টাকা সোমনাথ আর ওঁর সঙ্গী প্রদীপের হাতে তুলে দিই। আমার কাছে কিছুদিন পর নবান্নের প্যাডে ছাপানো, সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া পূর্ত দফতরের নিয়োগপত্র এসে পৌঁছয়। কিন্তু, তারপর সোমনাথ আমার থেকে আরও ৫ লক্ষ টাকা চান। টাকা না দিলে আমি কাজে যোগ দিতে পারব না এমন হুমকিও দেন। তখন আমি সরাসরি পূর্ত দফতরে যোগাযোগ করি। জানতে পারি, পূর্ত দফতর থেকে এমন কোনও নিয়োগই হয়নি। বুঝতে পেরেই থানায় অভিযোগ জানাই। ”

বনগাঁ পুলিশ ইতিমধ্যেই সোমনাথকে গ্রেফতার করেছে। সোমনাথের অপর সঙ্গী প্রদীপ চৌধুরীর খোঁজ চলছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃত সোমনাথের তালিকায় কেবল শান্তনু নন, আরও অনেকেই রয়েছেন যাঁদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতড়েছেন সোমনাথ। জানা গিয়েছে, ধৃত হাঁসখালির থানার বগুলা মধ্যপাড়ার বাসিন্দা। শনিবার রাতে নিজ এলাকা থেকেই সোমনাথকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার তাঁকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে পাঠানো হলে আদালতের তরফে ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনা বনগাঁ থানার তদন্তাধীন।

তবে প্রশ্ন উঠছে নবান্নের ছাপানো প্যাড কীভাবে বাইরে গেল? বিশেষ করে রাজ্যে পরপর ভুয়ো আধিকারিক ও প্রতারক ধরা পড়ার পর যখন বিশেষভাবে কড়া নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে? ঘটনায়, তৃণমূল কংগ্রেসের বনগাঁ জেলা সভাপতি আলো রানি সরকার বলেন,  “প্রতারকের ছলের অভাব হয় না। যারা প্রতারণা করে তারা বিভিন্ন ভঙ্গিতে বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে। পুলিশ যে পদক্ষেপ করেছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের আদর্শ।” পাল্টা, বিজেপির বনগাঁ জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মন্ডল জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এটা কোনও নতুন ঘটনা নয়। রাজ্যে যেখানে টিকা দুর্নীতি চলে সেখানে এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা স্বাভাবিক বলেই মনে করছে পদ্ম শিবির।

সম্প্রতি, ভুয়ো ভ্যাকসিন-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে দেবাঞ্জন দেবের। নবান্নের প্যাড জাল করে প্রতারণা করার অভিযোগ ওঠে দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে।  স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতরের নামে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিলেন দেবাঞ্জন। এভাবেই নিজের নিরাপত্তায় অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ অফিসারকে নিয়োগ করেছিলেন তিনি। তালিকায় কেবল দেবাঞ্জন নন, মাসখানেক আগে নবান্নে (Nabanna) সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা করার অভিযোগে অরিন্দম দাস নামে এক তৃণমূল (TMC) নেতাকে গ্রেফতার করে ঘোলা থানার পুলিশ। অভিয়োগ, অরিন্দম অনেককেই বলতেন, টাকা দিলেই নবান্নে কৌশলে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। এইভাবে কৌশলে অনেকের থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। জেরার মুখে অরিন্দম স্বীকার করেন চাকরি দেওয়ার নামে তিনি টাকা নিয়েছেন। এরপরেই তাঁর বিরুদ্ধে  ঘোলা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে। আরও পড়ুন: ৪১ রকমের গয়না-সহ শ্যামের আরও সোনার খোঁজ সেই রামের কাছেই!