AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Teenage Pregnancy: আঠারোর আগেই ‘মা’ হাজার হাজার নাবালিকা, টিনএজ প্রেগনেন্সিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রশাসন

Teenage Pregnancy: বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ হিসাবে দরিদ্রতা, অশিক্ষা, কুসংস্কারের মত বিষয়কে দায়ি করছে প্রসাশনের একাংশ। আবার কারও মতে টিনএজে প্রেমের বিয়েও এর পিছনে একটি অন্যতম কারণ। কী বলছে বিরোধীরা? কী বলছে প্রশাসনের কর্তারা?

| Edited By: | Updated on: Jan 14, 2024 | 9:52 AM
Share

পূর্ব বর্ধমান: চারদিকে চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। প্রচারও চলছে পুরোদমে। কিন্তু, রাজ্যের প্রত্য়ন্ত এলাকাগুলিতে উন্নয়নের সেই আলো কতটা পৌঁছেছে? পরিসংখ্যান দেখলে কিন্তু ভিড়মি খেতে পারেন যে কেউ। স্কুল ছুট, বাল্য বিবাহ তো ছিলই। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নাবালিকা মায়ের সংখ্যা। এত সরকারি প্রকল্প, এত প্রচার সবটাই কী ব্যানার পোস্টারে সীমাবদ্ধ? যাদের জন্য এই কর্মকাণ্ড তাঁদের জীবনে আধার কাটবে কী করে? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। 

সোজা কথায় ঢাক ঢোল বাজিয়ে প্রচারই সার, কিছুতেই রোখা যাচ্ছে না বাল্যবিবাহ। যার জেরে জেলায় ক্রমশ ঊর্ধমুখী টিনএজ প্রেগনেন্সির গ্রাফ। ফলস্বরূপ, সন্তানসম্ভবা অনেক নাবালিকাই মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। এর পিছনে কারণ কি দরিদ্রতা,অশিক্ষা, কুসংস্কারের মতো বিষয়, নাকি অন্য কিছু? ফের বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচারে জোর দিতে চলেছে প্রশাসন। সোজা কথায় টিন এজ প্রেগন্যান্সি এখন সবথেকে বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রসাশনের কাছে। 

আঠারোর আগেই গর্ভবতী

তথ্য বলছে, গতবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত জেলায় ৬৮২২ জন নাবালিকা প্রসূতি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তথ্য বলছে, ২০২২ সালে সরকারি হাসপাতালে ২৯,৯৯১ জন প্রসূতি ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে নাবালিকা অবস্থায় মা হয়েছেন ৬৫১২ জন। ২০২৩ সালে (২০ অক্টোবর পর্যন্ত) ৩৪,৯৭৫ জন প্রসূতির মধ্যে ৬৮২২ জনই নাবালিকা। নাবালিকা প্রসূতির হিসাবে এগিয়ে রয়েছে আউশগ্রাম ১, ভাতার, বর্ধমান ১, বর্ধমান ২, কেতুগ্রাম ২, কাটোয়া ২, মঙ্গলকোট-সহ ১৪টি ব্লক। নাবালিকা গর্ভধারণের প্রবণতা পাঁচ শতাংশ কমেছে জামালপুর, পূর্বস্থলী ১ ব্লকে। কেতুগ্রাম ১ ব্লকেও কমেছে এই হার। স্কুলছুটদের মধ্যে (মাধ্যমিকের নিচে) ৩৫.৪৮ শতাংশ নাবালিকা বিয়ের কারণে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে ২২২৫ জন স্রেফ বিয়ের কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে। তথ্য দেখে চক্ষু কপালে ওঠার জোগাড় হয়েছে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের।

বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ হিসাবে দরিদ্রতা, অশিক্ষা, কুসংস্কারের মত বিষয়কে দায়ি করছে প্রসাশনের একাংশ। আবার কারও মতে টিনএজে প্রেমের বিয়েও এর পিছনে একটি অন্যতম কারণ। 

পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান উত্তর বিধানসভা এলাকায় থাকেন বলগোনা গ্রামের সুরজিৎ পাখিরা ও চম্পা দাস (২ জনের নামই পরিবর্তিত)। দুজনেই প্রেমের টানে  বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে। পরে দুই পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হন তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে। দু’জনেরই পরিবারের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল নয়। সুরজিতের মা  জানান, ছেলে মেয়ে দুজনেরই বয়স কম ছিল। তবে বিয়েটা মেনে না নিলে ওরা কিছু একটা করে ফেলতে পারতো। ওদের জীবনের থেকে দামি তো আর কিছু নেই। সুরজিতের বাবা নেই,  আমি অনেক কষ্টে ওকে মানুষ করেছি। তাই ওদের বিয়েটা অসময়ে হলেও আমার কিছু করার ছিল না। বর্তমানে চম্পা ১৮ বছর পার করেছে। আর কোন সমস্যা নেই।

তাই বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জনমানুষে সচেতনতা গড়ে তুলতে ফের সচেষ্ট হতে চলেছে জেলা প্রশাসন। ‘বিয়ের এত তাড়া কেন’ থিম নিয়ে ফের তৃণমূল স্তরে প্রচারে নামতে চলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা সমাজকল্যান দপ্তর। জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক সৌরভ কোলে জানান, বাল্যবিবাহ রোধে আমরা ব্লকে ব্লকে প্রচার চালিয়েছি। পুলিশ ও স্বাস্থ্য দপরকে সাথে নিয়ে এই প্রচার স্কুল লেভেলেও চালানো হয়েছে। তবে পঞ্চায়েত ভোট থেকে এই প্রচার ফান্ডের অভাবে বন্ধ ছিল। আবার এই প্রচার আমরা চালু করছি। তিনি আরও বলেন, আগের তুলনায় বাল্যবিবাহের হার কমলেও এখনও যে পর্যায়ে আছে তা উদ্বেগজনক। কিছু পকেটস থেকে গেছে বলে টিন এজ প্রেগন্যান্সি কমানো যায়নি বলে জানান তিনি। যেখানেই বাল্যবিবাহের খবর আসে সেখানে চাইল্ড হেল্প লাইনের মাধ্যমে বিয়ে বন্ধ করা হয়। কিন্তু সব বাল্যবিবাহের খবর তাদের দপ্তরে আসে না এবং তাদের অজান্তেই এ ধরণের বিয়ে প্রচুর সংখ্যায় হচ্ছে তা স্বীকার করে নেন সৌরভবাবু।

বর্ধমান জেলা উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, টিন এজ ম্যারেজ ও টিন এজ প্রেগন্যান্সি একটা সামাজিক সমস্যা। জেলায় যত বিয়ে হয় তার প্রায় এক চতুর্থাংশ আঠারো বছরের কম মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে এবং গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে। মাধ্যমিক দেওয়ার বয়সে মেয়েরা মা হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। শুধু স্বাস্থ্য দপ্তর চাইলেই এটাকে থামানো যাবে না বলে মনে করছেন সুবর্ণ বাবু। তাঁর মতে, আইন আছে তবে এই আইনের প্রয়োগ যারা করেন তাদেরকে আরও সক্রিয় হতে হবে, পাশাপাশি এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা,সামাজিক উদ্যোগ এবং  প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন। 

কী বলছে বিরোধীরা? 

অন্যদিকে টিনএজ প্রেগন্যান্সি নিয়ে রাজ্য সরকারকেই সরাসরি দায়ী করলো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রদেশ সম্পাদিকা মৌমিতা বিশ্বাস মিশ্র জানান, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাই বাবা মায়েরা চাইছে যে করেই হোক মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। তার অভিযোগ, যাদের মাথার উপর ত্রিপল আছে তারা ছাদ পাচ্ছেন না অথচ যাদের মার্বেলের বাড়ি তারা বাড়ি পাচ্ছে। একই অবস্থা জব কার্ডের ক্ষেত্রে। কাজ নেই, মাথার উপর ছাদ নেই তাই বাধ্য হচ্ছেন বাবা মা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে। বাল্যবিবাহ ও টিন এজ প্রেগন্যান্সির জন্য রাজ্য সরকারের দুর্নীতিকে দায়ী করেন এই বিজেপি নেত্রী। জেলা সিপিএমের সম্পাদক মন্ডলির সদস্য দীপঙ্কর দে বলেন, রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বেটি বাচাও বেটি পড়াও, রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী সবটাই পাইয়ে দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ না করে মেয়েরা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে কিনা তা সরকারের দেখা উচিত এবং স্কুলের উপর নজরদারি প্রয়োজন বলে জানান তিনি। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন শাষকদলের জেলা সম্পাদক দেবু টুডু। তিনি বলেন, কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুফলে পুরোপুরি না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ রোধ করা গেছে। তিনি বলেন,  রাজ্যে কন্যাশ্রী ক্লাব হয়েছে। সেই ক্লাবের ছোট ছোট মেয়েরা খবর পেলেই গিয়ে বিয়ে বন্ধ করছে। তবে সরকারি তথ্য কি ভুল বলছে? এই প্রশ্নের উত্তরে দেবু বাবু জানান, একদিনে সবটা হয়ে যাবে এমনটা ভাবার নয়।