Purulia: ‘তৃণমূলের লোগো কেড়ে নিলে ৫টা নেড়ি কুকুরও পেছনে থাকবে না’, দলের কাউন্সিলরদের তোপ শাসকদলের যুব নেতার
Purulia: শহর তৃণমূলের যুব সভাপতি গৌরব সিং দলের কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, "যারা দলের স্বর্গীয় কর্মীদের সম্মান দিতে পারে না, তারা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী হতে পারে না। পুরোনো কর্মীরা সভায় উপস্থিত হতে পারলে, যাঁদের জন্য তাঁরা কাউন্সিলর হতে পেরেছেন, চার চাকা গাড়িতে ঘোরেন, সাদা জুতো পরেন, তাঁরা কেন উপস্থিত হতে পারবেন না?"

পুরুলিয়া: মদন মিত্রর সুরে এবার দলের একাংশ নেতাকে আক্রমণ পুরুলিয়ায় তৃণমূলের এক যুব নেতার। পুরুলিয়ার শহর তৃণমূলের যুব সভাপতি গৌরব সিংয়ের হুঁশিয়ারি, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জিততে হলে দলের ভাইরাস দূরীকরণ করতে হবে। দলের একাংশকে নিশানা করে তাঁর বক্তব্য, মানুষ তো দূরের কথা, দলের লোগো কেড়ে নেওয়া হলে পাড়ার নেড়ি কুকুরও পেছনে থাকবে না।
২ দিন আগে কামারহাটিতে দলের কাউন্সিলরদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিধায়ক মদন মিত্র বলেছিলেন, এখনই যদি গা থেকে তৃণমূলের জামাটা খুলে নেওয়া হয়, আর কাউন্সিলর পদটা নামের পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে পাড়ার কুকুরও পায়ে কামড় দিয়ে দেবে।
এদিন যেন মদনেরই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল গৌরব সিংয়ের কণ্ঠে। রবিবার পুরুলিয়া শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দলের প্রয়াত কর্মীদের শ্রদ্ধা জানাতে “চায়ের সঙ্গে আড্ডা” আয়োজন করা হয়। সেখানে পুরুলিয়া শহরের ২০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ওয়ার্ড কমিটি, বুথ কমিটি সহ তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মীদের উপস্থিত থাকতে আবেদন করা হয়েছিল।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো, প্রাক্তন কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুরুলিয়া পৌরসভার ৩ জন কাউন্সিলর এবং বেশ কিছু শাখা সংগঠনের নেতৃত্ব। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে শহর তৃণমূলের যুব সভাপতি গৌরব সিং দলের কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, “যারা দলের স্বর্গীয় কর্মীদের সম্মান দিতে পারে না, তারা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী হতে পারে না। পুরোনো কর্মীরা সভায় উপস্থিত হতে পারলে, যাঁদের জন্য তাঁরা কাউন্সিলর হতে পেরেছেন, চার চাকা গাড়িতে ঘোরেন, সাদা জুতো পরেন, তাঁরা কেন উপস্থিত হতে পারবেন না? মনে রাখতে হবে, এই মানুষগুলি যদি সেদিন না তৃণমূল করতেন, তাহলে তাঁরা কাউন্সিলর হতে পারতেন না।”
গত লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থীর হার নিয়েও দলের কাউন্সিলরদের দিকেই আঙুল তোলেন তিনি। বলেন, যাঁরা দলের কর্মসূচিতে আসেন না, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে হারের জন্য কি তাঁরা দায়ী নন? এরপরই দলের একাংশ নেতাকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যদি পুরুলিয়ায় জিততে হয়, সংগঠন মজবুত করতে হয়, তাহলে ভাইরাস দূরীকরণ করতে হবে। ভাইরাসগুলিকে টিকা দিতে হবে। সরকার আমাদের। জেলা পরিষদ আমাদের। এদের বোঝাতে হবে যদি তৃণমূলের লোগোটা কেড়ে নেওয়া হয়, মানুষ তো দূরের কথা, পাড়ার ৫টা নেড়ি কুকুরও তাঁদের পেছনে থাকবে না। দলকে বোঝাতে হতে, দলের উপরে কেউ নয়।”
ওই একই মঞ্চ থেকে প্রাক্তন সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, “সংগঠন নিজের মতো কাজ করছে। যাঁরা পদে আছেন তাঁরা নিজের মতো কাজ করছেন। এই দুটোর মধ্যেই সমন্বয় দরকার। নতুন সভাপতি শাখা সংগঠন, মহিলা সংগঠন-সহ সবাইকে নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে ভাববেন।”
শাসকদলের পুরুলিয়া শহর সভাপতি প্রদীপ ডাগা বলেন, “তাঁদের সবরকমভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কেন আসেননি, বলতে পারব না। দলের নির্দেশ মানছেন কি না তা দেখার দায়িত্ব দলের। আমি দল করতে গেলে স্বচ্ছভাবেই দল করব।” তিনি আরও বলেন, “কাউন্সিলররা কেন এলেন না জানি না। তবে ৩০০ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হয়তো দলকে দেখিয়ে দিতে চাইছে আমার ব্যর্থতা। দলের ক্ষতি নিয়ে দল ভাববে, দলের ভাল কীভাবে হয় সেটাই করার চেষ্টা করি।”
যদিও অনুপস্থিত থাকা কাউন্সিলরদের মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিভাস দাস বলেন, “এটা কোনও দলের অনুষ্ঠান নয়। এটা ওঁর নিজস্ব ব্যক্তিগত প্রোগ্রাম। ওঁকে ভেসে থাকতে হবে নিজের চেয়ার ধরে রাখার জন্য। শ্রদ্ধাঞ্জলি ও চায়ে পে আড্ডা একসঙ্গে হতে পারে না। উনি রাজনীতি জানেন না। রাজনীতি শেখা উচিত আমাদের কাছে। ২০ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। এখনই পদত্যাগ করা উচিত। তাঁর সঙ্গে যে কেউ নেই, তা প্রমাণিত।” যুব সভাপতিকে ব্যঙ্গ করে বিভাস দাস বলেন, করোনা হলে চিকিৎসা করান।

