Arabul Islam: ভোটের টিকিট ১৫ লক্ষ, প্রধান হলে ৩০ লক্ষ, আর খুনে ১৮ লক্ষ টাকা! আরাবুলের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ
Arabul Islam: আরও বিস্ফোরক দাবি করেন শওকত। তিনি বলেন, "নিজের ছেলেকে পোলেরহাট থেকে তুলে নিয়ে বেওতা থেকে টিকিট দিতে হবে জেলা পরিষদে। দিয়েছি। আমি তখন বেশি জানি না কোন সিটে কে রয়েছে, সেখানেও টিকিট দেওয়া হয়েছে। দলের নিয়ম অনুযায়ী, দলের কনভেনরকে সভাপতি করা যায় না।
ভাঙড়: “পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীকে খুন করার চক্রান্ত করেছে আরাবুল।” আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। শওকত মোল্লা বলেন, “পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত প্রধান করার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে আরাবুল।” যে তথ্য সামনে এসেছে, তার প্রত্যেক বিষয়ে তদন্ত হবে। সে বিষয়ে পদক্ষেপও করা হবে। আমাদের সামনে অনেক তথ্য এসেছে। সেগুলো সময় মতো সামনে আনা হবে।” শওকত মোল্লার দাবি, জেলা পরিষদ সদস্য খাদিজা বিবি দলের সঙ্গে গদ্দারি করেছেন। তাঁদেরকে দলের কোনও মিছিলে ডাকা হবে না। প্রশাসনিকভাবে যাতে ওঁরা কোনও সহযোগিতা না পান, সে চেষ্টা করা হবে।
মঙ্গলবার ভাঙড় কলেজ মাঠে একটি সভা থেকে আরাবুল ও আরাবুল ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন শওকত মোল্লা। আরাবুল ঘনিষ্ঠ জেলাপরিষদ সদস্য খাদিজা বিবির বিরুদ্ধে দল বিরোধী কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন শওকত।
প্রসঙ্গত, ভাঙড়ের আইএসএফের সঙ্গে জোর টক্কর ছিল তৃণমূলের। মস্ত চ্যালেঞ্জ ছিল, আইএসএফের ভিত নড়বড়ে করে দেওয়া। তাতে সমর্থ হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু এই লোকসভা ভোটের আগেই তৃণমূল অন্দরে ঠিক কী সমীকরণ চলেছে, তা নিয়ে প্রকাশ্য মঞ্চে বিস্ফোরক শওকত। সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে শওকত মোল্লা বলেন, “আমি যখন দায়িত্ব পাই, তখন সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম এই এলাকাকে। এই ভাঙড়ে একজন নেতা ছিলেন আরাবুল ইসলাম। এখানে যে ঘটনা ঘটেছে, শুনলে অবাক হবেন। আমার কাছে চিঠি এসেছে। পঞ্চায়েতে টিকিট দেওয়ার নাম করে ৬ লক্ষ টাকা ১৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রধান করার জন্য কারোর কারোর কাছ থেকে ২৫ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। আমি মাত্র তখন এক মাস হয়েছে এসেছি, তলায় তলায় কী কী হয়েছে, কীভাবে বুঝব।”
আরও বিস্ফোরক দাবি করেন শওকত। তিনি বলেন, “নিজের ছেলেকে পোলেরহাট থেকে তুলে নিয়ে বেওতা থেকে টিকিট দিতে হবে জেলা পরিষদে। দিয়েছি। আমি তখন বেশি জানি না কোন সিটে কে রয়েছে, সেখানেও টিকিট দেওয়া হয়েছে। দলের নিয়ম অনুযায়ী, দলের কনভেনরকে সভাপতি করা যায় না। কিন্তু ও এসে আমাকে বলল, পঞ্চায়েত সভাপতিকে কনভেনর করতে। আমি আমার নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টা বলে, দলের কনভেনরও করি, সভাপতিও করি। ভাঙড়ের কর্মীদের বুঝিয়ে বলেছি, সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। বিনিময়ে আমরা দেখেছি, আমার কাছে যারা যেত, তাদের ওপর রোয়াব চলত। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের তিনটে কর্মী খুন হন। অনেকে আহত হন। আহত প্রত্যেক কর্মীকে নিজের পকেট থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু মাঝখানে প্ল্যান হল খয়রুলকে মার্ডার করতে হবে। আমি তখন কিছুই জানতাম না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে একদিন বললেন, ওখানে নেতাগিরি করছো? ওখানে একজন নেত্রী রয়েছে, তাঁর স্বামীর নাম খয়রুল, ওঁকে খুন করার জন্য ১৮ লক্ষ টাকার বরাত দেওয়া হয়েছে। তুমি যে আরাবুল আরাবুল করো,সেই এই ঘটনার মূল নায়ক। গোটাটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। আমি একটি কাজে দিল্লি যাই, সেদিনই আরাবুল গ্রেফতার হয়ে যান।”
জেলা পরিষদের সদস্য খাদিজা বিবির নামেও বিস্ফোরক দাবি করেন শওকত মোল্লা। তিনি বলেন, “খাদিজা বিবি, যিনি জেলা পরিষদের সদস্য, একেবারে ভিতর থেকে আইএসএফের সঙ্গে ভিতর থেকে জোট বেঁধে, এখানে যাতে তৃণমূল কংগ্রেস হেরে যায়, খাদিজা দলের সঙ্গে গদ্দারি শুরু করল।” আরাবুল ঘনিষ্ঠ খাদিজা বিবিকে ফোন করা হয়েছিল, তিনি এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের আবহ যখন গমগম করছে, তখন হঠাৎই ভাঙড়ের তাবড় নেতা আরাবুল ইসলামের বাড়িতে পৌঁছে যায় পুলিশ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে গন্ডগোলের অভিযোগে আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। আরাবুলের জেলে যাওয়ার পর ভাঙড়ের অন্দরে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল এবার কি তাহলে ভাঙড়ের রাজনৈতিক রাশ থাকবে শওকতের হাতে? এদিনের বক্তব্যের পর কার্যত সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হলো।
ক’দিন আগেই আরাবুলকে কনভেনার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কার্যকলাপের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সহ সভাপতি সোনালি বাছারের ওপর। প্রশ্ন,তাহলে কি ভাঙড়ের রাজনৈতিক পট থেকে বিদায় আরাবুলের? শওকতের এদিনের বক্তব্যের পরিপেক্ষিতেই একরকম তা স্পষ্ট!!