সন্দেশখালি: ‘শাহজাহান’ নাম শুনেই লোকের চোখে মুখে আতঙ্ক! প্রথমটায় পুরোটাই ছিল এই মিথ্! সকলেই একই সুরে গান গাইছিলেন। তিনি নাকি ভগবান! কিন্তু ১৩ দিন পেরিয়েছে। শাহজাহান এখন গায়েব। এবার আস্তে আস্তে অনেকেই মুখ খুলছেন! মুখ খুলছেন মহিলারাও! কেন এত ভয় শাহজাহানকে? কীসের ভয়? মুখ খুলছেন তাঁরা।
তেভাগা আন্দোলনের পীঠস্থানেও জমি কেলেঙ্কারি! আর নেপথ্যে সন্দেশখালির সেই দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। একটা সময় পর্যন্ত শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি গ্রামের কেউ। তিনিই ভগবান, তিনিই মাসিহা- বারবার সেটাই দাবি করে এসেছিলেন গ্রামের একাংশ বাসিন্দা। এখন ১৩ দিন হয়েছে, তিনি বেপাত্তা। এবার শাহজাহানের বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে। তেভাগা আন্দোলনের পীঠস্থানেই জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। সন্দেশখালির বেড়মজুর পঞ্চায়েত এলাকায় তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। জমি আন্দোলনে যুক্ত থেকে প্রাণ হারানো কৃষকদের জন্য রয়েছে শহিদ বেদীও। অভিযোগ, সেই বেদী সংলগ্ন গরিব চাষিদের জমি শাহজাহানের প্রত্যক্ষ মদতে তাঁর ভাই বেড়মজুরের অঞ্চল সভাপতি সিরাজউদ্দিন শেখ দখল করে নিয়েছেন। TV9 বাংলার সামনে মুখ খুলেছেন ওই এলাকার পরপর তিনটি কৃষক পরিবার।
শহিদ বেদীর অবস্থা তথৈবচ। ভেঙে পড়ছে চাঙর। আর থেকেই বড় দুরবস্থা সেখানকার কৃষকদের। বেদীর দু’পাশে জমি ৯১১ নম্বর খতিয়ান, আরেকপাশে ২২২৩ ও ২২২৪ নম্বর খতিয়ানের জমি এখন সিরাজউদ্দিনের কব্জায়। দাবি শহিদদেরই পরিবারের সদস্যদের। এক শহিদের ছেলে বললেন, “এই জমি আমাদের বাবাদের নামে। আমরা এখানে চাষবাস করে খাই। হঠাৎ করে দেখি এই জমি ওঁদের নামে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। আমাদের জমি দখল হয়ে যায়।” প্রত্যেকের মুখে একটাই শব্দ। ‘ভয় পাই আমরা’
কিন্তু কীসের ভয়? এক মহিলা বলেন, “কীসের ভয় বুঝতে পারছেন না। বাড়িতে এসে ভাঙচুর করবে, মারধর করবে, আর কী! পার্টির যুগ তো।” পাশেই দাঁড়িয়ে আরেক বৃদ্ধা বললেন, “ধমক-চমক দেখায়। অন্য জমি থাকলেও, তা ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাবে। কোনও দিনই বিচার পাইনি, পাব বলে আশাই করি না।” এখন আপাতত শেখ শাহজাহান কিংবা শেখ সিরাজউদ্দিন কারোরই টিকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু হতেই তো পারে, হঠাৎ ফিরে এলে! ভয় বুকে নিয়ে বাঁচছেন ওঁরা।