North Bengal Situation: তিস্তায় হলুদ সতর্কতা, উত্তরে রেকর্ড বৃষ্টিতে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে জলঢাকা, ডায়না, কুমলাই
Water Level Raised: উত্তরবঙ্গের অনেক নদী বয়ে এসেছে সিকিম ও ভুটান থেকে। উত্তরবঙ্গের ওই এলাকায় বৃষ্টির জেরে নদীর জলস্তর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। জলঢাকা, তিস্তা, ডায়না, ডুডুয়া, কুমলাই নদীতে বেড়েছে জলস্তর। তিস্তাতে ইতিমধ্যেই হলুদ সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর।
জলপাইগুড়ি: গত কয়েক দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরবঙ্গ সহ সিকিমে। এর জেরে জলমগ্ন হয়েছে উত্তরবঙ্গের বহু এলাকা। একটানা বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীর জলস্তর বেড়েছে। যার জেরে নদী তীরবর্তী এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বেশ কিছু এলাকা। তিস্তাতেও হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে সেচ দফতরের তরফে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকরাও।
রেকর্ড বৃষ্টিপাত
গত তিন দিনে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। গত ২৪ ঘণ্টায় চেপানে ২২৭ মিমি (মিলিমিটার), হাসিমারায় ২১৮ মিমি, আলিপুরদুয়ারে ২০৬ মিমি, বারোবিশায় ১৯৮ মিমি, কুমারগ্রামে ১৭২ মিমি এবং ফালাকাটা ১৪৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। জলপাইগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে ৭২.৫০ মিমি, কোচবিহারে ১২২.৮০ মিমি, শিলিগুড়িতে ১১৬.৬০ মিমি এবং তুফানগঞ্জে ১৪২.৪০ মিমি।
বৃষ্টিতে জমেছে জল
এক টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ধূপগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। ধূপগুড়ি পুরসভা ১, ৩, ১০, ১২, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকায় জল জমেছে বুধবার রাত থেকে। সেই জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। অতিবর্ষনে আলিপুরদুয়ার পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই জল জমেছে। ৫, ২০, ১৫, ৮, ৯, ১৮ ওয়ার্ডে হাঁটু জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে পুরসভার তরফে ৮টি পাম্প চালিয়ে শহরের জল বের করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় গেট বন্ধ। ফলে জল বের করতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
নদীর জলস্তর বাড়াচ্ছে চিন্তা
উত্তরবঙ্গের অনেক নদী বয়ে এসেছে সিকিম ও ভুটান থেকে। উত্তরবঙ্গের ওই এলাকায় বৃষ্টির জেরে নদীর জলস্তর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। জলঢাকা, তিস্তা, ডায়না, ডুডুয়া, কুমলাই নদীতে বেড়েছে জলস্তর। তিস্তাতে ইতিমধ্যেই হলুদ সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর। এর পরই নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। নদী বাঁধের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবার রাতেই গ্রাউন্ড জিরোতে পৌঁছে গিয়েছিলেন পুলিশ সুপার ও পুর প্রশাসনের কর্তারা। মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে তিস্তা নদীর দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সংকেত জারি করেছে সেচ দফতর। অপরদিকে ভুটানে অবিরাম বৃষ্টির জেরে জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সংকেত জারি করা হয়েছে। বৃষ্টির জেরে গিলান্ডি নদীর ২০ মিটার বাঁধ ভেঙে জল ডুকছে গ্রামে। যার জেরে আতঙ্কিত খট্টিমারির বাসিন্দারা।
তিস্তায় জলস্ফীতির হতেই গত বছরের বন্যার স্মৃতি উঁকি মারতে শুরু করেছে তিস্তা পারের বাসিন্দাদের মনে। ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন তিস্তা পারের বাসিন্দারা। বন্যা এলে কোথায় আশ্রয় নেবেন, সেই চিন্তা মাথায় ঘুরছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের। জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত সহ পুলিশের একাধিক আধিকারিক এবং জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চ্যাটার্জি গিয়েছিলেন তিস্তা জলস্তর পরিদর্শনে। এ নিয়ে পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেছেন, “আমরা পুরসভার সঙ্গে যৌথভাবে তিস্তার সুকান্ত নগড় কলোনী সহ বিভিন্ন অসংরক্ষিত এলাকা পরিদর্শন করলাম। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শুনলাম। তিস্তা বাঁধের কোন কোন যায়গায় ক্ষতি হয়েছে তা দেখলাম। আপাতত পরিস্থিতি ঠিক আছে। তবে জল বাড়লে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। আমরা সতর্ক রয়েছি। এলাকাবাসীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরকেও সতর্ক করব আমরা।“ ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চ্যাটার্জি বলেছেন, “আজকের এই যৌথ পরিদর্শনের মূল উদ্যোক্তা পুলিশ সুপার। আমরা গত বছর বন্যার কথা মাথায় রেখে আগেভাগে এলাকা দেখে গেলাম।“
কন্ট্রোলরুমের টেলিফোন বিকল
বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গে যখন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে সময়ই বিকল হয়ে গেল ফ্লাড কন্ট্রোলরুমের সব কয়টি টেলিফোন। যার জেরে তথ্য সংগ্রহ করতে বিপাকে পড়েছেন সেচ দফতরের কর্মীরা। ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহার করেই তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন তাঁরা। এ নিয়ে ফ্লাড কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিমাই চন্দ্র দাস বলেছেন, “বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কন্ট্রোলরুমের সব কটি ল্যান্ডফোন বিকল হয়ে গিয়েছে। ফলে আমরা তথ্য যোগাড় করতে সমস্যায় পড়ছি। বিষয়টি আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিষ বিএসএনএল দফতরেও অভিযোগ জানানো হয়েছে।“
সেচ দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, তিস্তা ও জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সংকেত জারি আছে। এ দিন সকালে তিস্তার গজল ডোবা থেকে নতুন করে ১৪৮৯.৫৬ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যার জেরে জলস্তর আরও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি চলতেই থাকলে আরও জটিল হতে পারে পরিস্থিতি।