AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Russia: রাশিয়াকে ধ্বংস করে দিলেও পরমাণু যুদ্ধ করবে পুতিনের ‘মরা হাত’, জানুন কীভাবে

ধরা যাক, ইউক্রেন এত বড় হামলা চালাল, যে গোটা রাশিয়াতে পাল্টা প্রত্যাঘাতের জন্য একজনও বাঁচল না। তাহলে? কী ঘটবে তারপর? ইউক্রেন ছাড় পেয়ে যাবে? প্রাথকিভাবে শুনলে তো তাই মনে হবে! কিন্তু বাস্তবে এমনটা মোটেও হবে না।

Russia: রাশিয়াকে ধ্বংস করে দিলেও পরমাণু যুদ্ধ করবে পুতিনের 'মরা হাত', জানুন কীভাবে
| Edited By: | Updated on: Jun 03, 2025 | 5:21 PM
Share

‘অপারেশন স্পাইডার ওয়েব’-এর পর প্রায় ২৪ ঘণ্টাও বেশি সময় কেটে গেছে। এখনও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বা রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখে কুলুপ। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত নিয়ে একটাও শব্দ প্রকাশ্যে খরচ করেনি মস্কো। এটা কি বড়সড় হামলার আগে আগে চূড়ান্ত নিস্তব্ধতা নাকি আক্রান্ত হওয়ার পর ঘর গোছাতে সময় নেওয়া? উত্তর যাই হোক না কেন, মঙ্গলবার থেকেই কিন্তু রুশ সংবাদমাধ্যমে রাশিয়ার চূড়ান্ত গোপনীয় ‘Dead Hand’ সিস্টেম নিয়ে কথা শুরু হয়ে গেছে। ডেড হ্যান্ড, যার পোশাকি নাম ‘পেরিমিটার’, আসলে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েতের বানানো এক ব্রহ্মাস্ত্র। কেন আধুনিক বিশ্বের জন্য সবচেয়ে ঘাতক হতে পারে এই ‘অস্ত্র’?

ধরা যাক, ইউক্রেনের আরও একটা জোরাল হামলায় আস্ত রুশ নেতৃত্বেরই মৃত্যু হল। ইউক্রেন এত বড় হামলা চালাল, যে গোটা রাশিয়াতে পাল্টা প্রত্যাঘাতের জন্য একজনও বাঁচল না। তাহলে? কী ঘটবে তারপর? ইউক্রেন ছাড় পেয়ে যাবে? প্রাথকিভাবে শুনলে তো তাই মনে হবে! কিন্তু বাস্তবে এমনটা হবে না। গোটা রাশিয়া জুড়ে একজনও সেনা কর্মী, আধিকারিক বা অস্ত্র বিশেষজ্ঞও যদি বেঁচে না থাকেন, তাহলেও পাল্টা প্রত্যাঘাত হবে–হবেই। আর সেটা যে ভাবে হবে, যে স্তরে ও যে তীব্রতায় হবে, ইউক্রেনের এক ছটাক জমিও আস্ত থাকবে না। কারণ, তখন রুশ পরমাণু ভাণ্ডারের দখল নেবে ‘ডেড হ্যান্ড’, যার পোশাকি নাম ‘পেরিমিটার সিস্টেম’। শুরু হয়ে যাবে সোভিয়েত জমানার ‘সেমি অটোমেটিক নিউক্লিয়ার রিটালিয়েশন সিস্টেম’। যেটি তৈরি ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়। স্ময়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার। দেশজুড়ে একাধিক ‘টপ সিক্রেট লোকেশন’ থেকে বেরিয়ে আসবে একের পর এক পরমাণু অস্ত্রবোঝাই মিসাইল। ছুটে যাবে শত্রুর দিকে। তাকে আটকানোর ক্ষমতা তখন কারও থাকবে না। রাশিয়ার গোটা পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারে যত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, সব ‘ফায়ার’ হতে থাকবে পরপর। এই হামলা তখনই গিয়ে থামবে, যখন রুশ পরমাণু অস্ত্রাগার একদম খালি হয়ে যাবে। এরকম ভয়ঙ্কর প্রত্যাঘাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বিশ্বের কোনও দেশের নেই, ইউক্রেন তো কোন ছাড়!

কীভাবে কাজ করে ডেড হ্যান্ড?

১৯৮০-এ সোভিয়েতের বানানো এই পেরিমিটার সিস্টেম তৈরিই করা হয় পরমাণু হামলায় আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রত্যাঘাতের জন্য। সে সময় অবিভক্ত সোভিয়েত নেতারা আশঙ্কা করতেন, আমেরিকা যে কোনও সময় পরমাণু বোমা ফেলতে পারে তাঁদের দেশের উপর। সেই হামলায় সব সোভিয়েত নেতার মৃত্যু ঘটতে পারে। কিন্তু এমনটা ঘটলেও যাতে প্রত্যাঘাত করা যায়, সেই লক্ষ্যেই জন্ম নেয় ‘ডেড হ্যান্ড’। এই পেরিমিটার সিস্টেমে সেন্সরের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরমাণু বোমা হামলা হলে রাশিয়ার মাটিতে যে ব্যাপক কম্পন অনুভূত হবে, বাতাসে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াবে এবং বায়ুমণ্ডলে যে বাড়তি চাপ তৈরি হবে– সেই সব রিডিং মেপে কমান্ড সেন্টারকে এই সিস্টেম জানিয়ে দেবে, রাশিয়ার মাটিতে পরমাণু হামলা হয়েছে। নিউক্লিয়ার বাঙ্কারে থাকা গুটিকয়েক মানুষ সেই বার্তা পেলেই প্রত্যাঘাতের জন্য গোটা নিউক্লিয়ার আর্সেনাল শত্রুর উপরে খালি করে দেবেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে, পরমাণু হামলায় যোগাযোগের সব নেটওয়ার্ক নষ্ট হয় গেল বা ওই বাঙ্কারেও কেউ বাঁচল না? তখন? তখন নিজে থেকেই এই সিস্টেম চালু হয়ে যাবে। অটোমেটিক প্রোটোকল ‘কমান্ড মিসাইল’-কে উড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেবে। এই কমান্ড মিসাইলে থাকে ‘কমিনিকেশন পে-লোড’। মানে পরমাণু বোমা হামলার ‘লঞ্চ কোড’। সেই লঞ্চ কোড যে সব রণতরী, যুদ্ধবিমান বা ICBM-এর পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে তাদের ‘অ্যাকটিভেট’ করে দেবে। শুরু হয়ে যাবে পুরোদমে পরমাণু হামলা।

এই ডেড হ্যান্ড সিস্টেম রুশ পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে সমৃদ্ধ করেছে। নিশ্চিত করেছে, আক্রান্ত হলেও প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনাকে। ‘মিউচুয়ালি অ্যাশিওরড ডেস্ট্রাকশন’ বা MAD কনসেপ্টকে আরও জোরদার করেছে। তবে এই সিস্টেম নিয়ে বিতর্কও কম নেই। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প বা সুনামির সময় যদি এই ‘পেরিমিটার’ সিস্টেমের সেন্সর পারমাণবিক হামলা ভেবে ‘ভুল’ করে বসে? এর উত্তরও মিলেছে রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে। তাদের দাবি, সোভিয়েত জমানায় যে ডেড হ্যান্ড সিস্টেমের জন্ম হয়েছিল, এখন কয়েক দশকে সেই সিস্টেমকে আরও অনেক আধুনিক করে তোলা হয়েছে। আর পারমাণবিক প্রত্যাঘাত তো একেবারে শেষ রাস্তা। রাশিয়া আক্রান্ত না হলে কখনই কোনও দেশের বিরুদ্ধে নিউক্লিয়ার অ্যাটাক করে না। এটাই রাশিয়ার নীতি।

এমনিতেই অবশ্য পারমাণবিক শক্তির বিচারে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে পড়ে। রাশিয়ার ‘ফুল নিউক্লিয়ার ট্রায়াড’ রয়েছে। মানে, মাটি, সমুদ্র ও আকাশ– তিন মাধ্যম থেকেই রাশিয়া পরমাণু হামলা চালাতে পারে। ২০২৪-এ সিপ্রি-র তথ্য মোতাবেক, মস্কোর কাছে সবমিলিয়ে ৫,৫৮০ টি পরমাণু বোমা রয়েছে হামলা চালানোর জন্য। যার মধ্যে ১,৭১০টি তৈরি রয়েছে যে কোনও মুহূর্তে হামলার জন্য তৈরি রয়েছে। আর্কটিক থেকে প্যাসিফিক — সর্বত্র গোপন লোকেশন জুড়ে ছড়ানো রয়েছে এই বোমাগুলি। মোবাইল ICBM লঞ্চার সবসময় ঘুরছে সেনাঘাঁটিতে। যে কোনও সময় নির্দেশ পেলেই হামলা শুরু করে দেওয়া যাবে। শুধু পরমাণু বোমাই নয়, রয়েছে অ্যাভ্যানগার্ড এইচ জি ভি, কিনঝল, জিরকনের মতো হাইপারসনিক মিসাইল। এছাড়াও ড্রোন, ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ারের জন্য আলাদা এয়ারক্রাফটও রয়েছে মস্কোর ভাঁড়ারে। তাই পুতিনের এই নৈঃশব্দ ভাবাচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা ও বিশেষজ্ঞ মহলকে।