‘সম্মান করতে জানে না ওরা’, তালিবানি ‘প্রশিক্ষণে’র অছিলায় খাঁচাবন্দি আফগান মহিলারা

মুখে উদারতার বার্তা দিলেও গত এক সপ্তাহ ধরেই বাস্তব চিত্র অন্য কিছু জানান দিচ্ছিল। বাড়ি থেকে একা বেরতে না দেওয়া, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাবালিকাদের বিয়ে বা যৌনদাসী হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে তালিবানিরা।

'সম্মান করতে জানে না ওরা', তালিবানি 'প্রশিক্ষণে'র অছিলায় খাঁচাবন্দি আফগান মহিলারা
চিরকালের জন্যই কি গৃহবন্দি থাকতে হবে আফগান মহিলাদের? ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 26, 2021 | 1:26 PM

কাবুল: মহিলাদের যোগ্য সম্মান করতে জানে না তালিবানি সেনা। তাই তাদের প্রশিক্ষণ না হওয়া অবধি আফগান মহিলারা যেন বাড়িতেই থাকেন, দেওয়া হল এমনই নির্দেশ। মঙ্গলবারই তালিবানি মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ (Jabidullah Mujahid) জানিয়েছিলেন মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা অবধি যেন কর্মরত মহিলারা বাড়িতেই থাকেন। এ দিন জানা গেল কেবল কর্মরত মহিলাই নয়, সমস্ত আফগান মহিলাকেই আপাতত গৃহবন্দি থাকতে বলা হয়েছে তালিবানের তরফে।

৯৬-র দশকে তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর জারি করা হয়েছিল শরিয়া আইন। শতাব্দী প্রাচীন ওই আইনে বলা হয়েছে, মহিলাদের শিক্ষা ও কাজ করার কোনও অধিকার নেই। তাদের বাড়িতেই থাকা উচিত। কোনও প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হতে হলে স্বামী বা রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনও পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে বের হতে হবে। সর্বদা হিজাব বা বোরখা পরা অত্যাবশক। পরপুরুষের কানে যাতে বাড়ির মহিলাদের কন্ঠস্বর না পৌঁছয়, তার জন্য সর্বদা নীচু স্বরে কথা বলা উচিত। হিল জুতো পরাও নিষিদ্ধ ছিল মহিলাদের।

তালিবানি শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে ২০০১ সালে স্বাধীনতার স্বাদ পান আফগান মহিলারা। কিন্তু ২০ বছর কাটতে না কাটতেই ফের তালিবানি চরমপন্থী শৃঙ্খলেই বাধা পড়েছেন তারা। ক্ষমতা দখলের পর তালিবান শীর্ষ নেতাদের বলা হয়েছিল, আগের তালিবানের সঙ্গে তাদের বিস্তর ফারাক। শরিয়া আইন মেনে মহিলাদের শিক্ষা ও চাকরি করার সুযোগ দেওয়া হবে। সবসময় বুরখাও পড়তে হবে না, হিজাব পড়লেই চলবে।

মুখে উদারতার বার্তা দিলেও গত এক সপ্তাহ ধরেই বাস্তব চিত্র অন্য কিছু জানান দিচ্ছিল। বাড়ি থেকে একা বেরতে না দেওয়া, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাবালিকাদের বিয়ে বা যৌনদাসী হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে তালিবানিরা। বাজে রান্না হলে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, নাবালিকাদের কফিনে ভরে ভিন দেশে পাচার করে দেওয়ার ঘটনারও সামনে এসেছে। ইতিমধ্যেই একাধিক অফিসে ফতেয়া জারি করা হয়েছে যে সরকার বদলে যাওয়ার কারণে মহিলাদের কাজে যোগ দেওয়ার আর প্রয়োজন নেই। ছাত্রীদের পরিচিতি রক্ষা করতে বালিকা বিদ্যালয়গুলির যাবতীয় নথিও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে গৃহবন্দিই হয়ে রয়েছেন আফগানিসি্তানের মহিলারা।

মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে তালিবানের মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “এটা সাময়িক সিদ্ধান্ত। মহিলা সরকারি কর্মচারীরা যাতে কাজে ফিরতে পারেন, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মহিলাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া অবধি তারা যেন বাড়িতেই থাকেন।” পরে জানা যায়, তিনি দেশের সমস্ত মহিলাকেই বাড়িতে থাকতে বলেছেন।  কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, তাদের বাহিনীর সদস্যরা জানে না মহিলাদের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। এই বিষয়ে তাদের এখনও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। যতদিন মহিলাদের জন্য সুষ্ঠ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠন না করা হচ্ছে, তরা যেন বাড়িতেইল থাকেন।

যদিও মহিলাদের আশ্বস্ত করে জাবিদুল্লাহ জানিয়েছেন, “এটা সাময়িক নির্দেশিকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ফের বাড়ি থেকরে বের হতে পারবেন মহিলারা।” আরও পড়ুন: খবর সংগ্রহ করার ‘অপরাধে’ বেধড়ক মারধর সাংবাদিককে, ভাঙল ক্যামেরাও, বেরিয়ে এল তালিবানের আসল রূপ