খবর সংগ্রহ করার ‘অপরাধে’ বেধড়ক মারধর সাংবাদিককে, ভাঙল ক্যামেরাও, বেরিয়ে এল তালিবানের আসল রূপ
এ দিন সকালেই টোলো নিউজের তরফে টুইট করে জানানো হয়, তাদের চ্যানেলের সাংবাদিক জ়াইর ইয়াদ খান ও তাঁর ক্যামেরাম্যানকে কাবুলে বেধড়ক মারধর করে তালিবানিরা।
কাবুল: ক্ষমতা দখলের সপ্তাহ পার হতেই আসল রূপ ধরতে শুরু করেছে তালিবান। তালিবানের হাতে ফের আক্রান্ত আরও এক সাংবাদিক। আফগানিস্তানের প্রথম স্বাধীন সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের এক সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানকে ব্যাপক মারধর করছে তালিবানরা, এমনটাই জানানো হয়েছে সংবাদ মাধ্যমের তরফে।
এ দিন সকালেই টোলো নিউজের তরফে টুইট করে জানানো হয়, তাদের চ্যানেলের সাংবাদিক জ়াইর ইয়াদ খান ও তাঁর ক্যামেরাম্যানকে কাবুলে বেধড়ক মারধর করে তালিবানিরা। ইয়াদ কাবুলের হাজি ইয়াকুব অঞ্চলে দরিদ্রতা, বেকারত্ব নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছিল। সেই সময়ই তাদের আটক করে তালিবানিরা। পরিচয় পত্র দেখার পরই মারধর শুরু করে তাঁরা।
لتو کوب یک خبرنگار طلوعنیوز از سوی طالبان در کابلhttps://t.co/giJkqslRPA pic.twitter.com/vtPIduFIdE
— TOLOnews (@TOLOnews) August 26, 2021
সংবাদ মাধ্যমের তরফেই জানানো হয় যে জ়াইর ইয়াদ খানকে খুন করেছে তালিবানিরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই জ়াইর নিজেই টুইট করে জানায় যে, সে জীবিত রয়েছে। টুইটে জ়াইর লেখেন, “কাবুলের নতুন শহরে রিপোর্টিং করার সময় আমায় আক্রমণ করে তালিবানিরা। ক্যামেরা, যাবতীয় যন্ত্রপাতি, এমনকি আমার মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়। তবে কিছু মানুষ আমার মৃত্যু নিয়ে ভুয়ো খবর রটিয়েছে, যা সত্যি নয়। তালিবানরা আমায় মারধর করে একটি অস্ত্র বোঝাই গাড়িতে করে ঘটনাস্থান ছেড়ে চলে যায়।”
I still don't know why they behaved like that and suddenly attacked me. The issue has been shared with Taliban leaders; however, the perpetrators have not yet been arrested, which is a serious threat to freedom of expression.
— Ziar Khan Yaad (@ziaryaad) August 26, 2021
পরবর্তী টুইটে জ়াইর জানান, তিনি এখনও বুঝতে পারছেন না কেন তাঁর সঙ্গে এই ধরনের ব্যবহার ও মারধর করল তালিবানিরা। গোটা বিষয়টি নিয়ে তালিবানি শীর্ষনেতাদের জানানো হয়েছে, তবে এখনও অবধি কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও কোনও ব্য়বস্থা নেওয়া হয়নি, যা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে বড় বিপদের সংকেত।
গত সপ্তাহের রবিবার কাবুল দখলের পরই সাংবাদিক মারধরের ঘটনা সামনে এসেছে। তালিবানি শীর্ষনেতারা সকলকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বললেও আফগান সেনা, সরকার বা মার্কিন সেনাবাহিনীকে যারা সাহায্য করেছিলেন, তাদের খোঁজে বাড়িতে হানা দেওয়ার ঘটনা সামনে আসে। এক জার্মান সাংবাদিকের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে না পেয়ে এক আত্মীয়কে খুনের ঘটনাও জানা যায়।
মহিলা সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও পোশাকে ফতেয়া জারি থেকে অফিসে ঢুকতে না দেওয়া, এই ধরনের নানা ঘটনা জানা গিয়েছে। মঙ্গলবারই তালিবানের মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ জানিয়েছেন, যতক্ষণ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা হচ্ছে, ততদিন যেন মহিলারা কাজে যোগ না দেন।
আফগানিস্তানে তালিবানি অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পরই কাবুলে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন রয়টার্সের চিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। তালিবানদের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও মার্কিন একটি ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ১৬ জুলাই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক এলাকায় আফগান সেনার সঙ্গে যখন তালিবানি সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন দানিশ সিদ্দিকি। আচমকা তালিবান সংগঠনের তরফে হামলা চালানো হলে, আফগান সেনাবাহিনী দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। দানিশ একজন আফগান কম্যান্ডার ও দুই জওয়ানের সঙ্গে ছিলেন।
সংঘর্ষ চলাকালীনই আঘাত পান দানিশ। এরপরই তাঁকে একটি স্থানীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। তালিবানদের কাছে খবর পৌঁছয় যে এক সাংবাদিক মসজিদে ঢুকেছে। এরপরই তাঁরা মসজিদে হামলা চালায়। তালিবানরা যখন সিদ্দিকিকে আটক করে, তখন সে বেঁচেই ছিল। তাঁর পরিচয় যাচাই করার পরই নৃশংসভাবে খুন করে তালিবানিরা। আরও পড়ুন: ৯/১১ হামলায় কোনও হাতই ছিল না ওসামা বিন লাদেনের, চাঞ্চল্যকর দাবি তালিবানের